Logo
Logo
×

একদিন প্রতিদিন

জীবনকথা

বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত মহিলা প্রধানমন্ত্রী

সিরিমাভো রাতওয়াতে দায়াস বন্দরনায়েকে শ্রীলঙ্কার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও তিনি আধুনিক বিশ্বের প্রথম মহিলা সরকার প্রধান ছিলেন। তিনি তিনবার সিলন ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টিকে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার জীবনকথা লিখেছেন-

Icon

সেলিম কামাল

প্রকাশ: ১০ মে ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

১৯৫৯ সালে নিহত প্রধানমন্ত্রী সলোমন বন্দরনায়েকের স্ত্রী ছিলেন সিরিমাভো বন্দরনায়েকে। শ্রীলঙ্কার চতুর্থ রাষ্ট্রপতি চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা এবং সাবেক স্পিকার ও মন্ত্রী অনুঢ়া বন্দরনায়েকে তার সন্তান।

১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন তার স্বামী সলোমন। তিনি ১৯৪৭ সালে সংসদের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভার সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ইউএনপি থেকে সম্পর্ক ছেদ করে শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির (এসএলএফপি) নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিনিধি সভায় এসএলএফপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। এর ফলে সলোমন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন ঘটায় তার সরকারের পতন ঘটে। ১৯৫৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কর্তৃক তিনি নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডের ফলে সরকারে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী সি. পি. ডি সিলভা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় লন্ডনে চিকিৎসার্থে গমন করলে শিক্ষামন্ত্রী বিজেনন্দ দাহানায়েকে আপদকালীন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। অস্থিতিশীল সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৬০ সালের মার্চের নির্বাচনে এসএলএফপি পরাজিত হয়।

এ সময় সিরিমাভো অগ্রসর হন এবং তার স্বামীর দলের নেতৃত্ব দেন। এভাবেই তিনি রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৬০ সালে এম. পি. ডি জয়সা, জুনিয়র সিনেট থেকে পদত্যাগ করলে সিরিমাভো এসএলএফপির পক্ষ থেকে সিনেট সদস্য হন। ১৯৬০ সালের জুলাই নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয়লাভ করান। ২১ জুলাই ১৯৬০ সিনেটর থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সিরিমাভো। এর ফলে তিনি বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন।

১৯৯৪ সালে নভেম্বরে সিরিমাভোর মেয়ে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা জোটবদ্ধ পিপলস অ্যালায়েন্স দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির নেতৃত্বে থাকা সিরিমাভোকে তার নবগঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করেন।

প্রখ্যাত রাদালা পরিবারের সন্তান হিসেবে সিরিমাভো বন্দরনায়েক জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি বড় সন্তান ছিলেন। বাবা ছিলেন স্টেট কাউন্সিলের সদস্য। কলম্বোর সেন্ট ব্রিজেটস কনভেন্টে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৪০ সালে সলোমন ওয়েস্ট রিজওয়ে দায়াস বন্দরনায়েকের সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। সুনেত্রা, চন্দ্রিকা ও অনুঢ়া নামে তাদের তিন সন্তান। বড় মেয়ে সুনেত্রা একজন বিশ্বপ্রেমিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

ছোটবেলা থেকেই তার পরিবারে রাজনৈতিক আবহ বিরাজ করছিল। এসময়েই তিনি কলম্বোর সেন্ট ব্রিজেন্টস কনভেন্টে রোমান ক্যাথলিক হিসেবে যোগ দেন। আর এ কারণেই ১৯৬১ সালে শ্রীলঙ্কার সব রোমান ক্যাথলিক চার্চ স্কুলকে জাতীয়করণ করেন। তার বড় ধরনের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করেন ১৯৭২ সালে। সংবিধান পরিবর্তন করে সিলনের নাম দেন শ্রীলঙ্কা।

প্রায় চল্লিশ বছর রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সিরিমাভো ১০ আগস্ট, ২০০০ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। এর ঠিক দুই মাস পর ৮৪ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হলে দেহাবসান ঘটে তার।

বন্দরনায়েকের কয়েকটি উক্তি

* আমি এসেছি কৃষকদের নিদারুণ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে পরমানন্দে ভাসিয়ে দিতে।

* ব্যক্তিগত অহংকারের বাইরে থেকে আমি দলের নেতৃবৃন্দের অনুরোধে নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলাম।

* একজন মহিলা এবং মা হিসেবে আমি অবশ্যই বিশ্বনেতাদের বলব, তারা যেন সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় না দেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম