Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

জীবনবাজি রেখে স্কুলে যাওয়া

দুর্গম এলাকায়ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জীবনবাজি রেখে স্কুলে যাওয়া

সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে; যদিও শিক্ষার মান নিয়ে শিক্ষাবিদরা নানা প্রশ্ন তুলছেন।

আশা করা যায়, সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে শিক্ষার মানও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হবে। এ প্রসঙ্গে দেশের দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকম সমস্যার কথা বারবার আলোচনায় আসে।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দিয়ারচর ও উত্তর চরমোন্তাজ (দক্ষিণ অংশ) গ্রাম দুটির চর থেকে শিশু শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন কতটা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে তা গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। জানা যায়, শিক্ষার্থীরা পাতিলে বইখাতা, কলম, স্কুলড্রেস-এসব রেখে সাঁতার কেটে খাল পার হয়।

এরপর তীরে উঠে রোদে দেয় ভেজা জামা-কাপড়। তারপর পাতিল থেকে নিয়ে পরে নেয় স্কুলড্রেস। এরপর বইখাতা নিয়ে ছোটে স্কুলে। তীব্র শীত কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়ও তারা এভাবেই স্কুলে আসা-যাওয়া করে।

একটি সেতুর অভাবে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করছে। এখানে নেই সেতু, নেই নৌকায় পারাপারের তেমন কোনো ব্যবস্থা। কখনো নৌকা পাওয়া গেলেও আর্থিক অনটনের কারণে নিয়মিত পার হতে পারে না তারা।

তাদের অভিভাবকরা দরিদ্র। বিকল্প হাঁটাপথে স্কুলে যেতে ৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, খাল সাঁতরে স্কুলে যেতে তাদের খুব ভয় হয়। তাদের দাবি-খালের উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হোক।

স্থানীয়রা জানান, দুই গ্রামে স্কুল না থাকায় শিশুরা পার্শ্ববর্তী মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। জানা যায়, স্থানীয়দের উদ্যোগে আলোচিত স্থানে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হলেও নোনা জলে সাঁকো বেশিদিন টেকে না।

সাঁকো না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অনেক অভিভাবক ঝুঁকি নিয়ে ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠান না। এসব শিক্ষার্থী যাতে ঝুঁকিমুক্ত পথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

জানা গেছে, এ উপজেলার আরও কয়েকটি চরের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ, সেসব চরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এসব চরের বিভিন্ন বয়সি শিক্ষাগ্রহণে ইচ্ছুকদের একটি ক্ষুদ্র অংশ দূরদূরান্তের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার সুযোগ নিয়ে থাকে। চরের শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের দুর্গম এলাকায় শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিমুক্ত পথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া নিশ্চিত করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে, এটাই স্বাভাবিক। এসব কাজ মানসম্মতভাবে সম্পন্ন করার আগে শিক্ষার্থীরা যাতে ঝুঁকিহীনভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কম, এ বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসে। এসব এলাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকট দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকট দূর করলেই হবে না, সেসব অঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্গম অঞ্চলের এসব সমস্যা দূর করা না হলে বাল্যবিবাহ, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, শিশুশ্রম-এসব সমস্যা আরও বাড়বে। শিক্ষাক্ষেত্রে শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদের মধ্যকার বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। দুর্গম অঞ্চলসহ দেশের গ্রামীণ জনপদে শিক্ষার্জনে বিদ্যমান সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

জীবনবাজি রেখে .স্কুলে যাওয়া.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম