মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন
ছাপানো টাকা ছাড়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে। বস্তুত বহুদিন ধরেই মূল্যস্ফীতি বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে সরকার। এসব অর্থ বাজারে এসে একদিকে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে কমিয়ে দিচ্ছে টাকার মান। সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির ফলে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিকভাবেও দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোর প্রতি আস্থার ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
বৈশ্বিক মন্দায় বিদায়ি অর্থবছরে সরকারের আয় কমলেও ব্যয় বেড়েছে। বাড়তি ব্যয় মেটাতে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। বিদায়ি অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে; এর আগের অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ৩১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়ার অন্যতম কুফল হলো চড়া মূল্যস্ফীতি। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে চাহিদা কমাতে বাধ্য হচ্ছে। যারা দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন, তারা দারিদ্র্যসীমার মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করায় বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে।
বিদায়ি অর্থবছরে মন্দা ও ডলার সংকটে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেমন কম ছিল, তেমনই বেসরকারি খাতেও অর্থের চাহিদা ছিল কম। ডলার সংকট, বৈশ্বিক মন্দা ও চড়া মূল্যস্ফীতির কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে তাদের অনেকে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছিল সাড়ে ৯ শতাংশের কম। উৎপাদন কর্মকাণ্ড কম থাকার পরও মুদ্রা সরবরাহ আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছর বেড়েছে। এদিকে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ নিচ্ছে, এর বেশির ভাগই নিচ্ছে চলতি ব্যয় মেটাতে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা বাজারে এলেও উৎপাদন বাড়ছে না। এসব অর্থ মূল্যস্ফীতি উসকে দিচ্ছে। উৎপাদন খাতে বিশেষ তহবিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অর্থের জোগান দিতে চাচ্ছে, অতিরিক্ত শর্ত থাকায় সে অর্থের ব্যবহার কম। নিয়মনীতি সহজ করা হলে আশা করা যায় উৎপাদন খাতে বিশেষ তহবিলের ব্যবহার বাড়বে।
ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৬ শতাংশ বাড়ানো হলেও অর্থবছর শেষে আদায় বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এতে ঘাটতি হওয়ায় সরকারকে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। কাজেই রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি-এ দুই কারণে টাকার মান কমে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এদিকে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে; বেড়েছে অন্যান্য পণ্যের দামও। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির চার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো-দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি; দুর্বল মুদ্রানীতি; টাকার অবমূল্যায়ন; সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন এবং কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ। এ প্রেক্ষাপটে এটা স্পষ্ট যে, সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন। মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। কাজেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
