|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বসন্ত শেষের পথে। এরপর আসছে চৈত্র। আর চৈত্র মানেই গ্রীষ্মের আগমন ও গ্রীষ্ম মানেই গরম শুরু। এ ছাড়া ইট-কংক্রিটের এ নগরে গাছগাছালি তুলনামূলক কম। সে জন্য নগরের দাবাদহ শোষণের অনুষঙ্গও কম। সে কারণে নাগরিকদের গ্রীষ্মের সময় আরামের জন্য ব্যবহার করতে হয় নানা অনুষঙ্গ। এর মধ্যে আরামদায়ক পোশাক অন্যতম।
আড়ংয়ের ফ্যাশন ডিজাইনার হাসান বলেন, আরামের জন্য গরমের সময় সুতি কাপড়ের পোশাক পরার জন্য আমরা পরামর্শ দিই। এ ছাড়া খুব বেশি ডিজাইন করা বা রংচঙা পোশাক না পরে হালকা মেজাজের ডিজাইন বা রঙের পোশাক পরাটা স্বস্তিদায়ক। আর এ সময়ে টাইট-ফিট না পরে একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরাটা স্বস্তিদায়ক। তবে ফ্যাশনের বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে। আরামের জন্য ফ্যাশন বিসর্জন দেওয়ার পক্ষেও নই। হ্যাঁ, সুতির পাশাপাশি সাদা কাপড়ের পোশাক এ সময়ের জন্য ভালো। কারণ, সাদা কাপড়ে তাপ কম লাগে।
অফিসে বা কর্মস্থলে পুরুষরা এ সময়ে কমবেশি সবাই সুতি, গ্যাবার্ডিন বা ডেনিমের আরামদায়ক প্যান্ট পরেন। তবে বাসায় বা ঘুরতে-ফিরতে বা শপিং করতে বের হলে অনেকেই আবার এ সময়ে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টকে বেছে নেন। মূলত গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতেই থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। আর এ সময়ের জন্য বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ডও নানা ধরনের প্যান্ট বাজারে এনেছে। অনেকে স্বস্তির জন্য হাফহাতা শার্ট পরেন। সাদা কাপড়ের শার্ট গ্রীষ্মের জন্য আরামদায়ক। প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট বা পলো-শার্টও পরছেন। ফ্যাশনব্র্যান্ডগুলো সে জন্য এ সময়ে নানা নকশার টি-শার্ট ও পলো-শার্টও বাজারে এনেছে।
ফ্যাশন ডিজাইনাররা জানান, আরামদায়ক পোশাক হিসেবে টি-শার্ট বা পলো-শার্টের জুড়ি নেই। বিশেষ করে ফ্যাশন সচেতন তরুণদের কাছে এ সময়ে টি-শার্ট বা পোলো শার্ট ব্যাপক পছন্দের। কারণ, একই টি-শার্ট বা পলো-শার্ট পরা যায় জিন্স, গ্যাবার্ডিন বা অন্য কাপড়ের প্যান্টের সঙ্গে। আবার জুতার ক্ষেত্রেও টি-শার্ট বা পলো-শার্টের সঙ্গে মানিয়ে পরা যায় যে কোনো জুতা। অন্যদিকে টি-শার্ট বা পলো-শার্ট গায়ে দেওয়ার আগে যদি এর রং ও নকশাটা একটু নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়, তবে টি-শার্ট বা পলো-শার্ট গায়ে দিয়ে অফিসও করা যাবে, যাওয়া যাবে বিভিন্ন পার্টিতেও। টি-শার্ট বা পলো-শার্ট কিনতে হবে নিজের বয়স ও পেশার সঙ্গে মানিয়ে। একটু বয়স্করাও টি-শার্ট বা পলো-শার্ট পরতে পারেন। সে জন্য তাদের রং নির্বাচন করা উচিত একটু হালকা মেজাজের। ভালো হয় বয়স্করা যদি একরঙের হালকা টি-শার্ট বা পলো-শার্ট পরেন। আর তরুণরা পরতে পারেন একটু রঙিন ও সঙ্গে মানানসই প্যান্ট ও জুতা। এ ছাড়া টি-শার্ট বা পলো-শার্ট পরে ইচ্ছা করলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যাওয়া যেতে পারে। সে জন্য অনুষ্ঠানের ধরন ও অনুষ্ঠানের অতিথির ধরন বুঝে টি-শার্ট বা পলো-শার্ট পরা উচিত।
অন্যদিকে নারীরা এ সময়ের জন্য বেছে নেন সুতি জাতীয় কাপড়ের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, ফতুয়া, কুর্তি ইত্যাদি। ফ্যাশন ডিজাইনাররা জানান, এ সময়ে খুব বেশি ফিটিং পোশাক না পরে হালকা ঢিলেঢালা পোশাক স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।
এ সময়ের উপযোগী পোশাক পেতে আসতে পারেন দেশি দশের ফ্যাশন হাউজগুলোতে। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউজ লা-রিভ, ক্যাটস আই, জেন্টল পার্ক, আর্টিজ্যান, মেঘসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে এ সময়ের উপযোগী শার্ট, পলো-শার্ট, টি-শার্ট, শাড়ি, ফতুয়া, টপস, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি ইত্যাদি মিলবে।
গ্রীষ্মের দাবদাহের সঙ্গে জীবনযাপনেও বাড়ে নানা অস্বস্তি। সে জন্য গরমে কী খাব, কী পরব- এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। এ সময়ে রোগবালাইও বেশি দেখা দেয়। অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান বলেন, গরমের সময় মানুষের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয় ও এ সময়ে পানিবাহিত রোগবালাই বাড়ে। এ সময়ে বিশুদ্ধ পানি বেশি বেশি পান করা জরুরি। বিশেষ করে হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিকের মতো রোগীর জন্য এ সময়ে পানি পান করা বেশি জরুরি। এ সময়ে ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড জ্বরের মতো বিভিন্ন রোগও দেখা দেয় পানিবাহিত কারণে। শুধু খাবার ও পানি বিশুদ্ধ হলেই হবে না, হাত পরিষ্কার, খাবার প্লেট, গ্লাস, জগ, মগ বা পাত্রও পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। এ সময়ে সর্দি বা কাশির মতো রোগও দেখা দেয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অন্যদিকে গরমের সময় বেশি পরিশ্রম করলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আর গরমের সময় তরল খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ সময়ে চোখের স্বস্তি পেতে মাঝেমধ্যে চোখে ঠান্ডা পানির ঝাঁপটা দিতে পারেন। আর শরীরের স্বস্তি পেতে সাধারণ পানি দিয়ে গোসল করা ভালো। শরীর ও পোশাকের পাশাপাশি গরমে ত্বকচর্চার বিষয়টি নজরে আনতে হবে। গরমে হালকা মেকআপ করা ভালো। কারণ গরমে ঘর থেকে বের হলেই রোদের মধ্যে পড়তে হয়। আর বেশি গরমে মেকআপ ঠিক থাকে না। হালকা মেকআপের পাশাপাশি হালকা গহনা পরা ভালো। এ সময়ে ঠোঁটে রং দেওয়ার ক্ষেত্রে হালকা রঙের কথা ভাবুন। বিশেষ করে ন্যাচারাল কালার ব্যবহার করলেই ভালো। অন্যদিকে এ সময়ে চুল না খুলে খোঁপা বেঁধে বা বেনুনি করে রাখাটাই ভালো। যারা পারফিউম ব্যবহার করেন তারা গরমে ভারি বা কড়া গন্ধের পারফিউম মাখবেন না। এটা আপনার গরমের অস্বস্তিকে আরও বাড়াবে। ভালো হয় হালকা গন্ধের পারফিউম ব্যবহার। আর বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ক্রিম মেখে বের হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। চোখের আরামের জন্য এ সময় সানগ্লাস ব্যবহার অনেকটা স্বস্তিদায়ক। যতটা পারা যায় সূর্যের আলো এড়িয়ে চুলন। পারলে ছাতা ব্যবহার করুন। অন্যদিকে পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে এ সময়ে খোলামেলা বা আরামদায়ক জুতা পরতে পারেন।
