শিক্ষকদের গবেষণায় অনীহা
নিয়োগ ও পদোন্নতিতে শর্ত বেঁধে দেওয়া উচিত
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে গবেষণার সুযোগ বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যে তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছেন না, তা সহজেই অনুমেয়। অনেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও দেশে এমন শিক্ষকের সংখ্যা হাতেগোনা।
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জার্নালে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে সংখ্যক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হচ্ছে, তা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পাঠদান এবং পরীক্ষা নিয়ে গ্র্যাজুয়েট সৃষ্টির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত এক তথ্য অনুসারে, দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাবলিক (সরকারি) বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সালে কোনো গবেষণা কার্যক্রম হয়নি।
বহু শিক্ষকের ব্যক্তিগত গবেষণা বা পিএইচডি ডিগ্রি নেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ওইসব প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করার মতো সিনিয়র শিক্ষকের ঘাটতি প্রকট। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণায় অনীহা প্রসঙ্গে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গবেষণার জন্য আমাদের ফান্ড আছে, বিশেষ ফান্ড আছে। তবু কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার জন্য অনীহা, আমি জানি না।’
বস্তুত এ প্রশ্ন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেকেরই। দেশে শিক্ষা বিষয়ে যে কোনো আলোচনায় এর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রায় সময়েই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোথায় অবস্থান করছে সে প্রশ্নও ওঠে। এতে বোঝা যায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মানের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। তাদের গবেষণায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার।
দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ অবস্থার জন্য কেবল বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষক দায়ী নন। দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই মূলত ‘শিক্ষণ’ (টিচিং) বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে চাকরির বাজারের উপযোগী গ্র্যাজুয়েট সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়েই বিরাজ করছে একই পরিস্থিতি। বস্তুত কয়েকটি কারণে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অপেক্ষাকৃত কম গবেষণামুখী।
প্রথমত, আমাদের দেশে গবেষণা সংস্কৃতি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। দ্বিতীয়ত, সমাজে গবেষণা ও গবেষকের যথাযথ মূল্যায়ন নেই। আর তৃতীয়ত, এ খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এ ছাড়াও শিক্ষকদের গবেষণায় কম আগ্রহের আরও অনেক কারণ রয়েছে। এটা ঠিক যে, দেশে কৃষি ও মৎস্য খাতের গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে।
বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলে আরও ইতিবাচক ফল পাওয়া পাবে, এমনটি আশা করা যায়। গবেষণায় ইতিবাচক ফল পেতে হলে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করাও জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রধান শর্ত থাকা উচিত মানসম্মত গবেষণা বা প্রকাশনা।
বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণায় হাতেখড়ি হয় তাদের নিজস্ব পিএইচডি ডিগ্রি করার মাধ্যমে। কিন্তু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি নেই। তহবিল ঘাটতিকে অনেকে গবেষণার অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসাবে দেখলেও অনেক গবেষক মনে করেন, এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা উদ্যম, উদ্যোগ আর ব্যবস্থাপনায়।
গবেষণায় মানের বিষয়টিও বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। যে গবেষণা বিশ্বসমাজে স্বীকৃতি পাবে না, তেমন গবেষণাকে কোনোভাবেই স্বীকৃতি দেওয়া ঠিক হবে না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এটাই প্রতীয়মান হয়, কড়াকড়ি আরোপ করা না হলে উল্লিখিত খাতে কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে না।
