জি-২০ সম্মেলন ও বাংলাদেশ: বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়নে সহায়ক হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দিল্লি ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর ফোরাম ‘জি-২০’ বা ‘গ্রুপ অব টোয়েন্টি’র শীর্ষ সম্মেলন শেষ হলো ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে জি-২০ দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্য থাকায় সম্মেলনে একটি সর্বসম্মত ঘোষণা গৃহীত হওয়ার বিষয়ে সংশয় ছিল। তবে কূটনীতিকদের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মত ঘোষণা প্রণয়ন সম্ভব হয়েছে। ঘোষণায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মোট সাতটি পয়েন্ট রয়েছে। সেখানে এ যুদ্ধের জন্য প্রত্যক্ষভাবে রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
তবে ঘোষণায় সব দেশকে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের নীতিকে অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। দিল্লি ঘোষণায় স্বভাবতই বিদ্যমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় অর্থনীতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতির স্বার্থে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
জি-২০ সম্মেলনে অতিথি রাষ্ট্র হিসাবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। এ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার তাগিদ প্রদানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এ দুটি বিষয় তুলে ধরা ছাড়াও বিশ্ব শান্তি ও সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এছাড়া এ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের বাইরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও একান্ত বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সাইডলাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে। সম্মেলনের শেষদিনে বৈঠক করেছেন সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে। এছাড়াও সম্মেলনে অংশ নেওয়া অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একান্ত সৌহার্দমূলক পরিবেশে কথা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট মোবাইল ফোন দিয়ে সেলফি তোলেন প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ আলোচনার জন্ম দেয়।
বস্তুত জি-২০ একটি অর্থনৈতিক ফোরাম। অর্থনৈতিক উন্নতি ও প্রবৃদ্ধিই এর লক্ষ্য। তবে অর্থনীতি ও রাজনীতি একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অপরটি অচল। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে, তার কারণ মূলত রাজনৈতিক। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্বে শান্তি ও সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তা সম্ভব হতে পারে। সেদিক থেকে জি-২০-র মতো ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি বলা যায়।