শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা
ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অকল্পনীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কোনো প্যাসেঞ্জারের পকেটে একটি আলপিন থাকলেও সেটি এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা স্ক্রিনিংয়ে ধরা পড়ার কথা। গত মঙ্গলবার রাতে সব স্তরের নিরাপত্তা ডিঙিয়ে পাসপোর্ট, টিকিট, বোর্ডিং পাশ ছাড়া একটি শিশু নির্বিঘ্নে কুয়েত এয়ারওয়েজের এক ফ্লাইটে ওঠার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনা কীভাবে ঘটল তা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হবে, এটাই স্বভাবিক। জানা যায়, বিমানবন্দরের ১৪ স্তরের নিরাপত্তা ডিঙিয়ে পাসপোর্ট, টিকিট, বোর্ডিং পাশ ছাড়া ওই শিশুটি নির্বিঘ্নে কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে উঠে পড়ে। এ ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যান ওই ফ্লাইটের পাইলট, ক্রুসহ সব যাত্রী। পুরো ফ্লাইটের ৩৩০ আসনে যাত্রী পূর্ণ থাকায় কেবিন ক্রুরা শিশুটিকে কোনো সিট দিতে পারছিলেন না। পরে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তাকর্মীরা ছুটে যান সেই ফ্লাইটে। এরপর বেরিয়ে আসে শাহজালালের নিরাপত্তাব্যবস্থার ভয়াবহ চিত্র। এ ঘটনায় কুয়েত এয়ারওয়েজের কেইউ-২৮৪ ফ্লাইটটি প্রায় আধা ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ত্যাগ করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে দেখেছেন কীভাবে শিশুটি বিমানবন্দরে প্রবেশ করেছিল এবং ফ্লাইটে উঠেছিল। তারা দেখতে পান, ইমিগ্রেশন, অ্যাভসেক তল্লাশি ও সিকিউরিটি চেক না করে শিশুটি নির্বিঘ্নে ফ্লাইটে উঠে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন ভিভিআইপির ফ্লাইট বিমানবন্দর ত্যাগ করার মাত্র ১০ ঘণ্টা পর ঘটা এ ঘটনা পুরো নিরাপত্তাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রশ্ন হলো, ১০-১২ বছরের গ্রামের একটি শিশুর কাছে বিমানবন্দরে চলাচলের পথগুলো চেনা নয়। তারপরও সে বিমানবন্দরের এত গেট ডিঙিয়ে ফ্লাইটে উঠতে পারল কী করে? কে বা কারা তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছে? এটি কি একটি সাধারণ ঘটনা নাকি পরিকল্পিত? এর সঙ্গে অন্য কোনো রহস্য আছে কিনা, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার স্বার্থে তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঘটনায় ১০ জনকে বিমানবন্দর থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি দ্রুত প্রতিবেদন প্রদান করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সম্প্রতি এ বিমানবন্দরের কাস্টমস গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চুরি যাওয়ায় এর নিরাপত্তা ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
এ বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় অবৈধ প্রবেশের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। কাজেই এ ধরনের ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। এ প্রবণতা রোধ করতে না পারলে তা দেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ইতঃপূর্বে বিমানবন্দরের অপ্রতুল নিরাপত্তাব্যবস্থা ও বহিরাগতের অবাধ প্রবেশের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কিছু বিদেশি এয়ারলাইন্স ও এয়ার ফ্রেইট। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের হওয়া উচিত। শুধু অবৈধ প্রবেশ নয়, এ বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, যা বারবার আলোচনায় আসে। এ বিমানবন্দরের দুর্বল ব্যবস্থাপনা শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। বিমানবন্দরে সব ধরনের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ কাম্য।