বিপর্যস্ত পর্যটন খাত
দেশের রাজনীতি স্থিতিশীল হলে এ খাতেও ফিরবে স্বস্তি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নত দেশগুলোর ভ্রমণপিপাসু মানুষ প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে থাকে। সারা বিশ্বে পর্যটকের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়লেও বিদেশি পর্যটকদের আমরা সেভাবে আকর্ষণ করতে পারিনি। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশে পর্যটনশিল্পের যথাযথ বিকাশ ঘটেনি। সম্প্রতি দেশে নতুন করে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। জানা যায়, কক্সবাজারে একের পর এক বাতিল হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণের বুকিং। এ সময়ে অন্যান্য বছর এ পর্যটন নগরীর হোটেল-রিসোর্টে লাখো পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও গত দুই সপ্তাহ প্রায় ফাঁকা ছিল জেলার পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউজ। বস্তুত দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সারা দেশেই পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। এ অবস্থায় বিপুল অঙ্কের লোকসান হয়েছে বলে দাবি পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটন মৌসুমের শুরুতে তারা ধাক্কা খেয়েছেন। অন্যান্য বছর এ সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করলেও এ বছর ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। জানা যায়, রাস্তাঘাটে সংঘাত-সংঘর্ষের কথা চিন্তা করে বহু ভ্রমণপিপাসু কক্সবাজারে ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করছেন। জানা যায়, মৌসুমের শুরু থেকেই এবার পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুম অক্টোবরে শুরু হয়; মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত চলমান থাকে। এবার মৌসুমের শুরুতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ায় পর্যটন ব্যবসায় এর প্রভাব পড়েছে। সমুদ্রসৈকতে কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক পর্যটক না থাকায় সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কক্সবাজার ও এর আশপাশে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। পর্যটন খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দেশের অন্যান্য স্থানেও প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও সেখানে সেবার মান বাড়ছে না। পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি পেতে যে ধরনের অবকাঠামো দরকার, তার অনেক কিছুই কুয়াকাটায় নেই। এমনকি পর্যটকদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেখানে। কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও সেখানে সেবার মান কেন বাড়ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। অনেক পর্যটকের অভিযোগ, কুয়াকাটায় ভ্রমণে গিয়ে খাদ্যপণ্যসহ প্রায় সবকিছুর জন্য তাদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। কুয়াকাটায় বেড়াতে গিয়ে পর্যটকদের যাতে দুর্ভোগের শিকার হতে না হয়, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
পর্যটন খাতের সুযোগ কাজে লাগিয়ে শ্রীলংকা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। করোনার প্রকোপ কেটে যাওয়ায় ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার এ দ্বীপ দেশে বিপুলসংখ্যক বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছে। এ উদাহরণ থেকে এটাই স্পষ্ট, যথাযথ পদক্ষেপ নিলে অল্প সময়েই পর্যটন খাতে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, রয়েছে অসংখ্য হাওড়-নদী-নালা-খাল-বিল ইত্যাদি। এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বে পর্যটন খাতে কেন আমরা এত পিছিয়ে রয়েছি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ খাতে আমাদের সম্ভাবনাগুলো কাজ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। যে ধরনের কর্মসূচি দেশের উন্নয়নের অন্তরায় তেমন কর্মসূচি প্রদানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সর্তকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।