অবৈধভাবে পণ্য আমদানি
কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
অবৈধভাবে পণ্য আমদানির একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো শুল্ক গোয়েন্দার গোপনীয় প্রতিবেদনে। আরও উদ্বেগের বিষয়, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে এ অবৈধ পণ্য আমদানির আড়ালে কার্যত অর্থ পাচার হচ্ছে।
জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র চলতি বছর সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আমদানির অনুমতিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ শুল্কের মদ-সিগারেট আমদানি করেছে। এক্ষেত্রে ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করার কারণ হলো-সাধারণ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানি করতে হয় ব্যাংকে এলসি বা ব্যাক-টু-ব্যাক খোলার মাধ্যমে বন্ডের আওতায়;
কিন্তু ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান এলসি ছাড়াই শুধু সেলস কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে পণ্য আমদানির সুবিধা পেয়ে থাকে। তাছাড়া ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই কনটেইনার কাস্টমস থেকে সরাসরি ট্রাক-লরিতে ডেলিভারির জন্য উঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সুবিধার কারণেই চোরাকারবারি চক্রের নজর ইপিজেডের দিকে।
এ কাজে তারা মূলত কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের সঙ্গে বেপজার ওয়েবসাইটের আন্তঃসংযোগ না থাকার সুযোগ নিচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এর ফলে দেশ শুধু রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ না যাওয়ায় আমদানির পুরো অর্থটাই পাচার হয়ে যাচ্ছে। কাজেই এ অপকর্ম প্রতিরোধ করতে হবে কঠোরভাবে।
বস্তুত দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানতে পেরেছে, বর্তমানে বিদেশে অর্থ পাচারে বড় ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে এ অর্থ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো টাকার অঙ্ক খুব বেশি না হলেও মোট হিসাবে তা অনেক বড়।
বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে এই চ্যানেলে। জানা যায়, একে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক সিন্ডিকেট। আর তা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের বাইরে থাকা অবৈধ কারবারিরা। তারা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করে তা অন্যত্র ব্যবহার করছে। আর দেশে তাদের চক্রের সদস্যরা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা টাকা। এবার অর্থ পাচারের আরও একটি সূত্রের সন্ধান মিলল।
অর্থ পাচার যেভাবেই হোক না কেন, এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এরা দেশের অর্থনীতির সমূহ ক্ষতি করছে। অর্থ পাচারের কারণে দেশে ডলার সংকট তীব্র হয়েছে এবং কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কাজেই অর্থ পাচারের মূল হোতাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শুধু তাদেরই নয়, যারা তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে নানাভাবে সহায়তা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে ব্যবস্থা। কাস্টমসের তদন্তে উঠে এসেছে, ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে পণ্য আমদানিকারকদের প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছে কাস্টমসেরই কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে তাদের কয়েকজনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে পারে অবৈধ পণ্য আমদানিকারকদের মূল হোতাদের নাম। এই অবৈধ পন্থায় আমদানি বন্ধ করা জরুরি এ কারণে যে, এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। কাজেই এ ব্যাপারে এখনই দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
অবৈধভাবে পণ্য আমদানি
কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়
২৫ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অবৈধভাবে পণ্য আমদানির একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো শুল্ক গোয়েন্দার গোপনীয় প্রতিবেদনে। আরও উদ্বেগের বিষয়, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে এ অবৈধ পণ্য আমদানির আড়ালে কার্যত অর্থ পাচার হচ্ছে।
জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র চলতি বছর সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আমদানির অনুমতিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ শুল্কের মদ-সিগারেট আমদানি করেছে। এক্ষেত্রে ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করার কারণ হলো-সাধারণ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানি করতে হয় ব্যাংকে এলসি বা ব্যাক-টু-ব্যাক খোলার মাধ্যমে বন্ডের আওতায়;
কিন্তু ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান এলসি ছাড়াই শুধু সেলস কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে পণ্য আমদানির সুবিধা পেয়ে থাকে। তাছাড়া ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই কনটেইনার কাস্টমস থেকে সরাসরি ট্রাক-লরিতে ডেলিভারির জন্য উঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সুবিধার কারণেই চোরাকারবারি চক্রের নজর ইপিজেডের দিকে।
এ কাজে তারা মূলত কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের সঙ্গে বেপজার ওয়েবসাইটের আন্তঃসংযোগ না থাকার সুযোগ নিচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এর ফলে দেশ শুধু রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ না যাওয়ায় আমদানির পুরো অর্থটাই পাচার হয়ে যাচ্ছে। কাজেই এ অপকর্ম প্রতিরোধ করতে হবে কঠোরভাবে।
বস্তুত দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানতে পেরেছে, বর্তমানে বিদেশে অর্থ পাচারে বড় ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে এ অর্থ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো টাকার অঙ্ক খুব বেশি না হলেও মোট হিসাবে তা অনেক বড়।
বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে এই চ্যানেলে। জানা যায়, একে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক সিন্ডিকেট। আর তা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের বাইরে থাকা অবৈধ কারবারিরা। তারা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করে তা অন্যত্র ব্যবহার করছে। আর দেশে তাদের চক্রের সদস্যরা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা টাকা। এবার অর্থ পাচারের আরও একটি সূত্রের সন্ধান মিলল।
অর্থ পাচার যেভাবেই হোক না কেন, এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এরা দেশের অর্থনীতির সমূহ ক্ষতি করছে। অর্থ পাচারের কারণে দেশে ডলার সংকট তীব্র হয়েছে এবং কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কাজেই অর্থ পাচারের মূল হোতাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শুধু তাদেরই নয়, যারা তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে নানাভাবে সহায়তা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে ব্যবস্থা। কাস্টমসের তদন্তে উঠে এসেছে, ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে পণ্য আমদানিকারকদের প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছে কাস্টমসেরই কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে তাদের কয়েকজনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে পারে অবৈধ পণ্য আমদানিকারকদের মূল হোতাদের নাম। এই অবৈধ পন্থায় আমদানি বন্ধ করা জরুরি এ কারণে যে, এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। কাজেই এ ব্যাপারে এখনই দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023