দুর্ভোগের শহর ঢাকা: নগর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর শুরু হওয়া কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে একরকম ডুবে গিয়েছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। স্থানভেদে প্রধান সড়কগুলোতে হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোথাও কোমরপানিও জমে যায়। জলজট থেকে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। একদিকে বৃষ্টি, তীব্র যানজট, অন্যদিকে পরিবহণ সংকটে পড়ে ঢাকাবাসীকে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিল মিরপুরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পানিতে পড়ে শিশুসহ চারজনের মৃত্যুর ঘটনা। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সমস্যা নতুন নয়; কিন্তু তীব্র বৃষ্টিতে সড়কে ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর মতো ঘটনা আমাদের স্বাভাবিকভাবেই ব্যথিত করেছে, করেছে আতঙ্কিতও। নানা অনিয়মের বেড়াজালে ঢাকা মহানগরী ক্রমেই এভাবে বাস-অযোগ্য মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
রাজধানীর প্রায় সব সড়কের দুপাশেই দেখা যায় তারের (কেব্ল) জঞ্জাল। ইন্টারনেট, ডিশ, টেলিফোন, বিদ্যুতের তারগুলো বছরের পর বছর জমে রূপ নিয়েছে স্তূপে। বায়ুদূষণ, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন আর ভূমিকম্প সহনে অক্ষম ভবনে ঘেরা এই শহরে এসব কেব্ল ভয়ংকর এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। সৌন্দর্যহানির কথা বাদই দিলাম, এ তারের জঞ্জাল নগরবাসীর জন্য যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, বৃহস্পতিবার চারজনের প্রাণহানি তারই প্রমাণ দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ জঞ্জালমুক্ত করার উদ্যোগের কথা বলা হলেও আজও এ থেকে মুক্ত হয়নি রাজধানী। এ অবস্থা থেকে ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দিতে মাঝে মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন টানার উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের তারও মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তাতে জনগণের অর্থ আর রাস্তা খননে নগরবাসীর দুর্ভোগই সার! সংশ্লিষ্ট দপ্তর আর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় করে কবে যে এসব কাজ সফলতার মুখ দেখবে, তা বলা মুশকিল। ঢাকা মহানগরীকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করতে ভূ-গর্ভস্থ লাইন স্থাপনের বিকল্প নেই। জানা যায়, এ মহানগরীকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করতে ২০০৯ সালে ওভারহেড সব তার অপসারণ করে আন্ডারগ্রাউন্ডে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঝুলন্ত তার সরাতে ২০১০ সালে উদ্যোগও নিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই সময় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। কাজেই শুধু আলোচনা আর লোকদেখানো উদ্যোগ নয়, প্রয়োজন যথাযথ বাস্তবায়ন। পাশাপাশি নগরে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
এটাও ঠিক, এসব ক্ষেত্রে নগরবাসীরও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রায়ই যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিন ফেলে ড্রেনেজ লাইনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন কিছু অসচেতন নগরবাসী। তবে তাদের সচেতন করা এবং অমান্যে শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তায়। নগরবাসীর কাছ থেকে করের অর্থ আদায় করে বিনিময়ে দুর্ভোগ আর প্রাণ সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি কোনোমতেই কাম্য নয়। ঢাকাকে বাসযোগ্য শহরে পরিণত করতে নগর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোকে সরকার জবাবদিহিতার আওতায় আনবে, এটাই প্রত্যাশা।
