করোনা রোগীদের হৃদরোগ ও জটিলতা
অধ্যাপক ডা. তৌফিকুর রহমান ফারুক
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কোভিড-১৯ সরাসরি হৃদযন্ত্রে আক্রমণ করতে পারে এবং মৃত্যু ও বেশি অসুস্থতার আশংকা বাড়ায়। কোভিড-১৯ হৃদযন্ত্রকে বিভিন্নভাবে আক্রান্ত করতে পারে-
* হৃদযন্ত্রের পেশীর মারাত্মক প্রদাহ, ফলে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে বা হার্ট ফেইলিউরের মাত্রা বাড়াতে পারে
* হৃদযন্ত্রের মাংসপেশীর প্রদাহ ও একই সঙ্গে হৃদযন্ত্রের বাইরের আবরণী পেরিকার্ডিয়ামের প্রদাহ
* হার্ট অ্যাট্যাক
* হার্ট ফেইলুর
* হৃদযন্ত্রের জীবন সংহারী অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
* কোভিড-১৯ এ ব্যবহৃত ওষুধ যেমন হাইড্রক্সি ক্লোরকুইন ও এজিথ্রোমাইসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসিজিতে খারাপ ধরনের পরিবর্তন বা কিউটি সেগমেন্ট দীর্ঘায়িত হওয়া অথবা হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হওয়া
* ভাইরাস কর্তৃক হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে কোনো ব্লক ফেটে হার্ট অ্যাট্যাক হওয়া
কখনও কখনও হৃদরোগের এসব উপসর্গ কোভিড-১৯ দ্বারা নিউমোনিয়ার উপসর্গের সঙ্গে মিলে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে হৃদরোগ সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তা পৃথক করা যায়। কার্ডিয়াক এনজাইমগুলো যেমন ট্রোপোনিন আই বা সিকেএমবির পরিমাণ রক্তে বাড়তে পারে, হৃদযন্ত্রের মাংসপেশীর প্রদাহ বা হার্ট অ্যাট্যাকের কারণে।
ইসিজিতে যেসব পরিবর্তন পাওয়া যায় তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যেমন এসটি সেগমেন্ট ওপরে উঠে যাওয়া, সেক্ষেত্রে আমরা রোগীদের ক্যাথল্যাবে নিয়ে এনজিওগ্রাম করলে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের করোনারী ধমনিতে ব্লকের মাত্রা সামান্য বা অতাৎপর্যপূর্ণ তাই ধারণা করা হয় ইসিজিতে এ এসটি সেগমেন্ট পরিবর্তন পেরিকার্ডিয়ামের প্রদাহের জন্য হতে পারে, তাই ইসিজিতে এসটি সেগমেন্ট ওপরে উঠলেও রোগীকে ক্যাথল্যাবে নেয়ার আগে ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
টাইপ-১ হার্ট অ্যাট্যাকের ক্ষেত্রে যদি ক্যাথল্যাবের সব স্টাফের জন্য পুরোপুরি পিপিই পাওয়া যায় ও কোভিড-১৯ এর জন্য ডেডিকেটেড ক্যাথল্যাব পাওয়া যায় তবে রোগীকে প্রাইমারি পিসিআই অর্থাৎ এনজিওগ্রাম করে বন্ধ হৃদযন্ত্রের করোনারী ধমনি খুলে দিতে হবে। আর এসব ব্যবস্থা না থাকলে রোগীকে থ্রমবোলাইসড্ করতে হবে অর্থাৎ রোগীর রক্তনালিতে জমাট বাঁধা রক্তেরপিণ্ড গলানোর ওষুধ দিতে হবে।
পেরিকার্ডিয়াল প্রদাহের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহার সাবধানে করতে হবে, ইমিউন দশায় এটা লাভজনক কিন্তু ভাইরাল দশায় এটার ব্যবহার ক্ষতিকর।
হৃদযন্ত্রের মাংসপেশীর প্রদাহ ও হার্ট ফেইলুর হলে অক্সিজেন ব্যবহার করতে হবে, একমো ব্যবহারে তেমন লাভ নেই, কম মাত্রার রক্তচাপ বাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। স্টেরয়েড ব্যবহার সাবধানে করতে হবে অন্যথায় ভাইরাল দশা দীর্ঘায়িত হতে পারে।
হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ক্ষেত্রে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ও এজিথ্রোমাইসিন সাবধানে ব্যবহার করতে হবে, শুরু করার আগে ইসিজি করে দেখতে হবে কোনো এসটি সেগমেন্ট দীর্ঘায়িত আছে কিনা, প্রতিদিন ইসিজি করতে হবে এবং রক্তের পটাসিয়াম ৪-৪.৫ এর মধ্যে ও রক্তের ম্যাগনেশিয়াম ১ এর মতো রাখতে হবে।
তাই কোভিড-১৯ এ হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে উত্তম। এক্ষেত্রে প্রতিরোধের সবচেয়ে উত্তম হল রোগ নির্ণয়ের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরীক্ষা করতে হবে, এতে চিকিৎসাও তাড়াতাড়ি শুরু করা যাবে। যে রোগী যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যাবে তত বেশি জটিলতা এড়ানো যাবে।
হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার চিকিৎসার পাশাপশি কোভিড-১৯ এর প্রচলিত চিকিৎসাও চালাতে হবে।
কোভিড-১৯ এর প্রচলিত চিকিৎসা হল
* কোনো গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসা এখন পর্যন্ত নেই
* লোপিনাভির ২০০ মিলিগ্রাম ও রিটোনাভির ৫০ মিলিগ্রাম
* হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ও এজিথ্রোমাইসিন
* ইন্টারফেরন
* পুল্ড প্লাজমা
* স্টেরয়েড
* নন্ ইনভেসিভ হাই ফ্লো অক্সিজেন
* ভেন্টিলেটর
* একমো
* জ্বর বা কাশির জন্য ওষুধ (৮০ ভাগ ক্ষেত্রে সামান্য উপসর্গ ও ভালো হয়ে যাওয়া)
* টসিলিজুমাব, ফ্যাভিপ্রাভির, ইভারমেকটিন
* রোগ প্রতিরোধে প্রোফাইল্যাকটিক হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন
* ভ্যাকসিন
* এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হল-
ক. দ্রুত পরীক্ষা করা ও যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা
খ. আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন
গ. লকডাউন যদি কমুনিটি স্প্রেড বা ছড়িয়ে যায়
লেখক : মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা সার্ভিসেস, মালিবাগ, ঢাকা
