কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড: একের পর এক এমন দুর্ঘটনার কারণ কী?
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বঙ্গবাজার, ঢাকা নিউ মার্কেট, গুলশান-১ নম্বরে অবস্থিত ডিএনসিসি মার্কেট-ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এসব মার্কেটে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২১৭টি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের অন্তত ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছেন, যেসব মার্কেট ভেঙে বহুতল ভবন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেসব মার্কেটই পুড়ছে ‘রহস্যের আগুনে’। গত ছয় মাসে এ ধরনের অন্তত তিনটি ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছেন। বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটের পর পুড়ে ছারখার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের আগুনের সূত্রপাতও হয়েছে শেষ রাতের দিকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুন নিঃস্ব করেছে ব্যবসায়ীদের। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষি মার্কেটের আগুন পরিদর্শনে গিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনও একই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে।
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বেশকিছু কাঁচা মার্কেট ভেঙে বহুতল পাকা মার্কেট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একাধিকবার উচ্ছেদের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে তারা। মার্কেট ছেড়ে দিতে ব্যবসায়ীদের নোটিশ দেওয়া হলেই তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে তা আটকে দেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন আইনি জটিলতায় থাকা মার্কেটগুলোই একের পর এক আগুনে পুড়ছে। বঙ্গবাজারের মতো কৃষি মার্কেটের আগুনের কারণ হিসাবে শর্টসার্কিটকে দায়ী করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে এমন ধারণাই করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, রাতে বিদ্যুতের প্রধান সুইচ বন্ধ থাকার পরও কীভাবে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে? আবার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে সাহসিকতার পরিচয় দিলেও অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পরও তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তারও সদুত্তর প্রয়োজন। মার্কেটের এক নিরাপত্তা কর্মীর অভিযোগ, রাত ৩টার দিকে আগুন ধরেছে দেখে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিলেও তারা নাকি সাড়া দেয়নি। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের কথা জানানোরও আধা ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ছোট গাড়ি আসে। ততক্ষণে মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আরও পাঁচ-সাতটি গাড়ি নির্বাপণের কাজে যোগ দিলেও ব্যবসায়ীদের মতে, এগুলো আগে এলে ক্ষতি কম হতো।
কৃষি মার্কেটের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন, এটাই প্রত্যাশা। তবে সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক মার্কেটগুলোতে বারবার কেন এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, সে প্রশ্নের জবাব বের করাও জরুরি। দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারি মালিকানাধীন মার্কেটগুলোর কর্তৃপক্ষ যদি উদাসীন হয়, তাহলে তাদের অবশ্যই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কেননা বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু যে ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন তা নয়, তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তায় পড়ে। একইসঙ্গে এমন আগুনে দেশের সম্পদহানিও ঘটে।
কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড: একের পর এক এমন দুর্ঘটনার কারণ কী?
সম্পাদকীয়
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বঙ্গবাজার, ঢাকা নিউ মার্কেট, গুলশান-১ নম্বরে অবস্থিত ডিএনসিসি মার্কেট-ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এসব মার্কেটে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২১৭টি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের অন্তত ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছেন, যেসব মার্কেট ভেঙে বহুতল ভবন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেসব মার্কেটই পুড়ছে ‘রহস্যের আগুনে’। গত ছয় মাসে এ ধরনের অন্তত তিনটি ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছেন। বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটের পর পুড়ে ছারখার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের আগুনের সূত্রপাতও হয়েছে শেষ রাতের দিকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুন নিঃস্ব করেছে ব্যবসায়ীদের। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষি মার্কেটের আগুন পরিদর্শনে গিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনও একই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে।
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বেশকিছু কাঁচা মার্কেট ভেঙে বহুতল পাকা মার্কেট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একাধিকবার উচ্ছেদের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে তারা। মার্কেট ছেড়ে দিতে ব্যবসায়ীদের নোটিশ দেওয়া হলেই তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে তা আটকে দেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন আইনি জটিলতায় থাকা মার্কেটগুলোই একের পর এক আগুনে পুড়ছে। বঙ্গবাজারের মতো কৃষি মার্কেটের আগুনের কারণ হিসাবে শর্টসার্কিটকে দায়ী করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে এমন ধারণাই করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, রাতে বিদ্যুতের প্রধান সুইচ বন্ধ থাকার পরও কীভাবে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে? আবার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে সাহসিকতার পরিচয় দিলেও অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পরও তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তারও সদুত্তর প্রয়োজন। মার্কেটের এক নিরাপত্তা কর্মীর অভিযোগ, রাত ৩টার দিকে আগুন ধরেছে দেখে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিলেও তারা নাকি সাড়া দেয়নি। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের কথা জানানোরও আধা ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ছোট গাড়ি আসে। ততক্ষণে মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আরও পাঁচ-সাতটি গাড়ি নির্বাপণের কাজে যোগ দিলেও ব্যবসায়ীদের মতে, এগুলো আগে এলে ক্ষতি কম হতো।
কৃষি মার্কেটের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন, এটাই প্রত্যাশা। তবে সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক মার্কেটগুলোতে বারবার কেন এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, সে প্রশ্নের জবাব বের করাও জরুরি। দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারি মালিকানাধীন মার্কেটগুলোর কর্তৃপক্ষ যদি উদাসীন হয়, তাহলে তাদের অবশ্যই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কেননা বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু যে ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন তা নয়, তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তায় পড়ে। একইসঙ্গে এমন আগুনে দেশের সম্পদহানিও ঘটে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023