Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিনিয়োগে স্থবিরতা

টেকসই উন্নয়ন ফান্ড গঠন জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিনিয়োগে স্থবিরতা

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট ২০২২’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবিকার সংকট। উদ্বেগজনক হলো, করোনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকদিন ধরেই বিনিয়োগে মন্দাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপরন্তু আগের ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন সংকুচিত হয়েছে; তেমনি নতুন করে কোনো কিছুর প্রসারও খুব একটা ঘটেনি। এতে কাজের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টির সুযোগ হ্রাসের পাশাপাশি অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া অনেকের বেতন-ভাতাও কমেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর গড়ে ২৬ থেকে ২৭ লাখ মানুষ নতুন করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এ হিসাবে করোনাকালীন দুই বছরে অন্তত ৫২ থেকে ৫৪ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও তাদের বেশিরভাগেরই কর্মসংস্থান হয়নি। আইএলওর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি, করোনাজনিত ক্ষতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব না হলে কয়েক বছরে যা দ্বিগুণ হয়ে ৭ কোটিতে দাঁড়াবে। এটি আমাদের জন্য একটি অশনিসংকেত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সংকট উত্তরণের অন্যতম উপায় হচ্ছে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করা। বস্তুত দেশের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে বিনিয়োগে মন্দা দেখা দেওয়ায় নতুন শিল্প স্থাপনের গতি মন্থর হয়েছে; একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগও কমে গেছে। ইতঃপূর্বে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই আশার বাণী শুনিয়েছিলেন, স্থবিরতা দ্রুত কেটে গিয়ে দিগন্তে আশার আলো দেখা যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশে সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও নতুন কর্মসংস্থানের চিত্র আমাদের জন্য যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি।

বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা করোনার শুরু থেকেই বিশ্ব অর্থনীতি ও আর্থিক কাঠামোর করুণ পরিণতির ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আসছেন। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছিলেন, করোনার অভিঘাতে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা যে কোনো আর্থিক মন্দার চেয়ে খারাপ হবে। করোনার প্রকোপ বিশ্ব অর্থনীতিকে যেমন সংকটে নিমজ্জিত করেছে, একইভাবে দেশের অর্থনীতিও নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। আশার কথা, করোনার ধাক্কা সামলানোর জন্য সরকার ইতোমধ্যে অনেক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। প্রণোদনার আওতায় প্রদেয় ঋণ সহায়তার সুষ্ঠু ব্যবহারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সমস্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেগুলো মোকাবিলার উদ্যোগ গ্রহণ ও তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। ভুলে গেলে চলবে না, দেশে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগ ছাড়া অর্থবছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। কাজেই দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে হলে আইনের শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ ব্যবসা সম্পর্কিত নীতিমালা আরও সহজ করা প্রয়োজন। উদ্যোক্তারা ইতঃপূর্বে বেসরকারি খাতের বিকাশ ও শিল্পায়নের স্বার্থে প্রয়োজনে স্বল্প সুদের ‘টেকসই উন্নয়ন ফান্ড’ গঠনের পরামর্শ দিয়ে শিল্প খাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিতকরণ, করপোরেট ট্যাক্স হ্রাস এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন। বিনিয়োগে গতি আনতে এগুলো দ্রুত আমলে নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

বিনিয়োগ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম