ভোজ্যতেল সংকটের কারণ উদ্ঘাটন
দায়ীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে ব্যবস্থা
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভোজ্যতেলের বাজারে কেন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণগুলো জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মিল মালিকদের কারসাজি রয়েছে। এর আগে ভোজ্যতেল রিফাইনারদের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানতে চাওয়া হয় পাইকারদের কাছে কী পরিমাণ তেলের ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বা এসও (সাপ্লাই অর্ডার) ইস্যু করা হয়েছে এবং তেল সরবরাহের মজুত কত ইত্যাদি। এ ছাড়া গত তিন মাসে আমদানির পরিমাণ কত, কী পরিমাণ তেল পরিশোধন করা হয়েছে, কাস্টমস পেপারসহ এসব তথ্যও চাওয়া হয়েছিল। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে, কোম্পানিগুলো ডিও ইস্যুর নির্দিষ্ট সময়ে তেল সরবরাহ করেনি। মূল্য কারসাজির সঙ্গে জড়িত একাধিক পাইকারের সন্ধানও পাওয়া গেছে। ডিও নিয়ে তারা নির্দিষ্ট সময়ে ভোজ্যতেল গ্রহণ করেনি, বেশি মুনাফার আশায় তেল ধরে রেখেছে। এতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সরবরাহ চেইনে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান যুগান্তরকে বলেছেন, গলদটা আসলে গোড়ায় এবং এই গলদ থেকে প্রতিটি স্তরে অনিয়ম করা হয়েছে।
ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতার পেছনে একেকটি রিফাইনারি একেকরকমভাবে দায়ী। যেমন, সংকটের গুজবে বাজারে যখন ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে, এক লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না, ঠিক তখন মেশিনারিজ মেরামতের নামে একটি রিফাইনারি তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। অথচ ওই সময়ে উৎপাদন বন্ধ করার কথা নয়। সংকট মুহূর্তে রিফাইনারিটি কেন উৎপাদন বন্ধ রেখেছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। ওদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার রিফাইনারদের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে ভোজ্যতেলের মূল্য বেঁধে দিলেও একাধিক রিফাইনারি তা মানেনি। তারা বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে বোতলের গায়ে বেশি মূল্য লিখে তা বাজারজাত করেছে। এভাবে সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্য কার্যক্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মিল মালিকরা যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা গেছে দেশে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত মজুত আছে। বস্তুত চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি তেলের মজুত রয়েছে। অর্থাৎ দেশে ভোজ্যতেলের সংকট সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। বাজারে অস্থিরতার মূল কারণ আসলে কারসাজি, এ কারসাজি করা হয়েছে মিলার ও পাইকার উভয় দিক থেকেই। একটি এসও ইস্যুর পর তেল ডেলিভারি নেওয়ার নির্দিষ্ট দিন-তারিখ সেখানে উল্লেখ থাকে। কিন্তু দেখা গেছে, এসও নিয়ে কোনো কোনো পাইকার তা বেশি দামে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এভাবে একাধিকবার এসও হাতবদল হওয়ায় মূল্য বেড়েছে। আবার সরবরাহ চেইনে মিল মালিকরা ডেলিভারি দিয়েছে বিলম্বে। সব মিলে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
ভোজ্যতেল নিয়ে এসব কারসাজি মেনে নেওয়া যায় না। কারণ যেহেতু উদ্ঘাটিত হয়েছে, সেহেতু ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ মজুত, বাজার কারসাজি ও সিন্ডিকেটের তৎপরতা-এসবের কোনো কিছুর সঙ্গেই আপস করা চলে না। সামনে রমজান মাস। এ মাস শুরু হওয়ার আগেই ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আর তা করার জন্য সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে কঠোর অবস্থান।
