Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি

বাস্তবায়নে শতভাগ আন্তরিক হতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি

গতকাল থেকে শুরু হওয়া টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি দরিদ্র মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা বলাই বাহুল্য। এ কার্ডের আওতায় স্থানীয় ডিলারদের মাধ্যমে দেশের এক কোটি দরিদ্র পরিবার স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, যেমন ২ লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি করে মসুর ডাল পাচ্ছে। এছাড়া ৩ এপ্রিল রমজান শুরুর দিন থেকে দ্বিতীয় দফায় সাশ্রয়ী মূল্যে উল্লিখিত তিন পণ্যের সঙ্গে দুই কেজি করে ছোলাও দেওয়া হবে। জানা গেছে, করোনাকালে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, সেখান থেকে ৩০ লাখ পরিবারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ৫৭ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে এ ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১২ লাখ ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৯০ হাজার পরিবারকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে একই সুবিধা দেওয়া হবে। বস্তুত সাধারণ মানুষদের মধ্যে যারা সরকারের ২৩ ধরনের ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন না, কেবল তাদেরই টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের সুবিধাভোগী করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উপকারভোগী নির্ধারণে স্থানীয় জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের সূচক ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচিকে অনেকে মানবিক উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন, যা যথার্থ বলেই মনে হয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় তা সমন্বয় করতে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে পণ্য ও সেবা খাতের ব্যয় বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতির হারে উল্লম্ফন ঘটিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে জনজীবনে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে চাল ৭৯ শতাংশ, খোলা আটা ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, খোলা ময়দা ৩৭ দশমিক ৬৮, সয়াবিন ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ, পাম অয়েল ৩৮ শতাংশ এবং মসুর ডাল ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিম্নআয়ের মানুষকে চরম দুরবস্থায় নিপতিত করেছে। এমনিতেই করোনার কশাঘাতে চাকরিহারা, বেকার ও আয়-রোজগার কমে যাওয়া জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন খরচের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে অনেক পরিবার, তা বলাই বাহুল্য। এ অবস্থায় ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচির আওতায় এক কোটি পরিবার অর্থাৎ ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হলে তা তাদের জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এক্ষেত্রে দেশের বাইরের উৎস থেকে পণ্য এনে তা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এতে বাজারে মূল্যের ওপর প্রভাব পড়ায় অন্যরাও উপকৃত হবেন, যা এই মুহূর্তে জরুরি।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার সাধারণত শহর ও গ্রামের দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে থাকে। ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচিও সরকারের এমনই একটি উদ্যোগ। স্বল্পকালীন হলেও উদ্যোগটি যে মহৎ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে অনিয়মের যেসব অভিযোগ রয়েছে, একই অভিযোগ যেন এ কর্মসূচির ক্ষেত্রে উত্থাপিত না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসন আন্তরিক থাকলে তা কঠিন কিছু নয়। তবে এজন্য প্রশাসন ও রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ, সুনীতি ও সুশাসন।

ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম