Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি

নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করুন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি

উন্নয়ন প্রকল্পে ‘ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বৃদ্ধি’র প্রবণতা দিন দিন কেন বেড়ে চলেছে, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে’ ৩৩৭ উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ৬ মাস থেকে সাড়ে ৩ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে একইভাবে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল ২৮৪ প্রকল্পে। ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে দোষণীয় মনে না হলেও এর মধ্যে ‘শুভংকরের ফাঁকি’ রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি হাস্যকর। কেননা মেয়াদ বাড়লে অবশ্যই ব্যয় বাড়বে। যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত থাকেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও বেতন-ভাতার জন্য ব্যয় করতে হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে এ ধরনের ব্যয় চলমান থাকে। বস্তুত এ বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে অনুমোদনের জন্যই এমন চালাকির আশ্রয় নেওয়া হয়, যাতে কেউ আপত্তি না তোলে। আশ্চর্যজনক হলো, ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র এ অসৎ পন্থা সম্পর্কে সবাই সম্যক অবহিত থাকলেও বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভাবা হচ্ছে, যা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ খুবই ক্ষতিকর। কারণ যথাসময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এর সুফল থেকে দেশ ও জাতি বঞ্চিত হয়, যা মোটেই কাম্য নয়।

দুর্ভাগ্যজনক হলো, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই সময় নির্ধারণসহ অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ হন না। অবশ্য এর বাইরে নানা ধরনের কারসাজি থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেমন সম্ভব হয় না, তেমনি প্রকল্পের ব্যয়ও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। কোনো প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা না গেলে অহেতুক ব্যয় যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি বৃদ্ধি পায় জনদুর্ভোগও। আশঙ্কার বিষয় হলো, সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশে পূর্বে যেসব সমস্যা বিদ্যমান ছিল; এর অধিকাংশ এখনও বহাল রয়েছে, যা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। আমরা মনে করি, কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। প্রকল্প কতটা সুন্দর-তা দেখার আগে দেখতে হবে, বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে কিনা এবং তা নির্দিষ্ট সময়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা।

সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কেন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, তার কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ইতঃপূর্বে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশকিছু বাধা চিহ্নিত করেছিল। এগুলো হলো-সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, অর্থছাড়ে বিলম্ব, দরপত্র মূল্যায়নে দীর্ঘসূত্রতা, সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ, দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের অভাব, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করে মালামাল ক্রয়ে অসুবিধা, ঠিকাদারদের পেশাদারিত্বের অভাব, ভৌত নির্মাণ কাজে ধীরগতি, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে দ্রব্যের মান ও মূল্য নির্ধারণে অদূরদর্শিতা ইত্যাদি। এসব সমস্যা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।

নির্ধারিত সময় বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম