ডলার সংকটের প্রভাব, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তির ওপর জোর দিন
বাণিজ্যিক আমদানির দেনা ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যাংকগুলো আগাম বা ফরোয়ার্ড ডলার কিনে রাখে। বাণিজ্যিক পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি আমদানিতেও এখন ভরসা এই আগাম কেনা ডলার, যার বেশিরভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে আমদানির দেনা পরিশোধে।
এতে আমদানি পণ্যের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারে এসব পণ্যের দামও বাড়ছে। আবার অন্যান্য পণ্যের দামেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ছে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বিভিন্ন মেয়াদে আগাম ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে ১১৩ টাকা ৮৫ পয়সায়। কোনো কোনো ব্যাংক ১১৪ টাকা করেও বিক্রি করছে। জানা গেছে, ব্যাংকে বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১১০ টাকা দামে আমদানির ডলার মিলছে না। এমনকি আন্তঃব্যাংকেও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই চড়া দামে এক মাস থেকে এক বছরের আগাম ডলার কিনে রাখতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।
৩ আগস্ট থেকে আমদানিতে প্রতি ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১১০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। নতুন দর কার্যকরের দুদিনের মধ্যেই তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ ১১০ টাকায় ওঠে। সাধারণত ব্যাংকগুলো আমদানি ও বৈদেশিক ঋণের দায় মিটিয়ে অতিরিক্ত ডলার থাকলে সেগুলো আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বিক্রি করতে পারে। তবে দর বেঁধে দেওয়ায় যেহেতু ১১০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না, তাই আন্তঃব্যাংকে মুনাফার সুযোগ না থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা ডলার আগাম বিক্রি করছে। এতে মেয়াদ অনুযায়ী ডলারের দামও বেশি পাওয়া যায়; আবার টাকাও পাওয়া যায় নগদ। এভাবেই বেসরকারি খাতের আমদানিকারকরা সাধারণভাবে ডলার না পাওয়ায় জরুরি পণ্য আমদানির স্বার্থে ডলার বুকিং দিচ্ছেন। অর্থাৎ এক মাস মেয়াদি আগাম কিনলে এখন টাকা দিয়ে ১ মাস পর ডলার পাওয়া যাবে। আবার সেগুলো ১ থেকে ৬ মাস মেয়াদি বা ১ বছর মেয়াদিও হতে পারে। আগাম ডলার বুকিং দিয়ে সেই মেয়াদে এলসি খোলা হচ্ছে। সব মিলে এখন আগাম ডলারের বাজার বেশ জমজমাট। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো রপ্তানিকারকের ব্যাক টু ব্যাক এলসিসহ বিভিন্ন দায় মিটিয়ে হিসাবে যদি অতিরিক্ত ডলার থাকে, তাহলে সেগুলো ৩০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। ৩০ দিন অতিক্রম করলে ব্যাংক ওই ডলার নিজ ক্ষমতাবলে নগদায়ন করে অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবে। ফলে এখন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের বেশি ডলার ধরে রাখার সুযোগ নেই। এ কারণে হাতেগোনা যে কটি ব্যাংকের কাছে ডলার আছে, তারা আমদানিকারক তথা ক্রেতাদের শর্ত দিচ্ছে, যদি ডলার সরবরাহ করার সময় আগাম রেটের চেয়ে তা বেশি হয়, তখন বাড়তি দাম দিতে হবে।
বস্তুত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ডলার সংকটের কারণে। এ সংকট নিরসনে সরকারকে জোর চেষ্টা চালাতে হবে। এ লক্ষ্যে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির প্রয়াস নিতে হবে। এছাড়া যেসব উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার কথা, তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে যাতে ঋণের অর্থ দ্রুত পাওয়া যায়।
ডলার সংকটের প্রভাব, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তির ওপর জোর দিন
সম্পাদকীয়
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাণিজ্যিক আমদানির দেনা ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যাংকগুলো আগাম বা ফরোয়ার্ড ডলার কিনে রাখে। বাণিজ্যিক পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি আমদানিতেও এখন ভরসা এই আগাম কেনা ডলার, যার বেশিরভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে আমদানির দেনা পরিশোধে।
এতে আমদানি পণ্যের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারে এসব পণ্যের দামও বাড়ছে। আবার অন্যান্য পণ্যের দামেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ছে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বিভিন্ন মেয়াদে আগাম ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে ১১৩ টাকা ৮৫ পয়সায়। কোনো কোনো ব্যাংক ১১৪ টাকা করেও বিক্রি করছে। জানা গেছে, ব্যাংকে বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১১০ টাকা দামে আমদানির ডলার মিলছে না। এমনকি আন্তঃব্যাংকেও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই চড়া দামে এক মাস থেকে এক বছরের আগাম ডলার কিনে রাখতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।
৩ আগস্ট থেকে আমদানিতে প্রতি ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১১০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। নতুন দর কার্যকরের দুদিনের মধ্যেই তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ ১১০ টাকায় ওঠে। সাধারণত ব্যাংকগুলো আমদানি ও বৈদেশিক ঋণের দায় মিটিয়ে অতিরিক্ত ডলার থাকলে সেগুলো আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বিক্রি করতে পারে। তবে দর বেঁধে দেওয়ায় যেহেতু ১১০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না, তাই আন্তঃব্যাংকে মুনাফার সুযোগ না থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা ডলার আগাম বিক্রি করছে। এতে মেয়াদ অনুযায়ী ডলারের দামও বেশি পাওয়া যায়; আবার টাকাও পাওয়া যায় নগদ। এভাবেই বেসরকারি খাতের আমদানিকারকরা সাধারণভাবে ডলার না পাওয়ায় জরুরি পণ্য আমদানির স্বার্থে ডলার বুকিং দিচ্ছেন। অর্থাৎ এক মাস মেয়াদি আগাম কিনলে এখন টাকা দিয়ে ১ মাস পর ডলার পাওয়া যাবে। আবার সেগুলো ১ থেকে ৬ মাস মেয়াদি বা ১ বছর মেয়াদিও হতে পারে। আগাম ডলার বুকিং দিয়ে সেই মেয়াদে এলসি খোলা হচ্ছে। সব মিলে এখন আগাম ডলারের বাজার বেশ জমজমাট। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো রপ্তানিকারকের ব্যাক টু ব্যাক এলসিসহ বিভিন্ন দায় মিটিয়ে হিসাবে যদি অতিরিক্ত ডলার থাকে, তাহলে সেগুলো ৩০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। ৩০ দিন অতিক্রম করলে ব্যাংক ওই ডলার নিজ ক্ষমতাবলে নগদায়ন করে অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবে। ফলে এখন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের বেশি ডলার ধরে রাখার সুযোগ নেই। এ কারণে হাতেগোনা যে কটি ব্যাংকের কাছে ডলার আছে, তারা আমদানিকারক তথা ক্রেতাদের শর্ত দিচ্ছে, যদি ডলার সরবরাহ করার সময় আগাম রেটের চেয়ে তা বেশি হয়, তখন বাড়তি দাম দিতে হবে।
বস্তুত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ডলার সংকটের কারণে। এ সংকট নিরসনে সরকারকে জোর চেষ্টা চালাতে হবে। এ লক্ষ্যে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির প্রয়াস নিতে হবে। এছাড়া যেসব উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার কথা, তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে যাতে ঋণের অর্থ দ্রুত পাওয়া যায়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023