মহাবিপন্ন প্রজাতি চশমাপরা হনুমান
আ ন ম আমিনুর রহমান
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চশমাপরা হনুমান
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চব্বিশ বছর আগে কাপ্তাই গিয়ে চোখে চিরস্থায়ী চশমাপরা একদল প্রাণীর দেখা পাই; কিন্তু সঙ্গে ভালো কোনো ক্যামেরা না থাকায় ছবি তুলতে পারিনি।
পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন বনে, বিশেষ করে লাউয়াছড়া, সাতছড়ি ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান এবং হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা ও মৌলভীবাজারের আদমপুরে অনেকবার ওদের দেখেছি।
চশমাপরা প্রাণীরা আসলে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন ও এদেশের মহাবিপন্ন চশমাপরা হনুমান। কালো হনুমান বা কালা বান্দর নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Spectacles' Langur, Phayre's Langur বা Phayre's Leaf Monkey. Cercopithecidae গোত্রভুক্ত এ প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম Trachypithecus phayrei. এদেশের তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে আকারে এরাই ছোট।
স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে চশমাপরা হনুমান মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত লম্বায় ৫৫-৬৫ সেন্টিমিটার; লেজ ৬৫-৮০ সেন্টিমিটার। ওজনে পুরুষ ৭.০-৯.০ ও স্ত্রী ৫.০-৭.৫ কেজি। চোখের চশমা ছাড়া দেহের বাকি অংশের চামড়া কালো। ঠোঁটের চামড়ায় ওপরও সাদার ছোপ রয়েছে।
লোমবিহীন মুখমণ্ডল, কান, হাত ও পায়ের পাতা কুচকুচে কালো। পিঠ, দেহের পাশ ও লেজ কালচে ধূসর। বুক, পেট ও দেহের নিচটা সাদাটে ধূসর। নবজাতকের পুরো দেহের লোম কমলা, যা মাসখানেক পর থেকেই ধূসর হতে থাকে।
চশমাপরা হনুমান বৃক্ষবাসী, কখনই মাটিতে নামে না। ঘুম, চলাফেরা, খাবার সংগ্রহ, খেলাধুলা, বিশ্রাম সবকিছু গাছেই সম্পন্ন করে। সচরাচর একটি শক্তিশালী পুরুষের নেতৃত্বে ১০-১৫টি একটি দলে বিচরণ করে।
তবে কোনো কোনো বড় দলে ২-৩টি শক্তপোক্ত পুরুষও থাকতে পারে। প্রতিটি দলের নির্দিষ্ট বিচরণ এলাকা রয়েছে, যেখানে অন্যরা প্রবেশ করে না। একই এলাকায় মুখপোড়া হনুমান ও অন্যান্য বানর প্রজাতির সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ছাড়াই ডালে ডালে ঘুরে পাতা, পাতার বোঁটা, ফুল, ফল ও কুঁড়ি খায়। উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বংশবৃদ্ধিতে এরা বেশ সাহায্য করে। ‘চেং কং’ শব্দে ডাকে। অন্যকে ভয় দেখাতে ভেংচি কাটে।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিল প্রজননকাল। স্ত্রী ১৫০-২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চা প্রসব করে। গড়ে প্রতি দু’বছরে একবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা ৪-৫ মাস বয়স থেকেই শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। পুরুষ ৫-৬ ও স্ত্রী ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। আয়ুষ্কাল প্রায় ২০ বছর।
সূত্রমতে, পূর্বের তুলনায় বিশ্বব্যাপী এদের সংখ্যা অর্ধেক ও এদেশে প্রায় আশি ভাগ কমে গেছে। যেহেতু এরা মহাবিপন্ন, তাই অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে অচিরেই নিরীহ এ প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
লেখক : অধ্যাপক, বন্যপ্রাণী জীববিজ্ঞানী ও প্রাণিচিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, বন্যপ্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্র, গাইনিকোলজি, অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ বিভাগ, বশেমুরকৃবি
