চুয়াডাঙ্গা-২ আসন: আ’লীগের ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ
সালাউদ্দীন কাজল, জীবননগর
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ, বেগমপুর, গড়ইটুপি এবং নিহালপুর ইউনিয়নসহ মোট ২০টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা-২ আসনজুড়ে এখন আলোচনা কোন দল থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. আলী আজগার টগর ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী শেখ সিরাজুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৮ হাজার ৩০ ভোট। এর আগে ২০০৮ সালেও মহাজোট প্রার্থী হাজী মো. আলী আজগর টগর ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চারদলীয় জোট প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা হাবিবুর রহমান পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ ভোট। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. মোজাম্মেল হক ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪৮ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ওই সময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর্জা সুলতান রাজা পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৫০ ভোট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও বিএনপির হাজী মো. মোজাম্মেল হক ৬৫ হাজার ৭৫৫ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সেবার তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মীর্জা সুলতান রাজা পেয়েছিলেন ৬৩ হাজার ৭৩২ ভোট। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগের নির্বাচনে জনতা মুক্তি পার্টির প্রার্থী মীর্জা সুলতান রাজা বিজয়ী হয়েছিলেন।
এ আসনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্যসহ ৬ জন, বিএনপি থেকে ৪ জন ও জাতীয় পার্টি থেকে ১ জন দলীয় মনোনয়ন পেতে স্থানীয়ভাবে ও কেন্দ্রে লবিং করছেন। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. রুহুল আমিনকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মহাজোট মনোনীত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আলী আজগার টগর জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হন।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাশেম রেজা ঢাকা থেকে কয়েক দফা হেলিকপ্টারযোগে নির্বাচনী এলাকায় এসে প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের নজর কাড়ার চেষ্টা করেছেন।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. নজরুল মল্লিক নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ ভোটারদের নিজের পক্ষে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কাউকে এখনও পর্যন্ত নিজের পক্ষে আনতে পারেননি।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজাদুল ইসলাম আজাদ, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান মঞ্জু ও দর্শনা পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় ব্যানার টাঙিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বিএনপির তাথৈ অবস্থা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আসন্ন সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতিতে পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি। সর্বশেষ গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারও সেই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহির্প্রকাশ ঘটেছে। বিবদমান তিনটি গ্রুপ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে কার্যত অনড়ই রয়ে গেছে।
তিনটি গ্রুপই আলাদা আলাদা কার্যক্রম চালানোর ফলে দলটির সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে দলের অনেকের অভিমত। বিএনপি হতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ৪ জন গণসংযোগে রয়েছেন।
এদের মধ্যে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, জামায়াতের সঙ্গে যদি বিএনপির সমন্বয় না হয়, তাহলে দলীয় মনোনয়ন পেতে তার কোনো বেগ পেতে হবে না, এমনটিই মনে করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
এছাড়া দলের অপর প্রার্থীরা হলেন- প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোজাম্মেল হকের ছেলে জেলা বিএনপির সদস্য শিল্পপতি আতিকুল হক মিথুন ও দর্শনা পৌর বিএনপির সভাপতি মাহমুদুর রহমান তরফদার শাওন।
বিএনপির এ বেহাল অবস্থার জন্য এই আসনে ৪ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী আসনটি দাবি করবে। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. রুহুল আমিন।
জীবননগর উপজেলার ধোপাখালী গ্রামের রুহুল আমিন ইতিমধ্যেই দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টি হতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেলোয়ার হোসেন দুলু নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঝে মধ্যে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন।
