Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বেহাল শিক্ষাব্যবস্থা

সমৃদ্ধ জাতি গঠনে টেকসই পদ্ধতি কাম্য

Icon

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেহাল শিক্ষাব্যবস্থা

ফাইল ছবি

বর্তমানে বড় অস্থির সময় পার করছে আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা। পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি, কারিকুলাম ও পাঠ্যবইয়ে ঘন ঘন পরিবর্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নাভিশ্বাসের কারণ হয়ে উঠেছে।

জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় নম্বর ও বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে; কিন্তু পরিবর্তিত বিষয়ের নম্বর বণ্টন প্রকাশ করা হয়নি। এ ছাড়া প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) এমসিকিউ থাকবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় মাত্র পাঁচ মাস পর অনুষ্ঠেয় জেএসসি-জেডিসির পরীক্ষার ২৫ লাখ এবং পিইসি পরীক্ষার ৩৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ গঠনে পড়ালেখায় মনোযোগী হবে নাকি কত নম্বরের ও কী কী বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে, তা নিয়ে দোটানায় থাকবে- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

উদ্বেগের বিষয়, মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে একবার কারিকুলাম ও ছয়বার পাঠ্যবই পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। এ থেকেই প্রমাণ হয়, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে এবং এটি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো করে গড়ে তোলা যায়নি। ঘন ঘন পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের পাশাপাশি গত দেড় দশকে তিনবার পাল্টানো হয়েছে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি।

এভাবে কিছুদিন পরপর পরিবর্তনের কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রমের বাইরে ইংরেজি মাধ্যম ও অন্যান্য ধারায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিতে উৎসাহী হবেন, যা সহজেই অনুমেয়। এতে করে দ্বিধাবিভক্ত এ জাতির জন্য একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা স্বপ্নই থেকে যাবে। শিক্ষাবিদদের সঙ্গে একমত হয়ে আমরা বলতে চাই, যে কোনো উপায়ে শিক্ষাব্যবস্থায় টেকসই পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হবে।

দেড় দশকে গ্রেডিং পদ্ধতি, এসবিএ বা স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রবর্তন করা হয়েছে পরীক্ষার খাতা দেখার বেলায়। ২০০৭ সালে প্রবর্তিত এসবিএ পদ্ধতি সমালোচনার কারণে ওই বছরই বাতিল করা হলেও ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে কেন সেটা আবার ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

১৯৯২ সালে এসএসসি পর্যায়ে প্রবর্তিত এমসিকিউ পদ্ধতি ধারাবাহিক প্রশ্ন ফাঁসের কারণে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে পিইসিতে এমসিকিউ তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আগামী এসএসসি পরীক্ষায়ও তা তুলে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, প্রশ্ন ফাঁস রোধ এবং শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকমুখী করার জন্য এমসিকিউ গাইড মুখস্থের পরিবর্তে এ পদ্ধতি বাতিল করে দেয়া যেতে পারে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় অঘটন হল, সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনের ১২ বছর পরও বিষয়টি সব শিক্ষক আয়ত্ত করতে পারেননি। মাত্র ৫৬ শতাংশ শিক্ষক বিষয়টি আয়ত্ত করতে পেরেছেন। যেখানে শিক্ষকরাই বিষয়টি ধরতে পারছেন না, সেখানে ছাত্রছাত্রীরা বুঝবে কীভাবে? শিক্ষা ক্ষেত্রে তুঘলকি পরিস্থিতির কারণে মানসম্মত মানবসম্পদ ও চাকরির বাজারোপযোগী কর্মী পাচ্ছে না রাষ্ট্র এবং বিদেশিরা আমাদের কারিগরি শ্রমবাজার দখল করে নিচ্ছে বলে শিক্ষাবিদদের অভিযোগ।

এ অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে শিক্ষা খাতের দুর্নীতি দূর করে সবকিছু ঢেলে সাজানো গেলেই বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা ও মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

শিক্ষাব্যবস্থা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম