Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

বুননে বর্ণমালা

Icon

কেয়া আমান

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাঙালির যা কিছু অহংকারের, একুশ তার একটি। আর বর্ণমালা আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়। প্রিয় এ বর্ণমালাকে পাওয়ার জন্যই বায়ান্নতে একুশ অমন অগ্নিরূপ ধারণ করেছিল। একুশ ছিল বলেই আমরা বাংলায় কথা বলি। একুশ আছে বলেই মধুর সুরে মা ডাকতে পারি। তাই তো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা হৃদয়ে ধারণ করে অঙ্গে জড়িয়ে অপার আনন্দ খুঁজে পাই। অঙ্গে জড়াতে পোশাক এখন হয়ে উঠেছে একুশের চেতনা আর বর্ণমালার ক্যানভাস। যে ক্যানভাসে ফুটছে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি।

যে কোনো উৎসব-পার্বণই হোক কিংবা জাতীয় কোনো গৌরবময় উপলক্ষ, বসন আর ভূষণে বাঙালি সাজ আর বাঙালি পোশাক যেন বহুদিন থেকেই স্বতন্ত্র এক গল্প। সময়ের পালাবদলে সে গল্পই একুশের পোশাকে, একুশের চেতনার এক নতুন অধ্যায় হয়ে ক্রমেই জ্বল জ্বল করে ফুটে উঠছে আমাদের কাছে। বিভিন্ন উৎসবের পাশাপাশি বাঙালি জনগণ এখন একুশের চেতনা পোশাকের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদানের মধ্য দিয়ে শহীদ দিবসের মর্মগাঁথাকে প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারিতে অঙ্গে জড়িয়ে নেন গভীর ভালোবাসায়। আর পোশাকে একুশের চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার সিংহভাগ অবদানই দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর। ঢাকার প্রায় শতাধিক খ্যাতনামা ফ্যাশন হাউস নাগরিক জীবনের পরম এ অনুষঙ্গকে অত্যন্ত নান্দনিকরূপে উপস্থাপনের মাধ্যমে তুলে ধরছে প্রতি প্রজন্মের কাছে। তাদের চেষ্টার ফলেই একুশে পোশাকগুলো এখন হয়ে উঠেছে একুশে ফেব্রুয়ারি, বর্ণমালা আর বায়ান্নর মেলবন্ধন।

ডিজাইনার ও গবেষক চন্দ্র শেখর সাহা ১৯৮২ বা ৮৩ সালের দিকে ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ের হয়ে বর্ণমালার নকশা দিয়ে পোশাক ডিজাইন করেছিলেন। শাড়ি, শার্ট ও পাঞ্জাবিতে ব্যবহার করেছিলেন বাংলা বর্ণমালা। ধীরে ধীরে পোশাকের জমিন ভরে উঠছে বর্ণমালায়, কবিতা, গান, একুশের ইতিহাসে। এসব পোশাকের ব্যবহৃত রং, কাপড়, ডিজাইন-সবকিছুতেই থাকছে ভাষা আন্দোলনের চির অমলিন চেতনা। ভাষার প্রতি বাঙালির রয়েছে গভীর টান ও মমত্ববোধ। এই টান ও মমত্ববোধ যেমন প্রকাশ পায় লেখায়, রেখায় এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে তেমনি ফ্যাশন ভুবনেও। আর তাতে উঠে আসে বাংলা গান, কবিতা, ছড়া, স্লোগানের ব্যবহার। এ আয়োজনে থাকে পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, টপসসহ বিভিন্ন পোশাক।

প্রতি বছরের মতো এবারও সাদা ও কালো পোশাকে বর্ণমালার নকশায় সেজেছে একুশের পোশাক। সাদা আর কালোর সঙ্গে এ বছরের একুশের সংগ্রহে আরও যোগ হয়েছে ছাই, ধূসর রঙ এবং চাঁপা সাদা। এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিয়োগান্তক দিনের স্মরণগাঁথা। পোশাকের জমিনে মিলবে বর্ণমালা। সঙ্গে ফুটে উঠেছে শহীদ মিনার, একুশের পঙ্তিমালা, শহীদদের প্রতিকৃতি। ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, মেশিন ও হ্যান্ড এম্ব্রয়ডারিতে করা হয়েছে জমিন অলংকরণ। আল্পনা মোটিভ আর হাতের কাজের পোশাকগুলো এবার রং ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে। এ মাধ্যমগুলোতে ভ্যালু এডিশনের পর প্রতিটি পোশাকের ডিজাইনকে মাত্রা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে নানা অনুষঙ্গে সাজিয়ে।

একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোতে রয়েছে পোশাকের বিশেষ আয়োজন। বেশিরভাগ পোশাকেই মোটিফ হিসেবে এসেছে বাংলা বর্ণমালা। আছে একুশের স্লোগান দিয়ে করা ফতুয়া, টি-শার্ট ও পাঞ্জাবি। টি-শার্টের পাশাপাশি সাদা-কালো কিংবা লাল-সবুজের পটভূমিতে একই রকম আবেগ নিয়ে একুশ মূর্ত হয়ে ওঠে ফতুয়ার ক্যানভাসে। লাল-সবুজের ‘তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা মেঘনা যমুনা’ বা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’- এমন স্লোগান, গান, এমনকি ভাষার দাবিতে রাজপথের মিছিলের ছবির ছাপও দেয়া হয়েছে অনেক ফ্যাশন হাউসের পোশাকে। শাড়ির জমিনে, আঁচলে, পাড়ে আছে এক লাইনের বিশেষ লেখা। পাঞ্জাবির বাটন প্লেট, হাতার মুখে বা বুকের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে একুশের কবিতা। সাদা ও কালো কাপড়ে তৈরি শাড়ি, কামিজ, পাঞ্জাবিতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি ব্যবহার করা হয়েছে। শাড়ির ক্ষেত্রে গানটি হাতে এঁকে তারপর স্ক্রিন প্রিন্ট করা হয়েছে। এভাবেই একুশের চেতনাকে ধারণ করে বর্ণমালায় বিন্যাস হচ্ছে আমাদের পোশাক।

কাপড় এবং নকশার বৈচিত্র্যে একুশের পোশাকের দরদামেও রয়েছে ভিন্নতা। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে একুশের সুতি শাড়ি পাওয়া যাবে ৮৫০-৩৫০০ টাকায়, তসর ও সিল্ক ১২০০-৬০০০ টাকা, টি-শার্ট ৩০০-১২০০ টাকা, ফতুয়া ২৫০-৮০০ টাকা, সালোয়ার-কামিজ ১০০০-৩০০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৯০০-৩০০০ টাকা। দেশীয় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ছাড়াও একুশের পোশাকগুলো পাওয়া যাবে যমুনা ফিউচার পার্ক, টুইন টাওয়ার, রাপা প্লাজা, নাভানা টাওয়ারসহ বিভিন্ন বিপণি বিতানে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম