Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

যাপিত জীবনে সুসম খাদ্যাভ্যাস

Icon

শওকত আরা সাঈদা (লোপা)

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যাপিত জীবনে সুসম খাদ্যাভ্যাস

আমাদের দেশের মত পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এত ঋতু বৈচিত্র্য দেখা যায় না। একেকটি ঋতুতে প্রকৃতি একেক রূপে আমাদের কাছে ধরা দেয়। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঋতু বৈচিত্র্যের রূপ কিছুটা হলেও বদলে যাচ্ছে। তবুও আমাদের দেশে যতটুকু বৈচিত্র্য এখনো টিকে আছে সেটি আমরা সবাই উপভোগ করি। ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনও আসে। সে পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে সঠিকভাবে খাপ খাওয়াতে না পারলে খুব সহজে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ সময় সবাইকে একটু বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলা উচিত। অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সময়গুলোতে সুস্থ লাইফস্টাইল ও সুসম খাদ্যাভ্যাসের দিকে সবার বাড়তি নজর দিতে ইহবে।

গরমের সময়েও যদি আপনার খাদ্যাভ্যাস শীতের মতো থাকে তবে শরীর তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না। তা না হলে খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে যে কেউ। তাই ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সুস্থ থাকতে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনগুলো তুলে ধরছি-

পানি ও তরল পানীয়র পরিমাণ বাড়াতে হবে

শীতের সময়টা পিপাসা লাগে না বলে অনেকেই পানি কম খান। কিন্তু এখন সেই অভ্যাস চলতে থাকলে শরীর হয়ে পড়বে পানিশূন্য। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ গরমের সময় প্রায় ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানির অনেকটাই বের হয়ে যায়। সেই ঘাটতি পূরণের জন্য গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। মোট কথা সুস্থ থাকতে হলে শরীরকে যে কোনো উপায়ে আর্দ্র রাখতে হবে। তাই খাবার তালিকায় পানির পাশাপাশি রাখুন অন্যান্য তরলও। সেটি হতে পারে ডাবের পানি, ফল, সবজির জুস, স্যুপ ইত্যাদি। এ ছাড়া পানীয় হিসাবে হার্বাল চা বা গ্রিন টি, লেবুচা, আদা চা, পুদিনা পাতার চা ইত্যাদি রাখা যেতে পারে যা আমাদের স্নায়ুকে শান্ত করবে। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

খাবার তালিকায় যোগ করুন দই

শরীরকে সুস্থ ও আর্দ্র রাখতে দই এর কোনো বিকল্প নেই। প্রোবায়োটিকের ভালো উৎস হলো দই। এটি শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। এটি স্বাদের চেয়েও বেশি উপকারী। এটি ক্যালসিয়ামেরও ভালো উৎস। প্রতিদিন যদি দুপুরে খাওয়ার পর কিছুটা দই খাওয়া যায় তবে হজমে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এর কারণ হলো, দই হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে বেশি স্বাদের জন্য প্রতিদিন মিষ্টি দই খেলে হবে না। খেতে হবে টকদই। সবচেয়ে ভালো হয় বাড়িতে তৈরি করে নিতে পারলে।

গরমে আর্দ্র থাকতে সালাদ রাখুন

স্বাস্থ্যকর খাবারের মাঝে সালাদ অন্যতম। বিভিন্ন কাঁচা সবজি বা ফল দিয়ে তৈরি সালাদ খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি উপকারী। শুধু এক ধরনের সালাদ না খেয়ে তাতে ভিন্নতা আনতে কখনো কখনো সালাদের সঙ্গে যোগ করুন মুরগির মাংস, নানা ধরনের বাদাম কিংবা ছোলা, চিংড়ি ইত্যাদি। ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফোলেট সমৃদ্ধ লেটুসও রাখতে পারেন সালাদে। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পুদিনাও শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে।

প্রতিদিন সবজি রাখুন

শীতকালের মতো গরমকালেও কিন্তু নানা ধরনের মৌসুমি সবজি পাওয়া যায় বাজারে। সেসব সবজি প্রতিদিন খেতে হবে। বেশিরভাগ সবজিতে থাকে পর্যাপ্ত পানি। যার ফলে সেসব সবজি খেলে গরমে পানির ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা যায়। এ সময় প্রতিদিন মিষ্টিকুমড়া, লাউ, বরবটি, পুঁইশাক, পালংশাক, কাঁচাকলা, বেগুন, টমেটো ইত্যাদি খেতে পারেন। পাশাপাশি রাখতে পারেন তেতো সবজি। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে করলা খাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। তেতো খাবার আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সবজিতে থাকা ভিটামিন ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, মিনারেল এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

প্রক্রিয়াজাত খাবারকে না বলুন

প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে সবারই ভালো লাগে কিন্তু এগুলো নিয়মিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও উপকারী নয়। এ জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এ ধরনের খাবারগুলোতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য এমন কিছু উপাদান যোগ করা হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। গরমের সময়ে এ জাতীয় খাবার খেলে তা শরীরে অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন তাজা ও টাটকা খাবার খেতে হবে।

ফল খান নিয়মিত

এ সময় সুস্থ থাকতে আরও খেতে হবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু, জাম্বুরা, আমড়া, আমলকী, কমলালেবু, পাকা পেঁপে, তরমুজ, পেয়ারা ইত্যাদি। এগুলো আমাদের ইউনিটি বাড়াতে সাহায্য করবে।

খাবারে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন

প্রতিদিনের খাবারে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, পনির, ডালজাতীয় খাবার। কারণ এসব খাবারে থাকা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়ামজাতীয় উপাদান যেমন আমাদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে সেই সঙ্গে শরীরকে রাখবে সুস্থ। ভুনা বা শুকনো খাবারের পরিবর্তে সবজির সঙ্গে ঝোলের তরকারি খেতে হবে।

বাইরের খাবার ও তেলেভাজা খাদ্য এড়িয়ে চলুন

ডুবো তেলে ভাজা মচমচে খাবার, অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ ধরনের খাবার খেলে পেটে নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মিষ্টি খাবারের বদলে মধু খেতে পারেন। শর্করাজাতীয় খাবার খেলে তার সঙ্গে সমন্বয় করে খেতে হবে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। গরমে অনেকেই রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর শরবত, জুস ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে বাইরের কোনো কিছু না খেয়ে সম্ভব হলে বা সঙ্গে খাবার নিয়ে সেটি খাওয়াই উত্তম। এ সময় প্রতিদিন নিয়মিত শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটি করুন যা আপনার বিপাকক্রিয়া ও রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করবে। এ সময় রোদের তেজ প্রখর থাকে বলে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন। নয়তো রোদের কারণে অনেক সময় হিটস্ট্রোকের ভয় থাকে। বাইরে বের হলে অবশ্যই সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।

ডায়েটিশিয়ান অ্যান্ড ইনচার্জ, পারসোনাহেলথ, ধানমণ্ডি, ঢাকা

খাদ্যাভ্যাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম