|
ফলো করুন |
|
|---|---|
হাঁপানি রোগকে ১-৫টি ক্রম অনুসারে সাজানো হয়েছে। এক একটি পর্যায়ের চিকিৎসা এক এক ধরনের। কোনো রোগী কোন পর্যায় নিয়ে চিকিৎসকের নিকট গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। চিকিৎসক তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে এবং পিক ফ্লো-মিটার ব্যবহার করে বুঝতে পারেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাধিক ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। সেদিক বিবেচনা করে হাঁপানি রোগের ওষুধগুলো প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
শ্বাসকষ্ট লাঘব বা মোচনকারী ওষুধ (রিলিভার) : সালবিউটামল, লিভসালবিউটামল, অ্যামাইনোফাইলিন, থিওফাইলিন, টারবুটালিন ইত্যাদি। সালবিউটামলে অনেকের বুক ধরফর বা অস্থিরতা দেখা দেয়, হাত-পা কাঁপতে পারে। সে ক্ষেত্রে লিভসালবিউটামল কম করে। এল্টিকলিনার্জিক-ইপ্রাট্রপিয়াম, ট্রায়োট্রপিয়াম, অক্সিট্রপিয়াম ইত্যাদি। রিলিভার ওষুধে অনেকের আহারে অরুচি, বমি ভাব, বমি, পেটের মধ্যে অস্বস্তি, মাথাব্যথা, মাংসের মধ্যে কামড়ানো, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এমন হলে ব্যবহৃত ওষুধের মাত্রা কমাতে হয়। ছোটখাটো সমস্যা দু’চারদিন পরে এমনিতেই চলে যায়।
নিবারিত, নিবৃত করা, প্রতিরোধ করা (প্রিভেন্টার) : আইসিএস-(ইনহেলকর্টি-কোস্টেরয়েড), ক্রমোন, জেনথিন, লিউকোট্রিন ইত্যাদি তবে আইসিএসই বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন : বেকলোমিথাসন, বুডিসোনাইড, ফ্লুটিকাসন, সিকলিসোনাইড, বিটামিথাসন, হাইড্রোকোর্টিসন, প্রেডনিসোলন ইত্যাদি।
রক্ষাকারক (প্রটেকটর) : সালমেটেরল, বাম্বুটেরল, ফর্মটেল এবং লং অ্যাকটিং সালবিউটামল বা লং অ্যাকটিং থিওফাইলিন ইত্যাদি বর্তমানে বলা হচ্ছে উপমশ নিয়ন্ত্রক। আমাদের দেশের প্রায় সবার মধ্যেই বদ্ধমূল ধারণা-ইনহেলার হাঁপানি রোগের শেষ চিকিৎসা কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইনহেলার অ্যাজমা রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা।
ইনহেলার দিয়ে হাঁপানি রোগের চিকিৎসা শুরু হওয়া উত্তম।
যে কোনো মুখে খাওয়ার ওষুধেরই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে বরং ইনহেলারে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। এমন কি গর্ভবতী মহিলাদেরও ইনহেলার ব্যবহার নিরাপদ। যদিও ইনহেলার (গ্যাস)গুলো তুলনামূলকভাবে দামি তথাপিও এটাই চিকিৎসা। এগুলো ব্যবহার করা অতি উত্তম।
শুধু মুখে খাবার ওষুধ দিয়ে অনেক সময় গরিব রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়, তবে বলা হয়েছে এটি কোনো অবস্থায়ই অ্যাজমা রোগ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প চিকিৎসা নয়। যেমন ব্রংকডাইলেটর-সালবিউটামল ২-৪ মি. গ্রাম প্রতিদিন ৩-৪ বার সেবন করতে হবে বা লিভসালবিউমাল ১-২ মি. গ্রাম ২-৩ বার সেবন করতে হবে। চলবে।
অ্যামাইনো ফাইলিন ট্যাবলেট-১০০ মি. গ্রাম ১-২টা ২-৩ বার চলবে।
লং অ্যাকটিং বাম্বুটেরল-১০-২০ মি. গ্রাম রোজ রাতে খেতে হবে, চলবে।
যদি উপরের চিকিৎসা চলাকালীন সময় হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে কয়েকদিনের জন্য স্টেরয়েড ট্যাবলেট প্রেডনিসোলন ৫-২০ মি. গ্রাম প্রতিদিন সকালে নাস্তার পরে সেবন করতে হবে। উপরের চিকিৎসা চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত। অনেক রোগী পাওয়া যায় সারা বছরই সুস্থ থাকে। শীতকাল শুরু হলেই হাঁপানি শুরু হয়। এ ধরনের হাঁপানির রোগকে বলা হয় সিজনাল অ্যাজমা। তাদের ক্ষেত্রে রিলিভার, প্রিভেন্টার, প্রটেকটর, তিন প্রকার ওষুধই শীত শুরু হওয়ার আগেই শুরু করতে হয়। শীত চলে যাওয়ার পরে ওষুধগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে বন্ধ করতে হয়।
অ্যাজমা এমনই একটি রোগ যার উপসর্গমুক্ত থাকতে এক সময় একাধিক প্রকার ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। ওষুধ চলা অবস্থায় রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। আবার রোগী ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকতে পারেন। হাঁপানির সর্বোত্তম চিকিৎসা চলা অবস্থায় যদি রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, সেটাকে ফ্রাটাল অ্যাজমা বলা হয়, তখন রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে হয়। কারণ ওই রোগীর নেবুলাইজেশন, স্টেরয়েড ইনজেকশন, অক্সিজেন, ক্ষেত্রবিশেষে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়।
যারা সালবিউটামল সহ্য করতে পারেন না, নেবুলাইজেশনের সময় বিকল্প হিসেবে ফ্রুসেমাইড ইনজেকশন দেয়া হয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের যেমন মিষ্টি খাওয়া নিষেধ হঠাৎ করে কোনো কারণে রক্তে, গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে তৎক্ষণাত মিষ্টি খেতে হবে কারণ তখন এটাই তার জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। তদ্রূপ হাঁপানি যদি দ্রুত বৃদ্ধি পায় সেক্ষেত্রে স্টেরয়েড সঙ্গে সঙ্গে সেবন করা হলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
