Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

মলদ্বারে চুলকানি ও প্রতিকার

Icon

অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসকরা মলদ্বারের চুলকানিকে একটি বিশেষ রোগ হিসেবে গণ্য করে আসছেন। মলদ্বারে স্নায়ুতন্ত্রের প্রাচুর্যের কারণে সম্ভবত এটি বিভিন্ন ধরনের উত্তেজকের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর চিকিৎসা করা সম্ভব, তবে তা নির্ভর করে রোগীর সঠিক ইতিহাস নেয়া, বিশেষ করে খাবারের এবং বিশেষ ধরনের আধুনিক ও অত্যাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর।

এ রোগে চুলকানি সাধারণত মলদ্বারে হয়ে থাকে। কখনও কখনও যৌনাঙ্গে চুলকানি দেখা যায়। কিন্তু ব্যাপারটি কখনও সারা শরীরে হয় না। এটি বেশি অনুভূত হয় রাতে। এমনকি চুলকাতে চুলকাতে রোগীর ঘুম ভেঙে যায়। এর ফলে নখের আঁচড়ে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

কী কী রোগে এমন হয় : যদিও এটি বিভিন্ন বিশেষ বিশেষ রোগে হতে পারে তবুও অনেক ক্ষেত্রেই মলদ্বারের কোনো রোগ পাওয়া যায় না। মলদ্বার ও মলাশয়ের সমন্বয়ের ভারসাম্যহীনতা দায়ী বলে মনে করা হয়। এ রোগে মলদ্বারের ত্বকে বিশেষ ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পাইলস, ফিসার, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ায় মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে। মলদ্বারের সমস্যা ছাড়াও অন্য রোগে মলদ্বারের চুলকানি হতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস, অ্যালার্জি, ছত্রাক সংক্রমণ, কৃমি ইত্যাদি। সোরিয়াসিস নামক ত্বকের রোগে এবং মলদ্বারের চর্ম স্নায়ুপ্রদাহ নামক বিশেষ ধরনের রোগে মারাত্মক রকমের চুলকানি হতে পারে। এ সাংঘাতিক চুলকানির কারণে মলদ্বারের চামড়া ছিড়ে যেতে পারে।

বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা : মলাশয় ও মলদ্বারের মাংসপেশির মধ্যে ফাংশনাল সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। মলদ্বারের ভেতরে কোলনস্কপি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে ত্বকের হিসটোপ্যাথলজি ও ছত্রাক (ফাংগাস) পরীক্ষা করা যেতে পারে।

চিকিৎসা : বিভিন্ন ধরনের পথ্য, পেটেন্ট ওষুধ ও লোশন ব্যবহারে কমবেশি উপকার পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশনও ব্যবহার করা হয়। কোনো কোনো সার্জন মলদ্বারের ত্বক কেটে ফেলে নতুন ত্বক লাগিয়েও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন।

রোগীর খাবার তালিকা সমন্ধে সঠিক ইতিহাস নেয়া জরুরি। এভাবে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী খাদ্যের আইটেমটি চিহ্নিত করতে পারলে চিকিৎসা করা সহজ হয়। যেসব খাবারের কারণে এ রোগ হতে পারে সেগুলো হচ্ছে- চা, কফি, মদ, বিয়ার, টমেটো, পনির ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধূমপান এ রোগের কারণ হতে পারে। এ খাবারগুলো কীভাবে এ রোগ সৃষ্টি করে তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এ খাবারগুলো বিশেষ বিশেষ রোগীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মিউকাস নিঃসরণ ঘটায় এবং মলে অম্লত্বের পরিবর্তন ঘটায়, যার কারণে চুলকানি হয়।

বিভিন্ন ওষুধ ও পথ্যের সাহায্যে কোষ্ঠ ব্যবস্থাপনা এমন করতে হবে যাতে রোগী স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করতে পারে। যেসব রোগী মল আটকে রাখতে পারে না অথবা মাঝে মধ্যে মল চুইয়ে পড়ে তাদের জন্য বিশেষ ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। রোগীর মলদ্বারে মল চুইয়ে পড়ছে কিন্তু তিনি ব্যাপারটি খেয়াল করছেন না। এ রোগে মলদ্বারের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা জরুরি। সাবান, স্যাভলন ব্যবহার প্রয়োজন নেই। মলদ্বার জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব নয় এবং তা প্রয়োজনও নেই। যাদের টয়লেট পেপারে এলার্জি আছে তারা সেটি বর্জন করবেন। মলদ্বারের ভেতর বিশেষ পদ্ধতিতে ওয়াশ দেয়ায় উপকার পাওয়া যায়। যাদের মলদ্বারে বেশি নিঃসরণ হয় তাদের যথাযথ ড্রেসিং পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া প্রয়োজন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম