সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনে তাণ্ডব
এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত
সম্পাদকীয়
১৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে তথা আদালত চত্বরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা এককথায় নজিরবিহীন। দিনভর হট্টগোল, হইচই, ভাঙচুর, ধাক্কাধাক্কি এবং বিএনপিপন্থিদের বের করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে যেভাবে প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, তাকে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যায় না।
নির্বাচন হয়েছে একতরফা। জানা যায়, নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এ হট্টগোল শুরু হয়। হট্টগোলের কারণে ভোটগ্রহণ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোট দেননি বলে জানিয়েছেন।
এ হট্টগোলের মাঝে পুলিশের হামলায় আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের বেধড়ক প্রহার করেছে পুলিশ। জানা যায়, বৃহস্পতিবারও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। বার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ বিচারালয় চত্বরে এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ব্যালট ছিনতাই ও হট্টগোলের অভিযোগে বুধবার রাতে ১১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠন। এ সংগঠনের সদস্যরা দলমতনির্বিশেষে সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, এটাই সবাই আশা করে। বস্তুত সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচন অতীতে সব সময় সুশৃঙ্খলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে গত দুই বছর ধরে নির্বাচনের আয়োজন বা পরিচালনা নিয়ে দেখা যাচ্ছে অনৈক্য। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের কাছে মানুষ সব সময় দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। তারাই যদি নিজেদের মধ্যে মারামারি-হাতাহাতিতে লিপ্ত হন, তাহলে তাদের পেশাগত মর্যাদা সমুন্নত থাকবে কীভাবে? তারা ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী হতে পারেন, ভিন্ন ভিন্ন দলের সমর্থক হতে পারেন; কিন্তু পেশাগতভাবে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত। একই সঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা।
বুধবারের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর পুলিশ যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাদের ওপর কেবল লাঠিচার্জই করেনি, বুট দিয়ে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছে; কিল-ঘুসি মেরেছে।
এ হামলায় আহত একজন সাংবাদিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে বলেও জানা গেছে। আশার কথা, নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করব, হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করে অবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনে তাণ্ডব
এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত
সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে তথা আদালত চত্বরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা এককথায় নজিরবিহীন। দিনভর হট্টগোল, হইচই, ভাঙচুর, ধাক্কাধাক্কি এবং বিএনপিপন্থিদের বের করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে যেভাবে প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, তাকে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যায় না।
নির্বাচন হয়েছে একতরফা। জানা যায়, নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এ হট্টগোল শুরু হয়। হট্টগোলের কারণে ভোটগ্রহণ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোট দেননি বলে জানিয়েছেন।
এ হট্টগোলের মাঝে পুলিশের হামলায় আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের বেধড়ক প্রহার করেছে পুলিশ। জানা যায়, বৃহস্পতিবারও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। বার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ বিচারালয় চত্বরে এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ব্যালট ছিনতাই ও হট্টগোলের অভিযোগে বুধবার রাতে ১১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠন। এ সংগঠনের সদস্যরা দলমতনির্বিশেষে সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, এটাই সবাই আশা করে। বস্তুত সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচন অতীতে সব সময় সুশৃঙ্খলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে গত দুই বছর ধরে নির্বাচনের আয়োজন বা পরিচালনা নিয়ে দেখা যাচ্ছে অনৈক্য। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের কাছে মানুষ সব সময় দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। তারাই যদি নিজেদের মধ্যে মারামারি-হাতাহাতিতে লিপ্ত হন, তাহলে তাদের পেশাগত মর্যাদা সমুন্নত থাকবে কীভাবে? তারা ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী হতে পারেন, ভিন্ন ভিন্ন দলের সমর্থক হতে পারেন; কিন্তু পেশাগতভাবে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত। একই সঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা।
বুধবারের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর পুলিশ যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাদের ওপর কেবল লাঠিচার্জই করেনি, বুট দিয়ে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছে; কিল-ঘুসি মেরেছে।
এ হামলায় আহত একজন সাংবাদিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে বলেও জানা গেছে। আশার কথা, নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করব, হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করে অবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।