Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন করে আরও আবেদনের তাৎপর্য আছে কি?

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন করে আরও আবেদনের তাৎপর্য আছে কি?

দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-এই বিপুলসংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও দেশের উচ্চশিক্ষা কি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে?

যুগান্তরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নানা সংকটে রয়েছে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সিকিভাগ শিক্ষার্থীও পাচ্ছে না-এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। ওদিকে অনুমোদন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারছে না অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠান। মামলাজটে বন্ধের পথে আরও চারটি।

এছাড়া আর্থিক দৈন্যে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়েছে।

কয়েকটি দিচ্ছে আংশিক বেতন। করোনাকালে তহবিল সংকটে পড়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ভবন ছেড়ে দিয়ে কোনোরকমে টিকে আছে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তা পদে নানা কারণে নিয়োগ দিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান।

এই যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চিত্র, তখন আরও ১১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন জমা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। চলছে অনুমোদন পেতে দৌড়ঝাঁপ। জানা যায়, আবেদন জমা দেওয়া ব্যক্তি ও গ্রুপের মধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি অনুমোদন পাওয়ার আশায় জোর তদবিরে ব্যস্ত রয়েছেন।

প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই যেখানে ভালোভাবে চলছে না, সেখানে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা কতটা যুক্তিযুক্ত? দ্বিতীয় প্রশ্ন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেই কি শিক্ষার মান বাড়বে? এই যে ব্যাঙের ছাড়ার মতো যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে, সেগুলো কি প্রত্যাশিত শিক্ষার মান বাজায় রাখতে পারছে?

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান ভালো বলেছেন। তিনি বলেছেন, এ মুহূর্তে অন্যতম বড় সংকট হলো-আমরা তথাকথিত শিক্ষিত বেকার তৈরি করে চলেছি। তা না হলে দেশে শুধু ভারতীয়ই পাঁচ লাখ নাগরিক চাকরি করতেন না। আমাদের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার সনদ আছে; কিন্তু তারা চাকরি পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেছেন, পাড়া-মহল্লায় এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দরকার নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো গুরুত্ব নেই। তার চেয়ে বরং কারও কাছে যদি টাকা থাকে এবং দেশের শিক্ষার জন্য কিছু করতে চান তিনি, তাহলে তার জন্য ভালো বিনিয়োগের স্থান হচ্ছে ভালো স্কুল অথবা কারিগরি প্রতিষ্ঠান।

আমরা অধ্যাপক আবদুল মান্নানের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। দেশে চলমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই যেহেতু শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান বজায় রাখতে পারছে না, তাই নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের বিষয়টি গভীরভাবে ভাববার অবকাশ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমাদের দুটি প্রস্তাব রয়েছে। প্রথমত, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মমাফিক চলছে না এবং শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে, সেগুলোর অনুমোদন বাতিল করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, নতুন করে যে ১১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন জমা পড়েছে, ইউজিসির উচিত হবে সেগুলোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা। প্রস্তাবিত যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক তথ্য সন্তোষজনক হবে, শুধু সেগুলোর ব্যাপারেই যেন ইতিবাচক পরিদর্শন-প্রতিবেদন দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের ক্ষেত্রে সুবিবেচনার পরিচয় দেবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম