দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা
গাজী মুনছুর আজিজ
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
৫০ বছর আগের ছোট্ট চারা গাছটি যেমন আজ বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। তেমনি আমরাও নানা ক্ষেত্রে নিজেদের আজ প্রতিষ্ঠিত করেছি। কেবল প্রতিষ্ঠিত নয়, বিশ্বের বুকে আমরা জানান দিয়েছি নিজেদের অর্জনের কথা, গৌরবের কথা। আর এর সব কিছুই হয়েছে আমাদের দেশপ্রেমের জন্য,
দেশকে ভালোবাসার জন্য। লিখেছেন-গাজী মুনছুর আজিজ
এবারের বিজয় দিবস বাংলাদেশের জন্য অন্যরকম আনন্দের। কারণ এবার বাংলাদেশ উদযাপন করছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। এক এক করে বিজয়ের ৫০ বছর অতিক্রম করেছি আমরা। কেবল ৫০ বছর অতিক্রমই করেছি আমরা স্বাধীন দেশে, এমন নয়। এ ৫০ বছরে আমরা অর্জন করেছি আরও অনেক অনেক গৌরব। ৫০ বছর আগের ছোট্ট চারা গাছটি যেমন আজ বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। তেমনই আমরাও নানা ক্ষেত্রে নিজেদের আজ প্রতিষ্ঠিত করেছি। কেবল প্রতিষ্ঠিত নয়, বিশ্বের বুকে আমরা জানান দিয়েছি নিজেদের অর্জনের কথা, গৌরবের কথা। আর এর সব কিছুই হয়েছে আমাদের দেশপ্রেমের জন্য, দেশকে ভালোবাসার জন্য।
১৯৭১ সালে আমরা দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছি। সেই দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণায় এখনো আমরা এগিয়ে চলছি। কাজ করছি দেশের জন্য, জাতির জন্য। ফলে আমরা আজ বিশ্বের বুকে নিজেদের রোল মডেল হিসাবে পরিণত হয়েছি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম ৫টি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে একটি। অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা বাংলাদেশ উত্তরণ করেছে। এ ছাড়া ৫০ বছরে বাংলাদেশের বিপুল সফলতা ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, শান্তি ও উন্নয়নের প্রশংসা করছেন জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা। বিশ্বের বড় নেতারা বা অর্থনীতিবিদরা এখন বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের এক রোল মডেল হিসাবে অভিহিত করছেন। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, অসমতা হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার কথাও জানতে পারছে সারা বিশ্ব। অন্যদিকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদারতার কথা আজ সারা দুনিয়ার মানুষ জানেন।
স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অবস্থা ছিল, সেখান থেকে আজ আমরা এগিয়েছি অনেক দূর। দাঁড়িয়েছি নিজেদের পায়ে।
নতুন নতুন উদ্ভাবনীর ফলে আমরা আমাদের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছি। ফলে খাদ্যে বাংলাদেশ এখন অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। পোশাকশিল্পের অগ্রগতির ফলে এ শিল্প এখন দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। অন্যদিকে চা-শিল্পের মাধ্যমেও আমাদের অর্থনীতির অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আবার বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিটেন্সে আমাদের অর্থনীতি চলছে দুর্বার গতিতে। খেলাধুলায়ও আমরা এগিয়েছি অনেক দূর। প্রতিনিয়তই আমরা যোগ করছি নানা অর্জন।
এ সবের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগতি আমাদের প্রযুক্তি খাতে। প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশকে এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বলা হয়। প্রযুক্তির অগ্রগতির জন্য কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতি, সরকারি-বেসরকারি সেবা সবই এখন মানুষ পাচ্ছেন ঘরে বসে। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের আইসিটি রপ্তানি এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২৫ সালে তা ৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া হবে। বিগত ১২ বছরে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ লাখ মানুষের। ২০২৫ সালে তা হবে ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। অনলাইন ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার ও এটিএম কার্ড ব্যবহারে দেশে ই-কমার্সেরও ব্যাপক প্রসার ঘটাচ্ছে। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ই-কমার্সের আকার ছিল ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা করোনা মহামারিতে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২৩ সাল নাগাদ দেশীয় ই-কমার্সের বাজার ২৫ হাজার কোটিতে পৌঁছাতে পারে আশাবাদ।
প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের চিকিৎসা খাতকে পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর করা হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে। সরকারি সব সেবাও হবে প্রযুক্তিনির্ভর। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বসেছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব। এ ছাড়া সরকার সারা দেশে হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করছে। এরই মধ্যে কিছু পার্ক চালুও হয়েছে। সরকারের আশা, ২০৩০ সাল নাগাদ এসব হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক থেকে এক হাজার কোটি ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি করা যাবে।
কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতি বা প্রযুক্তির পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য বা সংস্কৃতিতেও আমরা এগোচ্ছি সমান তালে। আর এর সবই হচ্ছে আমাদের দেশ প্রেমের অনুপ্রেরণায়।
