Logo
Logo
×

প্রকৃতি ও জীবন

বন্যপ্রাণীর বনই প্রাণ

Icon

প্রকৃতি ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বনভূমি একটি দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। বিভিন্ন কারণে বনভূমির ওপর চাপ বাড়ছে। কমে যাচ্ছে বনাঞ্চল। সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। বন সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতি বছর ২১ মার্চ বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বন দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর সময়োপযোগী একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনরা। এ বছরও প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- Forests and Biodiversity.

বনভূমি উজাড় হলে বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। সেই সঙ্গে হ্রাস পাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ার কারণে বন উজাড় হচ্ছে, কৃষিকাজের জন্য আবাদি জমি বাড়াতে গিয়ে বনভূমির ধ্বংস হচ্ছে। আবার বনের প্রতি যত্নবান না হওয়ার কারণে দাবানলে পুড়ছে বিশাল বিশাল বনাঞ্চল। অথচ বন না থাকলে প্রাণ অস্তিত্বহীন। ইতিমধ্যে বন থেকে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে, অনেক প্রাণী বিপন্ন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যিটা এই যে, প্রতি বছর পৃথিবী থেকে ৩২ মিলিয়ন একর বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলেছে, গত ১০ বছরে বিশ্বে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ হেক্টর বনাঞ্চল। সেই হিসেবে প্রতি মিনিটে ধ্বংস হচ্ছে প্রায় আট হেক্টর বনভূমি। পৃথিবী থেকে এভাবে ক্রমশ যদি বনাঞ্চল উজাড় হতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অস্তিত্বও একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

মানুষ ছাড়া প্রকৃতি বেঁচে থাকতে পারলেও প্রকৃতি ছাড়া মানুষ কোনোভাবেই বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষকে বাঁচতে হলে অবশ্যই অক্সিজেনের প্রয়োজন। আর সে অক্সিজেন সরবরাহ করে গাছ। যদি আমাদের বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র গাছে নিহিত থাকে তাহলে কেন আমরা সেই পরম উপকারী বন্ধু গাছের বুকে করাত চালাচ্ছি? কানাডার জাতীয় পরিবেশ এজেন্সির একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে- ‘গড়পড়তায় একটি গাছ থেকে বছরে ২৬০ পাউন্ড অক্সিজেন তৈরি হয়। আর দুটি পরিপূর্ণ গাছ যে অক্সিজেন সরবরাহ করে তা ৪ সদস্যের একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট।’ তাই নির্দ্বিধায় স্বীকার করতেই হবে গাছের মতো উপকারী বন্ধু হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো পৃথিবীতে আর কেউ নেই।

দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও আমাদের রয়েছে অনেক কম। প্রায়ই দেখা যায়, শহরের কোনো উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশবিদদের কথা উপেক্ষা করে গাছ কাটা হচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে চিংড়ি ঘের। সবুজ পাহাড় ন্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছ কাটার ফলে। সামাজিক বনায়নের শত শত গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাড়তি বসতি স্থাপনেও প্রতিনিয়তই কাটা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। শিল্পাঞ্চলও গড়ে উঠছে কোনো না কোনো বৃক্ষ নিধনের মধ্য দিয়ে। প্রকৃতি ধ্বংসের এ চিত্র নিত্য দিনের। তবে প্রশ্ন হল, আর কতদিন চলবে প্রকৃতি ধ্বংসের এ অনৈতিক খেলা?

বৃক্ষের কাছে আমরা ঋণী। আমাদের শিক্ষা আছে, দীক্ষা আছে, জ্ঞান আছে, আছে গর্ব করার মতো অনেক কিছু। আমরা ভালো করেই বুঝি আমাদের ভালো-মন্দ। শুধু ব্যক্তিগত বা মুষ্টিমেয় মানুষের গাছ কাটার কারণে মানব জাতির ললাটে নেমে আসুক চরম বিপর্যয়- এমন অনাকাক্সিক্ষত চাওয়া কারও হতে পারে না। সবার স্বার্থে, সবার কল্যাণে প্রকৃতিকে ধ্বংস নয়, সংরক্ষণ করতে হবে -এ অঙ্গীকারই হোক আন্তর্জাতিক বন দিবসের চাওয়া।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম