Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ভ্রমণ

মহেশখালীর শুটিং ব্রিজে...

Icon

লেখা ও ছবি : সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেলা দ্বিপ্রহর আমি আর আমার ভ্রমণসঙ্গী আছি মহেশখালী। আজ আমাদের দ্বিতীয় দিন কক্সবাজার ভ্রমণের। সকালবেলা আসি ৬নং ঘাটে। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে নৌযানের জন্য। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। বেশ কায়দা করে স্পিডবোটে উঠে বসলাম। লোকভর্তি হওয়া মাত্র ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে চলল স্পিডবোট। উঁচু-নিচু ঢেউয়ের সঙ্গে দুলুনি। বুকটা যেন ধক করে ওঠে। সেকি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। খানিকটা পানি গায়ে ছিটিয়ে এসে সতেজতা ফিরে আনল। বাঁকখালী নদীর নীল জলের মাঝ দিয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে আমাদের স্পিডবোটটি। দূরে সবুজ বন, নদীর পাড়ে বসেছে সাদা বকের মেলা, মাথার ওপরে উড়ছে গাঙচিল, মোবাইল আর পকেটে রাখা যায় না। এবার যন্ত্রটি বের করতেই হবে, না হলে তো হাতছাড়া হবে বাঁকখালী নদী পাড়ের মোহনীয় রূপ। আমরা ২০ মিনিট পর মহেশখালী দ্বীপে পৌঁছালাম। এই সেই একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। যার কথা বইয়ে পড়েছি। যা আজ চোখের সামনে। আলোড়িত হচ্ছি মনে-প্রাণে। দ্বীপটি সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি ও ধলধাট নিয়ে সগৌরবে আকর্ষণীয় পর্যটক কেন্দ্র। এর মোট আয়তন ৩৮৮.৫০ বর্গ কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার আমি দূরে। পাড়ি দিতে হয় বাঁকখালী নদীর কিছু অংশ এবং বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেল। ১৯৫৯ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটা দ্বীপ সৃষ্টি হয়। এটিই মহেশখালী দ্বীপ। সমুদ্রজয় করে কিছু সময় আগে এসে উপস্থিত হয়েছি মহেশখালী জেটিতে। যেহেতু এবার প্রথমবারের মতো মহেশখালীতে পদার্পণ করেছি তাই স্পিডবোটের ভ্রমণসঙ্গী কাছে কীভাবে মহেশখালী ঘুরে দেখা যায় তার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। তিনিই একটি অটোরিকশা ঠিক করে দিলেন। আমরা ত্রিচক্র জানে করে এগিয়ে চলছি নতুন ভ্রমণ গন্তব্য পানে। আমাদের ত্রিচক্র যানের কাণ্ডারীকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় চলছি আমরা, প্রথমে উনি বললেন শুটিং ব্রিজে নিয়ে যাচ্ছেন। এ জায়গায় অনেক সিনেমার দৃশ্য ধারণ হয়েছে। মিষ্টি রোদের আভা গায়ে মেখে আমরা এগিয়ে চলছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এসে পৌঁছালাম শুটিং ব্রিজের কাছে। শুটিং ব্রিজে দাঁড়িয়ে ম্যানগ্রোভ বনের মাঝে আছি মনে হলো। ব্রিজে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় অগণিত ঢেউয়ের বিপুল সমাহার। দূরে অস্পষ্ট পাহাড়। আর নিচের ম্যানগ্রোভ বন সৌন্দর্যকে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ত্রিচক্র যান রেখে পদব্রজে এগিয়ে চললাম। সবুজ বন, নীল জলে সাজানো সারিসারি সাম্পান। প্যারাবনবেষ্টিত মহেশখালী জেটি দেখতে খুব ভালো লাগছিল। কক্সবাজার থেকে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপে যেতে প্যারাবন দেখতে পাওয়া যায়। সমুদ্র চর আর বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ প্যারাবনের ভেতর প্রবেশ করলেই মুগ্ধ না হয়ে ফেরার সুযোগ নেই। আমরা শুটিং ব্রিজের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছালাম। বাতাসের তীব্রতা আর উথাল-পাথাল ঢেউয়ের শব্দ শিহরণ দিয়ে গেল। খুব উপভোগ করছিলাম সময়টা।

যেভাবে যাবেন : কক্সবাজার শহরের যে কোনো জায়গা থেকে মহেশখালী যাওয়ার বাঁকখালী ঘাট (৬ নম্বর ঘাট) চলে আসুন। তারপর লোকাল ট্রলার বা স্পিডবোটে ৭০-১২০ টাকা ভাড়ায় মহেশখালী আসবেন। আর অন্য পথে যেতে আপনাকে চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে চকরিয়া এসে বদরখালী হয়ে মহেশখালী আসতে হবে। এ পথে মহেশখালী আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম