শিশুর স্থূলতা
ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমাদের দেশের বাবা-মা’দের সাধারণ চিন্তা-ভাবনা হল, বাচ্চা যত নাদুসনুদুস হবে সে তত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। অধিকাংশ সময় মাত্রাধিক ওজন বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের মোটা হয়ে যাওয়াকে ইংরেজি পরিভাষায় চাইল্ডহুড ওবেসিটি বলা হয়ে থাকে। বাচ্চার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়ে, তবে তা সঠিক অনুপাতে বাড়ছে কিনা সে দিকে খেয়াল রাখাটা অত্যন্ত জরুরি।
কীভাবে বুঝবেন আপনার বাচ্চা মোটা বা স্থূল হয়ে যাচ্ছে
নিয়মিত বাচ্চার দৈহিক ওজন মাপুন। প্রত্যেক বয়সের জন্য একটা কাক্সিক্ষত দৈহিক ওজন আছে। যদি আপনার বাচ্চার ওজন তার জন্য নির্দিষ্ট মাপের থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয়, তা হলে বুঝবেন বাচ্চার ওবেসিটির সমস্যা রয়েছে।
বেসাল মেটাবলিক পার্সেন্টাইল চার্ট ব্যবহার করেও ওবেসিটি মাপা যায়। আপনার বাচ্চার মেটাবলিক ইনডেক্স যদি ৯৫ পার্সেন্টাইলের ওপরে হয়, তাহলে জানবেন আপনার বাচ্চা ওবিস গ্রুপে পড়ে।
কারণ
বাচ্চারা আজকাল খুব একটা খেলাধুলা ছোটাছুটির সুযোগ পায় না। বাড়িতে বসে ইন্টারনেটে কার্টুন, অরিগেমিবা ভিডিও গেম খেলা বা টেলিভিশন দেখাটাই তাদের কাছে প্রধান আর্কষণ। এ রকম স্লথ আর আয়েসি জীবনযাপনের জন্য বাচ্চাদের ওজন বাড়তে থাকে এবং ক্রমশ তারা ওবেসিটির দিকে এগোয়। আর শুয়ে-বসে টিভি দেখার পাশাপাশি চিপস, চকোলেট, ফ্রেঞ্চফ্রাই, বেভারিজ আর পপকর্নের মতো মুখরোচক খাবার গ্রহণ এখন রীতিমতো শিশুদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এক দিকে অধিক ক্যালরি গ্রহণ, অন্যদিকে খেলাধুলার প্রতি অনীহা- সব মিলিয়ে ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে।
বাচ্চারা সাধারণত বাবা-মাকে দেখে অনেক কিছু শেখে। আজকের দিনে বাবা-মায়েরা অজ্ঞতা, কর্মব্যস্ততা যে কারণেই হোক শারীরিক শ্রম আর ব্যায়ামের ব্যাপারে উদাসীন, ফলে শিশুদেরও তারা সেভাবে গড়ে তুলছেন না বা তুলতে পারছেন না। পরিবার ছোট থাকে বিধায় তারা একটু বেশি শিশুদের তাগিদ দিয়ে থাকেন। বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো হবে এই ভেবে অনেক সময় তারা বেশি করে বাচ্চাকে খাওয়াতে থাকেন।
চাইল্ডহুড ওবেসিটির বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ছোটবেলায় যদি আপনার বাচ্চা অতিরিক্ত মোটা হয়, বড় হয়ে ওজন আরও বাড়তে পারে, ফলে নানা রকম অসুখ যেমন- করোনারি হার্ট ডিসিজ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অতিরিক্ত ওজনের ফলে বাচ্চা সহজেই ক্লান্ত এবং উদ্যমহীন হয়ে পড়ে। কখনও কখনও অন্য বাচ্চারাও নানা রকম স্থূলকায় বাচ্চাদের টিজ করে। ফলে ওদের মধ্যে হীনম্মন্যতা বোধ বা মানসিক চাপ দেখা যায়।
যেভাবে ওবেসিটি প্রতিহত করবেন
* ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ান, এতে ওবেস হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
* বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করুন। সুষম খাদ্যের ওপর নজর দিন। খেয়াল রাখবেন যেন খাদ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল পরিমাণ মতো থাকে।
* টিভি দেখতে দেখতে বাচ্চার চিপস, সফট ড্রিংক খাওয়ার অভ্যাসকে প্রশ্রয় দেবেন না। আউটডোর গেমস খেলতে বাচ্চাকে উৎসাহ দিন।
* বাড়িতে জাঙ্কফুড খাওয়ার অভ্যাস কমান। বাচ্চাকে বাড়ির খাবার সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে খেতে দিন যাতে বাইরের খাবারের প্রতি আর্কষণ কমে যায়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, এনআইসিভিডি
