ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষা মানুষকে সভ্য করে। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে এসে অনেক শিক্ষার্থীই এখন উল্টাপথের পথিক হয়ে যাচ্ছেন। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ও মারধরসহ হত্যা মামলায় পর্যন্ত জড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র ছিনতাইয়ের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায় ধরা পড়ে সোনালি জীবনকে কলুষিত করেছেন অপরাধের অন্ধকারে।
গত ১৪ জানুয়ারি ছিনতাইয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত এমন ১৩ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেয়া এ শাস্তিও ‘শিক্ষা’ দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমদ শান্তকে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি বালির ট্রাকের চাকা নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন ভোরে চাকা নষ্ট অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই ট্রাকের চালক ও সহকারীর কাছে গিয়ে চাঁদা দাবি করে আল আমিন ও শান্ত। নগদ টাকা না পাওয়ায় ট্রাক চালক ও সহকারীকে মারধর ও ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনভিত্তিক অর্থ আদান-প্রদানের একটি পরিষেবার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হস্তান্তর করতে বাধ্য করে।
এতেও ক্ষান্ত না হয়ে আরও বেশি টাকা দাবি করে তারা। পরে ট্রাকের একজন ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে একটু দূরে সরে গিয়ে দায়িত্বরত এক পুলিশকে ঘটনা জানায়। পুলিশ ওই দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ট্রাকসংশ্লিষ্ট সোহেল রানা শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করলে (মামলা নম্বর ৩৩) পুলিশ ওই দুই শিক্ষার্থীকে আদালতে চালান করে। রোববার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান যুগান্তরকে জানিয়েছেন তারা এখন জেলহাজতে আছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় প্রতিদিনই ঘুরতে আসেন নানা পেশা, মত, বর্ণ, ধর্ম ও বয়সের মানুষ। আগত মানুষের মধ্যে ছিনতাইকারীদের টার্গেট থাকে প্রেমিক যুগলদের প্রতি। সন্ধ্যা নামার পরপরই ক্যাম্পাসের ফুলার রোড, কলা ভবন এলাকা ও কার্জন হল প্রাঙ্গণে কয়েকজনের চক্র প্রেমিক যুগলদের ভয় দেখিয়ে টাকা, মুঠোফোন ও দামি অলংকার ছিনিয়ে নেয়। ‘বহিরাগত’ ট্যাগ দিয়ে ছিনতাইকারীরা তাদের মারধর করে রক্তাক্ত পর্যন্তও করেন। তবে এসব ঘটনায় নানা সময়ে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা হলেও ঘটনার পুনরাবৃত্তি থামান যায়নি এখনও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছিনতাইয়ের ঘটনাকে আশকারা দেয়া হয়। ধরা পড়লে থানা পুলিশের হাত থেকে মুক্ত করে আনার অভয়ও থাকে ছিনতাইকারীদের। তবে ঘটনা বেশি জানাজানি হয়ে গেলে তাদের বহিষ্কার বা সাময়িক কিছু শাস্তি দেয়া হয়। আর ছিনতাইকারীদের শিকার বেশিরভাগ সময় ক্যাম্পাসের বহিরাগত ব্যক্তি হওয়ায় তারা ভয়ে খুব বেশি দূর আগান না।
শিক্ষার্থীরা কেন ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিন কারণকে চিহ্নিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ছিনতাই বলে আসলে কোনো অপরাধ নেই। আমাদের দেশের দণ্ডবিধিতে এটিকে দস্যুতা বলা হয়েছে। একটি সময় ধারণা করা হতো, যারা ছিনতাই করে তারা হয়তো মধ্যবিত্ত কিংবা নিুমধ্যবিত্ত। সংসার চালানোর জন্য বা নেশার খরচ জোগানোর জন্য ছিনতাই করে। তবে দেখা গেছে, সাধারণত এ তিন কারণে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। তা হল- রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা বা উঠতি নেতারা ছিনতাই করে। তারা এ ধরনের অপরাধে জড়ায়, কারণ যারা রাজনীতি করে তারা দলকে পোষার জন্য বা ছোট ভাইদের (অনুসারী) খাওয়ানোর জন্য টাকা-পয়সার দরকার হয়।
যা নিজে দিতে না পারলে তখন এ অবৈধ পথ বেছে নেয়। দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের সমস্যা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত। মাদকাসক্তরা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে বেশি জড়িত থাকে। কারণ মাদক কিনতে টাকার প্রয়োজন পড়ে। যারা প্রতিদিন ইয়াবা বা অন্যান্য মাদক সেবন করে তাদের প্রতিদিন মাদকের খরচ জোগাতে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়ায়।
তৃতীয়ত, আমাদের ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসে। তাদের মধ্যে অনেকের ঠিকমতো খাওয়ারও টাকা থাকে না। পরিবার তাদের টাকা দিতে পারে না। এ কারণে তাদের কেউ কেউ অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণের কথা আমরা শুনিনি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার থেকেও শুনিনি।
অপরাধবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, একটি লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তাদের কাছে রাষ্ট্রের একটি প্রত্যাশা থাকে, সমাজের প্রত্যাশা থাকে এবং পরিবারের বড় ধরনের প্রত্যাশা থাকে। পরিবার ছেড়ে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে এসে বিভিন্ন ধরনের সংঘের সঙ্গে জড়িত হয়। নানা ধরনের ছাত্রের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটে। সঙ্গীদের দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যারা ছিনতাইকর্মে জড়ায় তাদের বড় অংশ আর্থিকভাবে অসচ্ছল বা মাদকাসক্ত হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গেও অনেকে তাল মেলাতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ে। তখন লক্ষ্যচ্যুত হয়ে তারা নানা ধরনের অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আবার পাস করে বেরিয়ে চাকরির বাজারে কুলাতে না পেরে বেকারত্বে ভোগে অনেকে। সে সময়ও অনেকে ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়ায়।
খাতা, কলম, বই ছেড়ে ছিনতাইয়ের পথ ধরা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী যুগান্তরকে বলেন, তারা পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে, নাকি তারা মানসিকভাবে অপরাধপ্রবণ, নাকি কেউ তাদের এ দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকগুলো পরিস্থিতিই ধারণা করা যায়। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলা যাবে না। একটি কথা বলা যায়, কারণ থাকতেই পারে কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছে জাতি এটি আশা করে না।
আর্থিক কারণে কেউ এ পথে যাওয়ার আগে আমাদের বললে সেটি সমাধান করা যায়। তাদের দিয়ে কেউ করাচ্ছে- গোপনে তথ্য দিলে আমরা সেটির ব্যবস্থা নিতে পারি। এ পর্যন্ত যারাই ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধরা পড়েছে তাদের বলব, যারা তাদের এ পথে এনেছে তারা যেন তাদের নাম প্রকাশ করে দেয়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষা মানুষকে সভ্য করে। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে এসে অনেক শিক্ষার্থীই এখন উল্টাপথের পথিক হয়ে যাচ্ছেন। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ও মারধরসহ হত্যা মামলায় পর্যন্ত জড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র ছিনতাইয়ের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায় ধরা পড়ে সোনালি জীবনকে কলুষিত করেছেন অপরাধের অন্ধকারে।
গত ১৪ জানুয়ারি ছিনতাইয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত এমন ১৩ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেয়া এ শাস্তিও ‘শিক্ষা’ দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমদ শান্তকে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি বালির ট্রাকের চাকা নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন ভোরে চাকা নষ্ট অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই ট্রাকের চালক ও সহকারীর কাছে গিয়ে চাঁদা দাবি করে আল আমিন ও শান্ত। নগদ টাকা না পাওয়ায় ট্রাক চালক ও সহকারীকে মারধর ও ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনভিত্তিক অর্থ আদান-প্রদানের একটি পরিষেবার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হস্তান্তর করতে বাধ্য করে।
এতেও ক্ষান্ত না হয়ে আরও বেশি টাকা দাবি করে তারা। পরে ট্রাকের একজন ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে একটু দূরে সরে গিয়ে দায়িত্বরত এক পুলিশকে ঘটনা জানায়। পুলিশ ওই দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ট্রাকসংশ্লিষ্ট সোহেল রানা শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করলে (মামলা নম্বর ৩৩) পুলিশ ওই দুই শিক্ষার্থীকে আদালতে চালান করে। রোববার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান যুগান্তরকে জানিয়েছেন তারা এখন জেলহাজতে আছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় প্রতিদিনই ঘুরতে আসেন নানা পেশা, মত, বর্ণ, ধর্ম ও বয়সের মানুষ। আগত মানুষের মধ্যে ছিনতাইকারীদের টার্গেট থাকে প্রেমিক যুগলদের প্রতি। সন্ধ্যা নামার পরপরই ক্যাম্পাসের ফুলার রোড, কলা ভবন এলাকা ও কার্জন হল প্রাঙ্গণে কয়েকজনের চক্র প্রেমিক যুগলদের ভয় দেখিয়ে টাকা, মুঠোফোন ও দামি অলংকার ছিনিয়ে নেয়। ‘বহিরাগত’ ট্যাগ দিয়ে ছিনতাইকারীরা তাদের মারধর করে রক্তাক্ত পর্যন্তও করেন। তবে এসব ঘটনায় নানা সময়ে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা হলেও ঘটনার পুনরাবৃত্তি থামান যায়নি এখনও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছিনতাইয়ের ঘটনাকে আশকারা দেয়া হয়। ধরা পড়লে থানা পুলিশের হাত থেকে মুক্ত করে আনার অভয়ও থাকে ছিনতাইকারীদের। তবে ঘটনা বেশি জানাজানি হয়ে গেলে তাদের বহিষ্কার বা সাময়িক কিছু শাস্তি দেয়া হয়। আর ছিনতাইকারীদের শিকার বেশিরভাগ সময় ক্যাম্পাসের বহিরাগত ব্যক্তি হওয়ায় তারা ভয়ে খুব বেশি দূর আগান না।
শিক্ষার্থীরা কেন ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিন কারণকে চিহ্নিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ছিনতাই বলে আসলে কোনো অপরাধ নেই। আমাদের দেশের দণ্ডবিধিতে এটিকে দস্যুতা বলা হয়েছে। একটি সময় ধারণা করা হতো, যারা ছিনতাই করে তারা হয়তো মধ্যবিত্ত কিংবা নিুমধ্যবিত্ত। সংসার চালানোর জন্য বা নেশার খরচ জোগানোর জন্য ছিনতাই করে। তবে দেখা গেছে, সাধারণত এ তিন কারণে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। তা হল- রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা বা উঠতি নেতারা ছিনতাই করে। তারা এ ধরনের অপরাধে জড়ায়, কারণ যারা রাজনীতি করে তারা দলকে পোষার জন্য বা ছোট ভাইদের (অনুসারী) খাওয়ানোর জন্য টাকা-পয়সার দরকার হয়।
যা নিজে দিতে না পারলে তখন এ অবৈধ পথ বেছে নেয়। দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের সমস্যা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত। মাদকাসক্তরা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে বেশি জড়িত থাকে। কারণ মাদক কিনতে টাকার প্রয়োজন পড়ে। যারা প্রতিদিন ইয়াবা বা অন্যান্য মাদক সেবন করে তাদের প্রতিদিন মাদকের খরচ জোগাতে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়ায়।
তৃতীয়ত, আমাদের ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসে। তাদের মধ্যে অনেকের ঠিকমতো খাওয়ারও টাকা থাকে না। পরিবার তাদের টাকা দিতে পারে না। এ কারণে তাদের কেউ কেউ অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণের কথা আমরা শুনিনি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার থেকেও শুনিনি।
অপরাধবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, একটি লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তাদের কাছে রাষ্ট্রের একটি প্রত্যাশা থাকে, সমাজের প্রত্যাশা থাকে এবং পরিবারের বড় ধরনের প্রত্যাশা থাকে। পরিবার ছেড়ে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে এসে বিভিন্ন ধরনের সংঘের সঙ্গে জড়িত হয়। নানা ধরনের ছাত্রের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটে। সঙ্গীদের দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যারা ছিনতাইকর্মে জড়ায় তাদের বড় অংশ আর্থিকভাবে অসচ্ছল বা মাদকাসক্ত হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গেও অনেকে তাল মেলাতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ে। তখন লক্ষ্যচ্যুত হয়ে তারা নানা ধরনের অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আবার পাস করে বেরিয়ে চাকরির বাজারে কুলাতে না পেরে বেকারত্বে ভোগে অনেকে। সে সময়ও অনেকে ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়ায়।
খাতা, কলম, বই ছেড়ে ছিনতাইয়ের পথ ধরা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী যুগান্তরকে বলেন, তারা পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে, নাকি তারা মানসিকভাবে অপরাধপ্রবণ, নাকি কেউ তাদের এ দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকগুলো পরিস্থিতিই ধারণা করা যায়। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলা যাবে না। একটি কথা বলা যায়, কারণ থাকতেই পারে কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছে জাতি এটি আশা করে না।
আর্থিক কারণে কেউ এ পথে যাওয়ার আগে আমাদের বললে সেটি সমাধান করা যায়। তাদের দিয়ে কেউ করাচ্ছে- গোপনে তথ্য দিলে আমরা সেটির ব্যবস্থা নিতে পারি। এ পর্যন্ত যারাই ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধরা পড়েছে তাদের বলব, যারা তাদের এ পথে এনেছে তারা যেন তাদের নাম প্রকাশ করে দেয়।