Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

কানের পর্দা জোড়ার সার্জারি

Icon

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

টিমপ্যানোপ্লাস্টি

মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে কানের পর্দা জোড়া লাগানোকে টিমপ্যানোপ্লাস্টি বলা হয়। এর মাধ্যমে মধ্য কর্ণের অন্যান্য সমস্যা; যেমন- ইনফেকশন, কানে কম শোনা ইত্যাদির এক সঙ্গে সমাধান করা হয়ে থাকে। কানের পর্দার বিভিন্ন সমস্যা ভেদে ছয় ধরনের টিমপ্যানোপ্লাস্টি অপারেশন হয়ে থাকে। এ অপারেশনের ফলে কানের শ্রবণশক্তি বৃদ্ধি পায়। বড় কথা হল কান পাকা রোগ সম্পূর্ণরূপে দূর হয়; ফলে কান শুকনা থাকে এবং ঘন ঘন কান পাকার জন্য শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয় না।

অপারেশন

এ পদ্ধতি উন্নত দেশে অবশ করে করা হয় থাকে, অজ্ঞান করা হয় না। ফলে অজ্ঞান করাজনিত কোনো সমস্যার উদ্ভব হয় না এবং বৃদ্ধ বয়সেও যারা হার্ট, ফুসফুস ও কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদেরও এ অপারেশন সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব। অবশ করে করার ফলে অপারেশনের পরিবেশগত সুবিধা বেশি পাওয়া যায় এবং অপারেশনজনিত জটিলতা পরিহার করা যায়। সর্বোপরি শ্রবণশক্তির উন্নতি অপারেশনের সময়েই নির্ণয় করা সম্ভব। বিশ্বে শুধু বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই অজ্ঞান করে এ অপারেশন করা হয়। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি যারা অপারেশনের ভয়জনিত দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন তাদের ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন করা হয়। খুব কম ক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয়ে থাকে।

এটা মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে করা হয় এবং খুব সূক্ষ্ম অপারেশন। রক্তপাত হয় না বললেই চলে এবং এমনভাবে করা হয়, কান কাটার কোনো দাগ পড়ে না অথবা কানের আকারের বড় কোনো পরিবর্তন হয় না। অপারেশন করে রোগী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাসায় চলে যেতে পারে এবং কোনো ক্ষেত্রেই রোগীকে একদিনের বেশি হাসপাতালে রাখা হয় না।

অপারেশন পরবর্তী করণীয়

অপারেশন পরবর্তী চলাফেরার কোনো বিধিনিষেধ নেই এবং দু-একদিনের মধ্যে রোগী তার স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারেন। অপারেশনের পর ছয় সপ্তাহ প্লেনে ট্রাভেল করা নিষেধ। কান পাকা অসুখ শুরু হয় নাক এবং সাইনাসের সমস্যা থেকে। অনেক সময় ছোটদের গলা বা টনসিলের ইনফেকশনের কারণে হতে পারে। পর্দা ঠিকমতো জোড়া লাগলে সাধারণ সর্দি-কাশিতে কানের পর্দার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়; কিন্তু প্রচণ্ড সর্দি-কাশি, দিনের পর দিন নাক, কান-গলা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে থাকলে এরকম সমস্যা বেশি চলতে দেয়া উচিত নয়; কারণ এটা কানের পর্দার ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। এরকম অবস্থা হলে শিগগিরই বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

অপারেশনের সাফল্য নির্ভর করে সার্জনের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর। যেহেতু এটা একটা মাইক্রোসার্জারি সেহেতু পাকা কানে এটা করা সম্ভব নয়। এ অপারেশন করার সময় কান অবশ্যই ভালোভাবে শুকনা থাকতে হবে। পূর্বে আমরা কানকে কমপক্ষে তিন মাস ইনফেকশনমুক্ত রাখতাম অপারেশন করার আগে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে কান কয়েক সপ্তাহ শুকনা রাখলেই অপারেশন করা সম্ভব। কিছু কিছু রোগীর কান অতিরিক্ত মাত্রায় ঘামে- এটা ঠিক কান পাকা বা কানের ইনফেকশন নয়। এ ধরনের রোগীর কান কোনো সময়ই আপাতদৃষ্টিতে শুকনা হয় না। কানের এ মাইক্রোসার্জারি সাধারণত লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে শুধু কানকে অবশ করে করা হয়ে থাকে। কাজেই অ্যানেসথেসিয়া দিলে কোনো জটিলতা হওয়ার আশংকা থাকে না। শুধু বাচ্চাদের অজ্ঞান করে এ অপারেশন করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক যেসব রোগী অতিমাত্রায় টেনশনে ভুগে থাকেন তাদের আমরা লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার সঙ্গে কিছু ঘুমের ওষুধ দিয়ে থাকি যাতে অপারেশনের সময় তারা ঘুমিয়ে থাকেন এবং টেনশন কম হয়। অপারেশনের পরে শুধু ভারি কাজ আমরা ১০-১৫ দিন পরিহার করে চলতে বলি।

কান পাকার সঙ্গে আরেকটি কথা না বললেই নয়। কানে অনেক সময় কোলেস্টিয়েটমা নামে একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। যদিও এটা টিউমার না তবুও টিউমারের মতো আচরণ করে। এটা আকারে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং কান সব সময় পাকা থাকে। এ রোগটি দ্রুতগতিতে কানের শোনার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে এবং এ রোগীদের প্রায়ই মাথা ঘুরায়। অনেক সময় এটা কান থেকে মস্তিষ্কের ভেতর চলে যায় এবং মগজে মারাত্মক ইনফেকশন করে ফেলতে পারে- এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদিও সাধারণ কান পাকায় এ রকম জটিলতা তেমন হয় না; কিন্তু কোলেস্টিয়েটমা রোগে এটা খুবই সাধারণ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম