হাইকোর্টের উষ্মা
অর্থ পাচার রোধে কঠোরতার বিকল্প নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এবার অর্থ পাচারের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার ‘জি বি হোসেন বনাম দুদক এবং অন্যান্য’ মামলার শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চের মন্তব্যে দ্বৈত নাগরিকদের অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে আসে।
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘ছলে-বলে ও কৌশলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে কি টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে! আমরা কি এটা অ্যালাও (অনুমোদন) করতে পারি? এ দেশ হরিলুটের জায়গা হতে পারে না।’ হাইকোর্টের এ উষ্মা প্রকাশ যথার্থ। দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়, নানা কৌশলে এবং দিনদিন তা বাড়ছে। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগেও কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন অনেকে। এসব প্রতিরোধের উপায় কী? বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন কেন অর্থ পাচার রোধ করতে পারছে না, জনমনে এ প্রশ্ন রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
শুধু আইন প্রণয়ন নয়, দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে ইতঃপূর্বে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু এর কোনোটিই কার্যকর হয়নি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী পাচার করা সব অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে, তার দ্বিগুণ জরিমানা করতে হবে। এছাড়া ৪ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে আইনে। অর্থ পাচার রোধে আইনটির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে দেশ থেকে অর্থ পাচারের ছিদ্রগুলো শনাক্ত করতে হবে। কীভাবে, কোন কোন চ্যানেলে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেই ফাঁকগুলো বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাচারের অর্থ কোথায় যায়, তা চিহ্নিত করতে হবে এবং সেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে, যাতে সেই টাকা ফিরিয়ে আনা যায়।
অর্থ পাচার একটি বড় অপরাধ। এটি এখন আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এর মাধ্যমে দেশের ব্যাংক খাতকে পঙ্গু করে ফেলা হচ্ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা।
গড়ে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা তিনটি পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয়ের সমান। কাজেই অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে যে কোনো উপায়ে। মূলত অবৈধভাবে আয়ের টাকাই দেশ থেকে পাচার করা হয়। সেদিক থেকে বলা যায়, অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থ পাচারের সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে। কাজেই দুর্নীতি রোধেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়নেও দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
