Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

আজ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে

সুস্বাস্থ্য রক্ষায় মুখ ও মুখগহ্বরের যত্ন নিন

Icon

ডা. মো. ফারুক হোসেন

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুস্বাস্থ্য রক্ষায় মুখ ও মুখগহ্বরের যত্ন নিন

ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে প্রতি বছর ২০ মার্চ সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে থাকে, সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য মুখের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সবার মাঝে উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে।

কারণ ভালো মুখের স্বাস্থ্য আপনাকে দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবনযাপনে সাহায্য করে থাকে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পেইন থিম হলো- ‘Be Proud of Your Mouth’ প্রতিদিন আমরা আমাদের মুখ ব্যবহার করে থাকি। অস্বাস্থ্যকর মুখের কারণে মুখের ব্যথা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। দাঁতের যত্নে একটি ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে।

সকালে খাবারের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে। কৃত্রিম পানীয় পরিহার করে পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। ধূমপান বর্জন করতে হবে। অ্যালকোহল পান করা মুখের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শুধু মুখের স্বাস্থ্য নয় বরং অ্যালকোহল পানের কারণে আপনার নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হতে পারে।

প্রতি ছয় মাস পর পর ডেন্টাল চেকআপ করতে হবে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় মুখের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অধিকাংশ মুখের রোগের ক্ষেত্রেই অন্যান্য শরীরের রোগের সঙ্গে একই ধরনের রিস্ক ফ্যাক্টর বিদ্যমান থাকে। হৃদরোগ ইতিমধ্যেই শীর্ষ ঘাতক ব্যাধি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, যা মাড়ি রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার বা টিউমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

মাড়ি রোগের মাধ্যমে যদি ‘ভিরিড্যানস্ স্ট্রেপটোকক্কাই’ ব্যাকটেরিয়া রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয়, তাহলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অবহেলা করবেন না। পেরিওডন্টাল রোগে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় বা দেখা যায়, তার মধ্যে স্ট্রেপটোকক্কাস স্যানগুইস বা স্যানগুইনিস হার্টে সংক্রমিত হয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস দেখা দিতে পারে।

স্ট্রেপটোকক্কাস স্যানগুইনিস সুস্থ মানুষের মুখে বিদ্যমান বিশেষ করে ডেন্টাল প্ল্যাকে। সম্প্রতি গবেষণায় জানা যায়, মাড়ি রোগের সঙ্গে শুধু হৃদরোগ সম্পৃক্ত নয় বরং মাড়ি রোগের কারণে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে। তাই মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে অবহেলা না করে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত পেরিওডন্টাইটিসের ক্ষেত্রে দাঁত নড়ে যায়।

দাঁত বেশি নড়ে গেলেই সেটি পেরিওডন্টাইটিসের কারণে হয়েছে, এমনটি ভাবা ঠিক নয়। আর এক্ষেত্রে পেরিওডন্টাইটিস ভেবে দাঁত তোলাও ঠিক নয়। রোগীদেরও দাঁত নড়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে এসে দাঁত ফেলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা মোটেই ঠিক নয়। কারণ পেরিওডন্টাইটিস ছাড়া ও মাড়ির ক্যান্সারের কারণে দাঁত নড়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া রক্তনালির টিউমার হেমানজিওমা হলেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে দাঁত ফেলে দিলে বড় ধরনের সমস্যা যেমন- অঝোর ধারায় রক্তপাত হতে পারে। মোটকথা টিউমার, সিস্ট এবং অন্য কারণেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। মাড়ি রোগ বা মাড়ির পাশে আলসার বা ঘা দেখা দিলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

থাইরয়েড গ্রন্থির অচলাবস্থার কারণে মুখের অভ্যন্তরে পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে। আবার পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্য খারাপ হলে সংক্রমণের মাধ্যমে আপনার হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হতে পারে। লিভারের রোগে অনেক সময় মুখে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়ে বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে।

পেরিওডন্টাইটিসের সঙ্গে লিভারের রোগ যেমন- নন-অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, অর্থাৎ এসব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে। মুখের অভ্যন্তরে কোনো সার্জারির পর রক্তপাত বেশি হতে পারে লিভারের রোগে। কোয়াগুলোপ্যাথির জন্য সামান্য আঘাতে মাড়ি থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রনিক লিভার ডিজিজে দাঁত ও মাড়িতে সবুজ দাগ এবং এনামেল হাইপোপ্লাসিয়া দেখা যেতে পারে। আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং আপনার মাড়ি রোগ থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয়, ওই শিশু আকার-আকৃতিতে ছোট হবে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে মুখের ক্যান্সার ও সারভাইক্যাল ক্যান্সার হতে পারে।

হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬কে মুখের ক্যান্সারের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসাবে গণ্য করা হয়। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস প্রতিরোধে আপনার সন্তানের যৌনজীবন শুরু করার আগে টিকা প্রদান করুন। দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় আমাদের দেশে আমরা ব্যাপকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকি। দুঃখের বিষয়, ডাক্তারের কাছে আসার আগেই রোগী ওষুধের দোকান থেকে মুখস্থ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকেন।

যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করার কারণে অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে এক সময় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়। রোগীর যে কোনো রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হলে, তখন আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।

এ অবস্থা সুপারবাগ সংক্রমণ নামে পরিচিত। সুপারবাগ সংক্রমণের কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশে বহুরোগী আইসিইউ-তে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যকে নিয়ে ভাববে। মনে রাখবেন, মুখ ও মুখগহ্বরকে অবহেলা করে কখনই আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখা সম্ভব নয়।

লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ

dr.faruqu@gmail.com

ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম