Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

রিজার্ভের অব্যাহত নিম্নগতি, ডলারের আয়-ব্যয়ে সমন্বয় জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রিজার্ভের অব্যাহত নিম্নগতি, ডলারের আয়-ব্যয়ে সমন্বয় জরুরি

বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহুমুখী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ডলারের আয় উৎসাহিত করতে এবং খরচের লাগাম টানতে আরোপ করছে নানা ধরনের বিধিনিষেধও। ইতোমধ্যে সরকার ডলারের ব্যয় ঠেকাতে নানা কৃচ্ছ্রতার নীতি নিয়েছে, বিলাসী পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করেছে। কিন্তু বাস্তবে এসব পদক্ষেপের তেমন একটা সুফল মিলছে না। উলটো নানা ধরনের গুজব রটে বাজারে আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলছে। এতে ডলারের দাম বেড়ে টাকার মান কমে যাচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতিতে চাপ বাড়াচ্ছে।

শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ঋণ শোধের ধারা অব্যাহত থাকায় রিজার্ভের ক্ষয় মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু পদক্ষেপে পরিস্থিতির কিছুটা উত্তরণ ঘটলেও ডলারের সংকট কাটছে না, বরং আরও প্রকট হচ্ছে। সাধারণত বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়ে রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বৈদেশিক অনুদান থেকে। কিন্তু এই চার খাতেই আয়ের ধারা নিম্নমুখী। অভিযোগ উঠেছে, রেমিট্যান্স বাড়াতে জোরালো কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে না।

ব্যাংকের চেয়ে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় রেমিট্যান্সের বড় অংশ চলে যাচ্ছে হুন্ডিতে। আবার ডলারের প্রবাহ বাড়াতে হলে রপ্তানি আয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সেটি সম্ভব হচ্ছে না। বৈশ্বিক মন্দার কারণে রপ্তানির আদেশ কমেছে। আয় নিয়ে তাই রপ্তানিকারকরাও শঙ্কায় আছেন। এদিকে বৈদেশিক অনুদানের গতিও নিম্নমুখী। শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। সব মিলে বাজারে ডলার সংকটও এখন প্রকট। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে এখন তাই রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো নিয়মিত এলসি খুলতে পারছে না। দেখা দিয়েছে ডলার বুকিংয়ের প্রবণতা। এমন অবস্থায় রেমিট্যান্স বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আবার এটাও মনে রাখা জরুরি যে, রপ্তানি আয় অর্জিত না হলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পাবে। চাপ সৃষ্টি হবে রিজার্ভের ওপর। তাই রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের ওপরও জোর দিতে হবে।

ডলার সংকট কাটাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। জনশক্তি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও রেমিট্যান্স প্রবাহে এর প্রভাব পড়ছে না। নানা উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে আগ্রহ বাড়ানো যাচ্ছে না। যারা রেমিট্যান্সের প্রেরক, তাদের একটি বড় অংশ স্বল্পশিক্ষিত। তাদের কাছে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো তুলনামূলক সহজ। এ কারণে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো আরও সহজ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এগিয়ে এলে রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি আসবে। অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানিতেও আনতে হবে স্বচ্ছতা। এক্ষেত্রে কারসাজি করে কেউ যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থ পাচার রোধে নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ। একইসঙ্গে দুর্নীতি রোধেও পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এ চাপ কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার আরও বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

রিজার্ভ অব্যাহত নিম্নগতি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম