Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপ

নির্বাচনের প্রতি আস্থা ফেরাতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপ

মঙ্গলবার দেশের ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসেছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগে গত ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল ইসি। মঙ্গলবারের সংলাপে বিশিষ্টজনরা আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে, সে ব্যাপারে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ রেখেছেন।

তারা বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। তাদের মতে, নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে আগামী সংসদ নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফেরানো, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং মোটা দাগে ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন বক্তারা।

এ ছাড়া ইসিকে নির্বাচনে ধর্মকে ব্যবহার করতে না দেওয়া, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিরাপত্তা বিধান এবং প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস রাখার কথা বলেন তারা। তারা আরও বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইসিকে উদ্যোগী হতে হবে। একইসঙ্গে ইসিকে কাজ দিয়েই প্রমাণ করতে হবে তারা নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ করবেন।

বিশিষ্টজনদের আরও অভিমত, নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। তাদের এসব বক্তব্যের বিপরীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তার ও ইসির অন্যান্য সদস্যের হারানোর কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে প্রদত্ত পরামর্শগুলোর আলোকে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে ইসি সচেষ্ট থাকবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আগামী সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠান করা বর্তমান ইসির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান ইসি এমন এক সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, যখন নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনমনে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। বিশিষ্টজনদের মতো আমরাও মনে করি, নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই হবে ইসির প্রথম কাজ। আর তা করতে হলে ইসিকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাদের কর্মপদ্ধতি ও কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হবে।

তবে এটাও ঠিক, একা ইসির পক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। নির্বাচনের সব স্টেকহোল্ডার যদি স্ব স্ব দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এসব স্টেকহোল্ডার হলো-ইসি, নির্বাচনকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সর্বোপরি নির্বাচকমণ্ডলী তথা ভোটার শ্রেণি।

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি এই মর্মে ঐকমত্য হয় যে, তারা আন্তরিকভাবে ইসিকে সহযোগিতা করবে, তাহলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কঠিন কিছু হবে না। প্রকৃতপক্ষে, জাতি চায় নির্বাচন তথা গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশে একটি ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে উঠুক। জনগণের রায়ই বড় কথা-এমন ধারণায় যদি রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে, তাহলে আমরা গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ করতে পারব, অন্যথায় নয়।

আমরা আরও মনে করি, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে বিশেষত সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। সরকার যদি ইসিকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে, তাহলেই সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। মঙ্গলবারের সংলাপে বিশিষ্টজনরা যেসব কথা বলেছেন, ইসি তো বটেই, সরকারও সেগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বিশিষ্টজন সঙ্গে ইসি সংলাপ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম