Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

নীলাম্বরি সাজে

Icon

কেয়া আমান

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাম্বরি সাজে

ফাইল ছবি

‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে

জানি নে, জানি নে

কিছুতে কেন যে মন লাগে না’

রবিঠাকুরের গানের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে প্রকৃতিতে এসেছে বর্ষা। বর্ষায় খাল-বিল এখন ভরে রয়েছে থই থই পানিতে। কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তো কখনো ঝুম বৃষ্টিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে চারপাশ। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সুগন্ধি ফুলেরা। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কদম, কেয়া, কামিনী, বেলি, বকুলের গন্ধ। বর্ষাকালে ময়ূর নাচন তাল তোলে সবার মনে। বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দে সে তাল মেলায় নতুন মাত্রা। যা আনমনা করে তোলে যে কাউকে।

শুধু উপভোগ নয়, জীবন ধারায় মুখরিত বর্ষার পরিবর্তনকে ঠাঁই দিয়ে এ ঋতুতে মেতে থাকতে পারেন বর্ষা বিলাসেও। বৃষ্টি এমনই। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ হৃদয়কে প্রেমার্দ্র করে তুলবেই। কবি লিখেছেন-

‘এমন দিনে তারে বলা যায়/এমন ঘনঘোর বরিষায়/এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে’

বর্ষণমুখর প্রকৃতি মুগ্ধ করলেও ঘরে বসে বর্ষাযাপন করার সুযোগ ক’জনের ভাগ্যে জোটে। প্রয়োজনের তাগিদে বর্ষাকে সঙ্গী করেই যেতে হয় ঘরের বাইরে। তাই বলে বর্ষাবিলাস করবেন না তা কি হয়! এ সময় কর্মব্যস্ততা কিংবা উদযাপন বা আয়োজনে কিংবা নিছক শখেও নিজেকে সাজতে পারেন বর্ষার সাজ নীলাম্বরী সাজে। কেন? কারণ বর্ষা মানে সবুজ জলের সন্তরণে ভেসে উঠা নীল আকাশের ছবি। বর্ষায় নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরে উঠলে সেখানে দেখা যায় নীলের প্রলেপ। এমন দিনে নীল সাজের চেয়ে মোহনীয় সাজপোশাক আর কি বা হতে পারে! বর্ষায় আকাশে মেঘ বা বাতাসে বৃষ্টির ঘনঘটা থাকুক আর না থাকুক ঝমঝম নির্লিপ্ত বর্ষা ঝরা দিনে একফালি নীল বুঝি না হলেই নয়। তাই বর্ষাবরণ অনুষ্ঠানের পোশাক হিসাবে নীল রং অনেক বছর ধরেই চলে আসছে। কবি-সাহিত্যিকরা তাদের গল্প-কবিতা-উপন্যাসে বর্ষার রংকে নীল বলেই বর্ণনা করে গেছেন।

 

বর্ষা প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

‘দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ,

পরো দেহ ঘেরি মেঘনীল বেশ।’

বর্ষা এলেই ফ্যাশনধারা ভেসে বেড়ায় নীলের ভেলায়। বর্ষা এলেই দেশের নামকরা সব ফ্যাশন হাউজগুলো নীল পোশাকের ভাঁজ খুলতে শুরু করে। ঘননীল বর্ষায় আপনিও সাজতে পারেন নীলাম্বরি সাজে। এমন দিনে কর্ম ক্ষেত্রে কিংবা ঘুরে বেড়াতে সাজপোশাকে রাখতে পারেন নীলের ছোঁয়া। এ সময় দৈনন্দিন চলাফেরায় নীল রং সাদামাটা টিউনিক, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তিও মন ছুঁয়ে যায়। আকাশি জিন্সের সঙ্গে পরতে পারেন সাদা-নীলের কম্বিনেশনের কোনো টপস।

বর্ষার শাড়ির আলাদা আবেদন রয়েছে। এ সময় শখের বশেও অনেকে শাড়ি পরেন। শখের শাড়ি কিংবা নিত্যদিনের শাড়িতে বেছে নিতে পারেন নীলের বিভিন্ন শেড। তাতে থাকতে পারে লতা-পাতা, ফুল আর প্রকৃতি। এখন ফুলেল মোটিফের জর্জেট শাড়ি বেশ জনপ্রিয়। নীল রঙা ফুলেল প্রিন্টের একটি জর্জেট শাড়ি বৃষ্টিবাদলা দিনের জন্য পারফেক্ট। আবার শাড়িটা নীল একরঙা পরলে তার সঙ্গে বেছে নিতে পারেন সাদার ওপর ফ্লোরাল মোটিফের বা মাল্টিকালার প্রিন্টের ব্লাউজ। হাতে সাদা-নীল রেশমি চুড়ি। সঙ্গে খোলা চুলে নিশ্চিন্তে ঘুরতে বেরিয়ে পরতে পারেন গাছগাছালি ঘেরা সুন্দর কোনো জায়গায়। সাদা জমিনে নীল দিগন্ত ছোঁয়া আঁচলের শাড়ির আবেদনই ভিন্ন কিছু। এর সঙ্গে হাফ হাতা কিংবা হাতাকাটা ব্লাউজের নকশাটি ফুলেল মোটিফের হলে চলতি ঋতুর সঙ্গে ভালো মানাবে। দেখতেও স্টাইলিশ লাগবে। একরঙা ব্লাউজও পরা যেতে পারে শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে। শুধু মেয়েরা নয়, বর্ষায় নীল সাজে সাজতে পারেন ছেলেরাও। এ দিনে নীল পাঞ্জাবিতে মানাবে যে কাউকে। নীল জিন্সের সঙ্গে পরতে পারেন হালকা শেডের নীল ফতুয়া, টি-শার্ট, হাফশার্ট। এখন তো ফুলেল ট্রেন্ড। নীল রঙের শার্টে খেলা করতে দিতে পারেন বর্ণিল বুনো ফুলদের। ধূসর, সবুজ, সাদা, আকাশি শার্টে থাকতে পারে গাঢ় নীল ফুলেল প্রিন্ট।

আবার নীলের মাঝেও আনতে পারেন ভিন্নতা। কারণ এ নীলের মাঝেই রয়েছে কত শত বৈচিত্র্য। গাঢ় নীল, হালকা নীল, আসমানি নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীল, রয়েল নীল আরও কত কী! বর্ষার প্রকৃতিতে নীল নানাভাবে ফুটে ওঠে। এ যেমন যখন ভারী মেঘ দেখা যায় তখন আকাশ ধারণ করে ধূসর নীল। সন্ধ্যায় আকাশে মেঘ সরে গেলে দেখা মেলে একটু গাঢ় নীলের। আর বর্ষার আকাশের রংটাই তো আকাশ নীল। তাই শুধু গাঢ় নীল নয়, বর্ষায় পরতে পারেন হালকা নীল, কালচে নীল, ধূসর, ছাই রংসহ নীলের বিভিন্ন শেডের পোশাক। এ নীলকে সাজাতে ব্যবহার হয় মানানসই আরও অনেক রং। শাড়ির নীল জমিনে থাকতে পারে ফিরোজা, সাদা, ছাই, সোনালি, সবুজ, হলুদ, গোলাপির নান্দনিক ডিজাইন। টাই-ডাই, হ্যান্ডপেইন্টের ফ্লোরাল মোটিফের পোশাক ভালো লাগবে। সুতি আরামদায়ক হলেও বৃষ্টি-বাদলায় দৈনন্দিন চলাফেরায় এবং অনুষ্ঠানের জন্য সুবিধাজনক হবে শিফন, জর্জেট, সিল্ক, মসলিন, হাফসিল্কের পোশাক। কারণ এ ধরনের কাপড়ে কাদাপানি লাগলেও চট করে শুকিয়ে যায়।

ঘন নীল বর্ষায় সাজতে পারেন নীল সাজেও। বর্ষার সাজে রাখতে পারেন নীল কাজল, আইলাইনার আর একটি নীল টিপ। তবে নীল পোশাকের সঙ্গে দিনের সাজে গাঢ় নীল আইশ্যাডো না লাগিয়ে ধূসর, আকাশি আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। রাতে চোখ সাজাতে পারেন নীল-সবুজ, নীল-কালো স্মোকিআই লুকে। দিনের সাজে আইশ্যাডো না লাগিয়ে শুধু নীল মাশকারা, আইলাইনার এবং রঙিন কাজল দিয়েও সাজতে পারেন। এখন সাজে ওয়াটার প্রুফ প্রসাধন ব্যবহার করুন। নয়তো হঠাৎ বৃষ্টিতে পুরো সাজটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নীলাম্বরী সাজ পোশাকের সঙ্গে বিশেষ করে নীল রঙের পোশাকের সঙ্গে মুক্তার গহনা অনেক বেশি মাধুর্য এনে দেয়। ভালো লাগবে মেটাল, কাচ, মাটি, পুঁতি, বিডসের গহনাও। নীল সাজের সঙ্গে অনেক বেশি গহনা না পরে বরং গলায় একটি লম্বা মালা, কানে ছোট দুল অথবা টপ পরুন। এতেই ফুটে উঠবে স্নিগ্ধতা।

চুলের সাজে ভালো লাগবে খোঁপা, বেণি সবকিছুই। যদিও বর্ষায় খোলা চুলের সৌন্দর্যই যেন ভিন্ন কিছু। এ সময় বেণি, খোঁপা কিংবা খোলা যেভাবেই চুল সাজিয়ে নিন না কেন, চুলে গুঁজে দিন বর্ষার ফুল। চুল সাজাতে চুলে গুঁজতে পারেন কলাবতী, অলকানন্দা, স্টাইডার লিলি, টগর, গন্ধরাজ, কাঁঠালি চাঁপাসহ বর্ষার বিভিন্ন ফুল। চুল খোলা রেখে কানের পাশে শুধু একটি কদম ফুল গুঁজে দিলেও দেখতে অসাধারণ লাগবে। গাঢ় নীল শাড়ি বা কামিজের সঙ্গে হাতে কিংবা চুলের খোঁপায় শুধু বেলি বা রজনিগন্ধা ফুলের মালা কিংবা অ্যারোমেটিক জুঁইয়ের ফুলসহ একটি লতানো ডাল পেঁচিয়েও সাজে আনতে পারেন ভিন্নতা। আবার হাঁটতে হাঁটতে চলতি পথের ধার থেকে কোনো বুনো ফুল উঠিয়ে চুলে গুঁজে দিলে সাধারণ সাজেও আপনি হয়ে উঠবেন বর্ষারানি।

রবি ঠাকুর বর্ষা নীল শাড়ি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম