দুর্নীতি প্রতিরোধের তাগিদ
সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনের প্রয়োগ জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শনিবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজরা যে দলেরই হোক, দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এজন্য দুদককে তিনি আরও কৌশলী, প্রশিক্ষিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে জনগণের কাছে দুদকের জবাবদিহি থাকা উচিত বলেও মত দেন তিনি। একই দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি। বস্তুত দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। আলোচনা বা আহ্বানের মধ্যে তা শুধু সীমাবদ্ধ থাকবে না; বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।
দেশে দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন রয়েছে; কিন্তু এর প্রয়োগ খুবই কম। দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত, সত্যিকার অর্থে তারা বিচারের আওতায় আসে না। দুদক কিছুটা কাজ করলেও তা সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ বলে অনেকের অভিযোগ। এক্ষেত্রে শুধু চুনোপুঁটিদের ধরা হলেও রাঘববোয়ালরা বিচারের বাইরেই থেকে যায়। ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধ হচ্ছে না প্রত্যাশা অনুযায়ী। পাশাপাশি দুর্নীতির তথ্য প্রকাশেও চাপ রয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের হয়রানির শিকার হওয়ার নজিরও রয়েছে। অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দুর্নীতি রোধে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তবে তা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে আসেনি। উল্লেখ্য, আজ যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় শুরু হওয়া জাতিসংঘের পাঁচ দিনব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলনে বাংলাদেশও অংশ নিচ্ছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুর্নীতিবিরোধী এ সম্মেলনে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশও ভূমিকা রাখবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর কোনো দেশই এর কুপ্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। তবে অনেক দেশই কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলন থেকে তাদের সেই অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে পারে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে, দুর্নীতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে, অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই দুর্নীতির লাগাম কঠোর হাতে টেনে ধরা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা দেশে দুর্নীতির পেছনে বিবেকের অনুশাসনের অভাব, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর এবং সামাজিক প্রতিরোধের অভাবকে চিহ্নিত করেন। এক্ষেত্রে সবার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় অনুভূতিও দুর্নীতি রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে সেজন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে নিরপেক্ষ অনুসন্ধান এবং দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে কোনো ভুল পদক্ষেপে যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। যে কোনো দুর্নীতির ক্ষেত্রে সত্যতা যাচাই করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে-এটাই প্রত্যাশা।
