Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

শূন্য অগ্রগতির শতাধিক প্রকল্প

এডিপির শতভাগ বাস্তবায়নের প্রয়াস নিন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শূন্য অগ্রগতির শতাধিক প্রকল্প

সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট প্রকল্প সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৫৪। এর মধ্যে ১১৭টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আশ্চর্যজনক হলো, এসব প্রকল্পে প্রায় ৪১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হলেও এক্ষেত্রে অগ্রগতির হার শূন্য। এছাড়া ৯০টি প্রকল্পের অনুকূলে ১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও পুরো অর্থবছরে এক পয়সাও খরচ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। শূন্য অগ্রগতি প্রশ্নে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা অবশ্য করোনার প্রভাবসহ ১০টি অজুহাত দেখিয়েছেন। তবে যতই অজুহাত দেখানো হোক, পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে, অর্থও ব্যয় হয়েছে; অথচ প্রকল্পের বাস্তব কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়-এটি মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, এসব ব্যয় নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলা উচিত।

বস্তুত এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবছর একই চিত্র প্রত্যক্ষ করছি আমরা। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে এবং এর ফলে এডিপির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে। সাধারণত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও সরকারের সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় করে এডিপি অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রতিবছরই মাত্রাতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি খারাপ প্রবণতা। এ প্রবণতা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা উচিত। একই সঙ্গে কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করার পাশাপাশি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার বিষয়টিও নিশ্চিত করা উচিত। প্রকল্প কতটা সুন্দর, তা দেখার আগে দেখতে হবে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে কি না এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই সময় নির্ধারণ ও অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ হন না। অবশ্য এর বাইরে নানা ধরনের কারসাজির অভিযোগও রয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেমন সম্ভব হয় না, তেমনই প্রকল্পের ব্যয়ও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। কোনো প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হলে বাড়ে জনদুর্ভোগও। আশঙ্কার বিষয় হলো, সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশে আগে যেসব সমস্যা বিদ্যমান ছিল, এর অধিকাংশ এখনো বহাল রয়েছে, যা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। ইতঃপূর্বে আইএমইডি প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশকিছু বাধা চিহ্নিত করেছিল। এগুলো হলো-সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, অর্থছাড়ে বিলম্ব, দরপত্র মূল্যায়নে দীর্ঘসূত্রতা, সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ, দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের অভাব, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করে মালামাল ক্রয়ে অসুবিধা, ঠিকাদারদের পেশাদারিত্বের অভাব, ভৌত নির্মাণকাজে ধীরগতি, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে দ্রব্যের মান ও মূল্য নির্ধারণে অদূরদর্শিতা প্রভৃতি। এসব সমস্যা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।

প্রকল্প

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম