Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অর্থনীতিতে নানা চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত, মোকাবিলায় সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থনীতিতে নানা চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত, মোকাবিলায় সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে

দেশ-বিদেশের সার্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা সামনের দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ডলারে বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের চাপ আরও বাড়বে। এর প্রভাবে বাড়বে মূল্যস্ফীতির চাপ। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সরকারের খরচ বেড়ে যাবে। এটি সংকটকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে।

রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির উচ্চগতি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা ডলারের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামীতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি আরও কমতে পারে। কারণ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অনেক দেশ এখন সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে।

বস্তুত বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়-দিন যত যাচ্ছে, সংকট তত ঘনীভূত হচ্ছে। দেশেও পড়ছে এর প্রভাব। এ সংকট সাধারণ মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে দুর্ভোগ। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে একদিকে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা।

ওদিকে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা দূরে থাক, পুরোনোগুলোই টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মোটা দাগে দেশের এ সংকটের তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমটি হলো, দীর্ঘদিন থেকে রাষ্ট্রীয় খাতগুলোর সংস্কার হয়নি। দ্বিতীয় কারণ, করোনার অভিঘাতে অর্থনীতির চাকা ঠিকমতো ঘুরতে পারেনি, অধিকন্তু জনজীবন হয়ে পড়েছিল বিপর্যস্ত।

তৃতীয়ত, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলসহ দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে কয়েকটি বিচ্যুতির কথাও বলছেন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। এগুলো হলো-ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না হওয়া, কর আহরণে দুর্বলতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বৈষম্য।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামীতে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোর চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো-রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের প্রবাহ হ্রাস ও মূল্যবৃদ্ধি এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদ বাড়ানোর আগ্রাসী নীতি।

মোট কথা, আগামীতে দেশের অর্থনীতিকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-স্থানীয় চাহিদার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা; প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে এবং মূল্যস্ফীতি রোধ করতে রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে অধিকতর সমন্বয় সাধন করা।

একইসঙ্গে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো চলমান রাখার সুপারিশও করা হয়েছে। এসবের পাশাপাশি আমরা মনে করি, দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় সরকারকে অবশ্যই সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বা এলসির মাধ্যমে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমাতে হবে এবং তা সহজ করতে হবে।

বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষিতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেশের ভেতরে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এসব পদক্ষেপ যথাযথভাবে নেওয়া গেলে তা সংকট উত্তরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

মোকাবিলা সতর্ক পদক্ষেপ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম