Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

করোনাভাইরাসের গতি প্রকৃতি ও আচরণ

Icon

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বজুড়ে যে করোনাভাইরাসের বিস্তার দ্রুতগতিতে হচ্ছে, একি অনুসরণ করবে ফ্লু সিজনকেও? এসেছিল যেভাবে সেভাবেই কি চলে যাবে? তা এখনও অনিশ্চিত, উচ্চ আবহাওয়াতে এদের আচরণ এখনও বোঝা দুষ্কর।

করোনাভাইরাস পরিবারে আছে একডজন ভাইরাস, কেবল সাতটি ভাইরাস আক্রমণ করে মানুষকে। এদের চারটি ভাইরাস মৃদুঠাণ্ডা সর্দি কফ করে, অন্যগুলো নতুন, একটু মারাত্মক বটে আর পশু থেকে মানুষে সম্প্রচার ঘটে এদের। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ নতুন ভাইরাসের নাম দিয়েছেন SARS-Cov-2 আর রোগের নাম দিয়েছে COVID-19।

আবহাওয়া উচ্চ হতে শুরু করলে ভাইরাসের নিষ্ক্রমণ ঘটবে এমন ধারণা লোভনীয় তবে নিশ্চিত নয়।

যেসব ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বা মৃদু ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ করে এগুলো আবহাওয়া উষ্ণ হলে দমে যায়, বিজ্ঞানীরা এদের বলে ‘ঋতুকালীন ভাইরাস’। তবে SARS-COV-2 এমন আচরণ করবে তা বেশ অনিশ্চিত। আবহাওয়ার পরিবর্তনে এটি কীভাবে সাড়া দেবে এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও কিছু বলতে পারছেন না।

ভাইরাস সম্বন্ধে আমাদের জানা সীমিত হলেও যতটুকু জানি,

মৌলিকভাবে ফ্লু ও করোনাভাইরাসদের আমরা ভাবতে পারি প্রোটিনও লিপিডের সমষ্টি মাত্র। শারীরিক সংস্পর্শে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায় এমন সব স্থান যেখানে অসুস্থ লোকের হাঁচি, কফ থেকে নিষ্কৃত শ্বাসযন্ত্রের ড্রপলেট পড়ে, সেগুলো স্পর্শ করলেও ছড়ায়।

মানুষের শরীরের বাইরে এলে ভাইরাসকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে ফেলে বাইরের বল, যেমন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের এলকোহল ভেঙে ফেলে সেই প্রোটিন ও চর্বিকে আর ভাইরাস হয়ে পড়ে অস্থিতিশীল।

কিছু ভাইরাস ঋতুকালীন যেমন ফ্লু সিজন, অক্টোবর থেকে মার্চ, এপ্রিল এর কারণ কী এ নিয়েও বৈজ্ঞানিকদের নানা তত্ত্ব রয়েছে।

করোনাভাইরাসের ব্যাপারে কী ঘটতে পারে

করোনা আর ফ্লু ভাইরাস দুটোই শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস হলেও SARS-COV-2 সম্বন্ধে জানা গেছে কম যাতে পূর্বানুমান করা যায় যে, এরাও হবে ঋতুকালীন।

বিজ্ঞানীরা SARS ও MERS এর প্রাদুর্ভাব পর্যালোচনা করছেন। SARS এর প্রাদুর্ভাব ঘটে ছিল ২০০২ সালের শেষ দিকে, করোনাভাইরাসের সঙ্গে এর ডিএনএ ৯০ শতাংশ মিল। SARS শুরু হল নভেম্বরে, থাকল জুলাই পর্যন্ত।

MERS শুরু হয় সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে সৌদি আরবে, যেখানে তাপমাত্রা বেশ উচ্চ। SARS মতো এটি সংবরণ করা যায়নি, মাঝে মাঝে দু-একটি সংক্রমণ দৃষ্টি হয়। নতুন করোনাভাইরাস মধ্যপ্রাচ্যে ঘুরছে, ইরানে ও ইউনাইটেড আরব আমিরাতে।

MERS এর ক্ষেত্রে ঋতুকালীন বৈশিষ্ট্য তেমন দেখা যায়নি। মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক স্টুয়ার্ট ওয়েস্টন যার ল্যাবে ভাইরাসের টিকা ও চিকিৎসা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে, তা বছরখানেকের আগে সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।

কী হবে তাহলে এরপর?

হার্ভার্ডের এপিডেমিওলজিস্ট মার্ক লিপমিক বলেন, কোনো জলবায়ু পরিবর্তন ভাইরাস বিস্তারে বাধা দেবে তা মনে হয় না, COVID-19 এখন সারা বিশ্বে বিস্তৃত। ভাইরাসটি ফ্লু ভাইরাসের মতো হলে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থা শোচনীয় হতো।

লন্ডন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনও হাইজিনের ডা. ডেভিড হেইম্যান বলেন, তাই এ রকম পূর্বানুমান প্রমাণ ছাড়া করা ঠিক নয়। তাই তারা জোর দিচ্ছেন ভাইরাস অবরোধ ও নিশ্চিহ্ন করার দিকে।

সিডিসির মতে, মানুষের মধ্যে যখন উপসর্গ দেখা যায় তখন এরা হয় বেশি ছোঁয়াচে আর সংক্রমণক্ষম। সংক্রমিত লোকের সংখ্যানুমান কম, কারণ যারা সংক্রমিত হন এদের সবার গুরুতর অবস্থা হয় না। অনেকে বলেন, ভাইরাসটি স্থানিক সংক্রমণে পর্যবসিত হতে পারে। বারবার হাত ধোয়া, কফ বা হাঁচি যারা দিচ্ছেন এদের থেকে দূরে থাকা, অসুস্থ হলে চিকিৎসকের চিকিৎসা নেয়া।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম