সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং করোনার নতুন ধরন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন নিয়ে উদ্বিগ্নতা ও টিকা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি-সংশয় আমাদের মাঝে রয়েছে। এসকল বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ আয়োজন-
মিউটেশন সার্ভাইল্যান্স চালানো জরুরি
সম্প্রতি বাংলাদেশে দশ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইন (ই.১.১.৭) পাওয়া গেছে। এ স্ট্রেইনে স্পাইক প্রোটিনে ১৭টি মিউটেশন ঘটেছে যার ভেতরে এন-৫০১-ওয়াই মিউটেশনটি মারাত্মক। এ স্ট্রেইনটি আগের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমণশীল যা ৩০-৪০ শতাংশ বেশি গুরুতর কোভিড করতে পারে।
গত দশ দিনে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুও। এখন আক্রান্তের অনেকেই গুরুতর কোভিড নিয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। আইসিইউ বেড খালি পাওয়া যাচ্ছে না। তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছে করোনায়। যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করা যায়, বর্তমান সংক্রমণ যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইন দিয়ে হতে পারে। বাংলাদেশে এখন মিউটেশন সার্ভাইল্যান্স চালানো জরুরি। দরকার কঠোর প্রশমন বা মিটিগেশন ব্যবস্থা নেওয়াও।
ডা. খোন্দকার মেহেদী আকরাম
সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, যুক্তরাজ্য
শুধু ভ্যাকসিন করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না
বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন-এর প্রয়োগ খুবই আশাব্যঞ্জক। সেই সঙ্গে এ মহামারির মাঝে সারা দেশে উৎসব ও সামাজিকতার আমেজ কিন্তু চরম উদ্বেগের বিষয়। দুই ডোজ নেওয়ার পর ভ্যাকসিনটি শতকরা ৮১ ভাগ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। শুধু ভ্যাকসিন-এর উপর নির্ভর করে জনস্বাস্থ্যের উপদেশগুলো না মেনে চলা বোকামিই বটে; উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করা, কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা বা মাস্ক ব্যবহার করা ও হাত ধোয়ার কোনো বিকল্প নেই।
ডা. মুহাম্মদ আজিজ রহমান
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সহযোগী অধ্যাপক ও সহযোগী ডিন, ফেডারেশন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া
সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে
‘হঠাৎ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি, কম বয়স্কদের মাঝে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান গুরুতর রোগীর সংখ্যা- এ বিষয়গুলো বাংলাদেশে ‘নতুনস্ট্রেইন’ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে আমাদের শঙ্কিত করে তোলে। বাংলাদেশে হঠাৎ এ দ্রুত সংক্রমণের জন্য যুক্তরাজ্যের অধিক সংক্রমণ নতুন স্ট্রেইনটি দায়ী হতে পারে। কিছুটা স্বস্তির বিষয় হচ্ছে যে যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনটির বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি কার্যকর। কাজেই সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। আশঙ্কার বিষয় হলো ভ্যাকসিনটি সাউথ আফ্রিকার ‘নতুন ধরন’-এর বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। এ জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসা ব্যক্তিদের নিজ খরচে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি অন্তত এক মাস পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে।
ডা. শাহরিয়ার রোজেন
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র পলিসি বিশ্লেষক, কানাডা
প্রচলিত চিকিৎসা রোগের উপসর্গ উপশমে সাহায্য করে
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। বর্তমানে প্রচলিত চিকিৎসাগুলো কেবল উপসর্গ উপশমে সাহায্য করে। কার্যকরী চিকিৎসা না থাকার কারণে এ মহামারি নিয়ন্ত্রণের উপায় হলো : মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। এ সহজ কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো শত বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হয়েছিল এবং করোনার সব বিপজ্জনক ভ্যারিয়ান্টকে এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি, গবেষণায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। তাই মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।
ডা. চন্দন মিত্র
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাষ্ট্র
