কোভিড-১৯ : দেহের প্রতিটি অঙ্গ আক্রমণকারী ঘাতক
ডা. এম সেলিম উজ্জামান
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কোভিড-১৯ প্রথম প্রকাশের পর থেকে এ রোগের অসুস্থতার বিস্তার সম্পর্কিত ক্ষমতার অনুমান আমাদের ছিল কম এবং ভ্রান্ত। এটি এখন স্পষ্ট যে কোভিড-১৯ কেবলমাত্র একটি শ্বাসকষ্টের রোগ নয়, তার চেয়েও বেশি গুরুতর।
এটি অন্যান্য ‘দুর্দান্ত অনুকারী’- অবস্থার মতো দেখা দিতে পারে। অন্যান্য ‘আক্রমণকারী ঘাতক’ রোগগুলোর মতো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাত হানে ও অসুস্থতা প্রকাশ পায়।
এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ (পেটেরপীড়া) করতে পারে যা কেবল ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যথা করে। এর লক্ষণগুলো ঠাণ্ডা বা ফ্লুর-মতো, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ছাড়াও আরও লক্ষণগুলোর মধ্যে লালচোখ, নাকের সর্দি, স্বাদ এবং ঘ্রাণশক্তি হ্রাস, পেশি ব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস, বমি বমি ভাব এবং বমি, ডায়রিয়া, পুরো শরীরের ফুসকুড়ি এবং ফোলাভাব এবং লালচে রঙের ক্ষুদ্র দাগও হতে পারে। যদিও ৮০-৮৫% রোগী হালকা থেকে মাঝারি সংক্রমণে ভোগেন।
সবাই আগে যেমন ভেবেছিল, এটি কেবল মাত্র জ্বর এবং কাশি, যা শ্বাসকষ্টের দিকে নিয়ে যায় কিন্তু আরও মারাত্মক সমস্যাগুলোর মধ্যে, হার্টের ছন্দ সমস্যা, হার্ট ফেলিওর, কিডনির গুরুতর ক্ষতি, মাথাব্যথা, খিঁচুনির পাশাপাশি বিভ্রান্তি, গিলাইন-ব্যারে সিন্ড্রোম (Guillain-Barre syndrome) এবং সংজ্ঞা হারানসহ রক্তে-শর্করা নিয়ন্ত্রণ সমস্যা দেখা যেতে পারে। তাতে রোগটি নির্ণয় করা অবিশ্বাস্যরকম কঠিন এবং চিকিৎসা করা আরও কঠিন। ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জোসেফ ভিনিট এমডি বলেছেন, ‘আমি কয়েক দশক এ বিষয় কাজ করে আসছি, এটি এমন একটি রোগ- বিস্তৃতি যা আমি আগে কখনই অন্য কোনো সংক্রমণে দেখতে পাইনি।’
কোভিড-১৯ কীভাবে আক্রমণ করে
ভাইরাসের কণাগুলো যখন আমাদের চোখ, নাক বা মুখের দিকে অবতরণ করে, তখন ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনগুলো আমাদের কোষ-পৃষ্ঠের এসিই-২ (ACE-2) নামে পরিচিত একটি নির্দিষ্ট রিসেপ্টারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে প্রবেশ করে। এসিই-২ (ACE-2) রিসেপ্টররা এমন একটি সংযোগ লক্ষ্য যা আমাদের শরীরজুড়ে বিভিন্ন অঙ্গগুলোতে পাওয়া যায়। একবার ভাইরাস প্রবেশের পরে, এটি দেহকোষকে একটি ভাইরাস কারখানায় পরিণত করে, নিজের কয়েক মিলিয়ন-মিলিয়ন ভাইরাল-কপি তৈরি করে- যা পরে শ্বাসক্রিয়া বা হাঁচি-কাশি মাধ্যমে অন্যদের সংক্রমিত করে।
প্রাথমিক শনাক্তকরণ এড়াতে, করোনাভাইরাসটি সংক্রমিত কোষগুলোকে ‘ইমিউন প্রতিক্রিয়ার’ সাহায্য আটকানোর জন্য একাধিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে। করোনাভাইরাসটি, ভাইরাস-আক্রমণে থাকা অবস্থায় কোষগুলো তৈরি করে এমন সংকেত যা প্রোটিনগুলো সরিয়ে দেয়। এটি সংক্রমিত কোষের ভেতরে অ্যান্টিভাইরাল-অনুশাসনও ধ্বংস করে। এটি আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার আগেই ভাইরাসটি নিজের ভাইরাল-কপি তৈরি করে এবং আশপাশের কোষগুলোকে আরও অনেক বেশি সংক্রমিত করে। এ-কারণেই ভাইরাসটি ‘জ্বরের মতো প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া’ শুরুর আগেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সরাসরি আক্রমণ
কখনও কোনো লক্ষণহীন (Asymptomatic or Pre-symtomatic) বা হালকা-লক্ষণ (mild-symtomatic) নিয়ে অনেক রোগীরা ভাইরাসটি আরও খারাপ হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন। এ সংক্রমিত ব্যক্তিদের প্রথম সংক্রমণ লক্ষণ স্থান কেবল উচ্চ শ্বাস-প্রশ্বাস নালিতে থাকতে পারে। কিন্তু দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে ভাইরাসটিকে ধ্বংস করতে না পারায় কারও কারও দেহে প্রবেশের পর ভাইরাল-কণাগুলো আরও গভীরে চলে যায়। ভাইরাসটি সেখান থেকে কয়েকটা পথ ছড়িয়ে পড়ে যেমন, ফুসফুসে সংক্রমণ অথবা পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ ও সংক্রমণ বা উভয়ের সংমিশ্রণে সংক্রমণ করে।
ডা. ভিনেটজ বলেছেন, ‘স্পষ্টতই একটি শ্বাসযন্ত্রের সিনড্রোম রয়েছে এবং যার কারণে অসুস্থরা হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিছু লোক গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডায়রিয়ায়-অসুস্থতা লক্ষণ দেখা দেয়, কিছুটা পেটে ব্যথা হয় যা শ্বাসকষ্টের অসুস্থতার সঙ্গে জড়িত থাকতে বা নাও থাকতে পারে।’
ভাইরাস শরীরে গভীরভাবে অনুবিদ্ধ হয়ে গেলে রোগটি আরও মারাত্মক হতে শুরু করে। এসিই-২ (ACE-2) রিসেপ্টরযুক্ত অন্য অঙ্গগুলোর ওপর সরাসরি আক্রমণ ও ক্ষতি করে যেমন- হৃৎপিণ্ডের পেশিসহ, কিডনি, রক্তনালিগুলো, যকৃত এবং সম্ভাব্য কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র। এজন্য দায়ী কোভিড-১৯-র গুরুত্বপূর্ণ রিসেপ্টরভিত্তিক লক্ষণ-বিন্যাস ও সরাসরি আক্রমণ। ডা. ভিনেটজ মনে করেন, ‘মারাত্মক ও গুরুতর রোগ ছাড়াই অন্য কোনো শারীরিক-অঙ্গ প্রত্যক্ষ আক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে এমন আশংকা নেই।’
মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু সরাসরি আক্রমণ শিকার হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো স্কুল অফ মেডিসিনের নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. কেনেথ টাইলার, এমডি, সতর্ক করে বলেছেন যে এ মুহূর্তে সরাসরি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (সিএনএস) আক্রমণ সম্পর্কে গবেষণা চালান হচ্ছে। স্নায়ুতন্ত্রের (সিএনএস) আক্রমণের জন্য ভাইরাসের অনেক পথ রয়েছে। নাকের এপিথিলিয়াল কোষগুলো শ্বাসনালির মধ্যে সারস-কোভি-২ (SARS CoV-2) রিসেপ্টার এসিই-২ (ACE-2)-এর সর্বাধিক অভিব্যক্তি/প্রকাশ প্রদর্শন করে। ঘ্রাণশক্তি হ্রাস ইঙ্গিত করে দায়ী স্নায়ু সংক্রমিত এবং মস্তিষ্কসহ স্নায়ুতন্ত্রের (সিএনএস) ভাইরাসটি বহন করতে পারে। ‘এটি অ-মানব গবেষণায় করোনভাইরাসসহ অন্য কয়েকটি ভাইরাসের পরীক্ষামূলক মডেলগুলোতে প্রদর্শিত হতে পারে। তবে, আজ পর্যন্ত এটি প্রমাণ করার মতো কোনো প্রমাণ নেই যে এটি ‘সারস-কোভি-২ (SARS-CoV-2)’ এর সঙ্গে ঘটেছিল, যে ভাইরাসটি কোভিড-১৯ রোগের কারণ।
ময়না তদন্ত ও বায়োপসি নমুনা রিপোর্টসহ প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ভাইরাল কণাগুলো কেবল গলায় নয়, অশ্রু, মল, কিডনি, লিভার, অগ্ন্যাশয় এবং হৃদয়েও পাওয়া যায়। একটি কেস রিপোর্টে মেনিনজাইটিস আক্রান্ত এক রোগীর মস্তিষ্কের চারপাশের তরলে (সিএসএফ) ভাইরাল কণার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সমান্তরাল ক্ষতি ও মৃত্যুর ঝুঁকি
রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনার (ইমিউন সিস্টেম) রাসায়নিক সংকেতগুলো অতিসক্রিয় (overstimulate) মাধ্যমে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এমন সিগন্যালিংর প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি, ‘সাইটোকাইনস (cytokines)’ নামে পরিচিত। এ রাসায়নিকগুলোর অতিপ্রবাহ ‘সাইটোকাইন ঝড়’ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এটি সাইটোকাইন রাসায়নিকগুলোর একটি জটিল মিথষ্ক্রিয়া করে, যার কারণে রক্তচাপকে হ্রাস পেতে পারে, পাশাপাশি বেশি ঘাতক প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং প্রদাহজনক কোষকে আকর্ষণ করতে পারে যা ফুসফুস, হার্ট, কিডনি এবং মস্তিষ্কের আরও বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিছু গবেষক মনে করেন ‘সাইটোকাইন ঝড়’ হল হঠাৎ ক্ষয়ের কারণ
(sudden decompensation), যার ফলে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দেয়।
একটি নতুন অনুসন্ধানে আরও মারাত্মক জটিলতা থাকতে পারে বলে জানা গেছে। অনেক চিকিৎসক উদঘাটন করছেন যে অস্বাভাবিক রক্তজমাট বাঁধা, যা থ্রোম্বোসিস হিসেবে পরিচিত, মারাত্মক ও গুরুতর COVID-19-এ রোগের প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। চিকিৎসকরা সর্বত্র রক্তজমাট বাঁধা বা থ্রোম্বোসিস দেখতে পাচ্ছেন : এমন কি পায়ে গভীরে বৃহত্তর শিরায় থ্রোম্বোসিস (ডিভিটি) এবং ফুসফুসে ফুসফুসীয় এম্বোলিসহ (পিই) ধমনীতে রক্তজমাট বাঁধা বা থ্রোম্বোসিস যা স্ট্রোক সৃষ্টি করে; এবং শরীরজুড়ে ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলোতে ছোট ছোট জমাট বাঁধা। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক ফলাফলগুলোতে শরীরের একাধিক অঙ্গগুলোতে রক্তজমাট বিস্তৃত ছড়িয়ে থাকা নিদর্শন দেখা যায়।
ডা. অ্যাডাম কুকার এমডি, পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের হেমাটোলজিস্ট রক্তজমাট বা ক্লট বিদ্যায়-বিশেষজ্ঞ বলেছেন, রক্তনালিগুলোতে রক্তজমাট বাঁধার অসুবিধা, রোগী রক্তজমাট বা ক্লট বাঁধারোধে ব্লাডথিনার ব্যবহার করার পরেও উচ্চ হারে ঘটছে। নেদারল্যান্ডসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, হাসপাতালে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীর ৩১% ব্লাডথিনার ব্যবহারের পরও রক্তজমাট বাঁধার সমস্যায় পাওয়া গেছে।
ডা. কুকার আরও বলেছেন যে ‘নতুন গবেষণা দেখা যায় আমাদের প্রাপ্ত তথ্য ও পর্যবেক্ষণে যা দেখছি তা সঠিক এবং রোগীরা প্রচুর পরিমাণে রক্তজমাট/ক্লট সমস্যার জটিলতায় ভোগে এবং এমনও হতে পারে যে রক্তজমাট-সমস্যা বা ‘থ্রোম্বোটিক ইভেন্টের’ হার স্বীকৃত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি।’ জমাট বাঁধার কারণটি এখনও স্পষ্ট না হলেও, এটি রোগীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে আরও অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে বলে মনে হয়। ‘সাইটোকাইন অতিপ্রবাহ বা ঝড়’ এর কারণে সমান্তরাল ক্ষতি ও রক্তজমাট বা ক্লটের সমস্যার ছাড়াও অন্যান্য জিনিস যেমন কম রক্তচাপ যা একটি গুরুতর অসুস্থতার ইঙ্গিতবহন করে, কম অক্সিজেনের মাত্রা, ভেন্টিলেটরের ব্যবহার এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ নিজেরাই হৃৎপিণ্ড, কিডনি, লিভার এবং মস্তিষ্কসহ শরীরের সমস্ত অঙ্গকে ক্ষতি করতে পারে।
উভয় সংকট সমস্যা
যদিও গবেষকরা প্রতিদিনই ভাইরাস সম্পর্কে আরও নতুন নতুন বেশ কিছু তথ্য শিখছেন, কিভাবে এবং কোথায় ভাইরাসটি শরীরে আক্রমণ করে, তবে লক্ষভিত্তিক পরিচালিত চিকিৎসাও উল্লেখযোগ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। অনেক ওষুধ ব্যবহারে ঝুঁকি আছে শরীরের স্ব-রোগ বা প্রদাহ পরিচালনায় সূক্ষ্ম ভারসাম্য নষ্ট করায়।
ভাইরাসটি কোষগুলোতে প্রবেশের জন্য যে রিসেপ্টার এসিই-২ (ACE-2) ব্যবহার করে যা প্রদাহ হ্রাস এবং রক্তচাপ কমাতেও মূল ভূমিকা রাখে। চিকিৎসার কৌশল হিসেবে, এই কোষ-রিসেপ্টরগুলোকে ভাইরাস প্রবেশ বন্ধ জন্য বাধা দিলে, প্রকৃতপক্ষে রক্তচাপের আরও খারাপ পরিণতি হতে পারে পাশাপাশি হৃদযন্ত্র জটিলতাসহ কিডনিতে আঘাতের ঝুঁকি বাড়ায় এবং ফুসফুসের আঘাত আরও খারাপ হতে পারে এমনকি প্রদাহ বৃদ্ধি হতে পারে।
রক্তজমাট সক্রিয়করণ প্রিনেফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইনের সংক্রমণের প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া চলাকালীন অত্যধিক উৎপাদনের ফলে বহুমুখী আঘাতের দিকে পরিচালিত করে। ‘সাইটোকাইন অতিপ্রবাহ বা ঝড়’ ঝুঁকি কমাতে প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করে ওষুধ ব্যবহারের ফলাফল প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘমেয়াদে ভাইরাসকে মেরে ফেলার ক্ষমতা হ্রাস ও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
রক্তজমাট বাঁধা রোধে ওষুধ ব্যবহার করা হলে মারাত্মক রক্তপাতের ঝুঁকিও কারণ হতে পারে। ডা. কুকার উল্লেখ করেছেন যে ‘রক্তপাতের কারণ বিষয়ে আমাদের ভালো জানা নেই, জমাট বাঁধার ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের কাছে সীমাবদ্ধ তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে। এ রোগীদের রক্তপাতের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সীমিত জ্ঞান রয়েছে এবং এ ঝুঁকিটি বোঝা বাস্তবে অগ্রাধিকার এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, রক্তজমাট বাঁধা চিকিৎসা জন্য আমাদের জমাট বাঁধাবিরোধী (অ্যান্টি-কোগুলেশন) কৌশলগুলো এর তীব্রতা বাড়িয়ে তুলছে।’
সময়মতো চিকিৎসা কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, রোগের শুরুতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে এবং পরে রোগের অগ্রগতি, জটিলতা এবং ‘সাইটোকাইন অতিপ্রবাহ বা ঝড়’ বৃদ্ধির-চিহ্নিতকারী অবস্থার শুরুতেই ওষুধটি প্রয়োজন মতো কমান।
বড় সমস্যার দৃশ্যমান চূড়া মাত্র
ডা. কুকার বলেছে যে, কোভিড-১৯ রোগের ক্ষেত্রে আমাদের রক্তজমাট বাঁধার বিষয়ে ও অন্য সমস্ত জটিলতার বিষয়ের কিছু জ্ঞান কেবলমাত্র ‘বড় সমস্যার দৃশ্যমান চূড়া মাত্র’।
টেক্সাসের চর্ম বিশেষজ্ঞ, ডা. সানোবর আমিন এমডি, পিএইচডি এ বিষয় একমত। তিনি ত্বকের বিভিন্ন বিস্তৃত অনুসন্ধানগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন যা বিশ্বজুড়ে চর্ম বিশেষজ্ঞরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত উল্লেখ করছেন।
তিনি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু ছবি পোস্ট করেছেন যাতে ত্বকের বিভিন্ন প্রকারের সমসা দৃশ্যমান। তার পোস্টটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ডা. আমিন বলেছেন যে, ‘সারা বিশ্বে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা তুরস্ক থেকে ফ্রান্স থেকে কানাডা ও আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে ত্বকের লাল লাল ফুসকুড়ি পর্যবেক্ষণ করেছেন’। কিছু লাল লাল ফুসকুড়ি ভাইরাল এক্স্যান্থেমা
(viral exanthema) মতো সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়, যা প্রায় যে কোনো ভাইরাস-রোগের সঙ্গে ঘটতে পারে। তবে ডা. আমিন বলেছেন, ‘কিছু কিছু ত্বকের পর্যবেক্ষণগুলো ত্বকের কাছাকাছি রক্তনালিগুলোর উপরিগত রক্তজমাট বাঁধার সঙ্গে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখন পায়ের আঙ্গুল এবং আঙ্গুলগুলোতে এ ছোট ছোট রক্তজমাট বাঁধার দেখছেন, বিশেষত বাচ্চাদের মধ্যে। এটিকেই কেউ কেউ ‘COVID toes’ বলতে শুরু করেছেন, তাকে প্রদাহজনক ত্বকের অবস্থা ‘পেরিনিও (Pernio)’ বলা হয়। ত্বকের এ অবস্থা কোভিড-১৯-এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তা জানা কঠিন কারণ ‘সাধারণ’ লক্ষণ ব্যতিত অনেক লোকেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে না। গবেষকরা মনে করেন এখনও এ বিষয়ে আরও কাজ ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে, জানতে যে কোনো উপসর্গটি ভাইরাসজনিত কারণে হতে পারে এবং কোনটি কেবল প্রাথমিক অনুসন্ধানের সঙ্গে সম্পর্কিত না।
অনুত্তরিত প্রশ্ন
আপাতত, কোভিড-১৯-এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে আমাদের কাছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে বেশিরভাগ তথ্য আসে, এ সময় এরা খুবই অসুস্থ থাকে সে কারণে তাদের রোগের প্রাথমিক উপসর্গ ও লক্ষণগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও তথ্য দিতে সক্ষম থাকেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রোগ-পরীক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণে আমরা এখনও হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া হালকা এবং মাঝারি লক্ষণযুক্ত রোগগুলোর সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ বা লক্ষণগুলো এবং এমন রোগীদের ওপর এই রোগ কী প্রভাব ফেলেছে তার পুরো মাত্রায় জানি না।
এখন একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন হল বেঁচে থাকা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো কী হতে পারে, ভেন্টিলেটরে থাকার পরে বা হঠাৎ ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনের পরে এমন অবস্থা পরবর্তী সময় কেমন হবে? আমরা কি এমন দেখতে পাব যে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং কিডনি কার্যশক্তি হ্রাস পাচ্ছে যা হবে দীর্ঘস্থায়ী এবং চিরস্থায়ী, নাকি রোগীরা শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সেরে উঠবে?
আমরা এখনও জানি না কীভাবে লোকেরা সম্পূর্ণ সংক্রমণমুক্ত হবে? তবে অন্য করোনাভাইরাস রোগগুলোর মতো বেশিরভাগ রোগ-পুনরুদ্ধার পাওয়া লোকদের তীব্র-সংক্রমণ শেষে পরবর্তী সময় স্বল্পমেয়াদি অনাক্রম্যতা (Immunity) সূচনা হলে ভালো। এটিও সম্ভব যে ভাইরাসটি শরীরে সুপ্ত-সংক্রমণ অবস্থায় থাকবে যেমন জল বসন্তের মতো যা অব্যাহত থাকতে পারে, যা পরবর্তী সময় শিংলস ডিজিজ (shingles) মতো পর্যায়ক্রমে পুনরায় উদ্ভূত হয়ে সংক্রমণ করে অথবা হেপাটাইটিস বি (hepatitis B) এর মতো দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হয়ে যায় যা স্থায়ী সময়ের জন্য শরীরের মধ্যে থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ। ডা. ভিনেটজ বলেছেন, ‘এটি অবশ্যই একটি তীব্র সংক্রমণ, সুপ্ত বা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কোনো আশংকা কম।’
লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ইমারজিং-রিইমারজিং ডিজিজস, আইইডিসিআর, ঢাকা
msalimyyuaman@hotmail.com
