Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

দাঁতের যত্নের পরও দাঁতে রোগ

Icon

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দাঁতের গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারছি বলে মুখের যত্নে সচেতনতা বাড়ছে। ১০-১২ বছর আগেও রোগীরা যেভাবে দাঁতে প্ল্যাক বা ক্যালকুলাস নিয়ে আসত, সেই তুলনায় এখন বেশিরভাগ মানুষের মুখে তুলনামূলক সচেতনতার প্রমাণ মেলে।

যারা নিয়মিত ও নিয়মানুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখে কিন্তু তারপরও দাঁত ও মুখের রোগ হয় তারা অনেক সময় না বুঝে চিকিৎসকদের পরামর্শের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। মুখ পরিষ্কারের পরও দাঁতে কেন গর্ত বা মাড়িতে রোগ হয় তার কিছু উদাহরণ-

দাঁতের গঠনগত অস্বাভাবিকতা

জন্মগত কারণে কারো কারো দাঁতের গঠনপ্রণালীতে অস্বাভাবিকতা থাকে বিশেষ করে গর্ভকালীন অপুষ্টি, ক্যালসিয়ামের অভাব, প্রয়োজনীয় মিনারেলসের অভাব ও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন প্রভৃতি কারণে গর্ভের শিশুর দাঁতের গঠন দুর্বল হতে পারে। আবার অনেকের আকৃতিগত সমস্যা থাকতে পারে যেমন- দাঁতের উপরের খাঁজগুলো খুব সরু আর গভীর থাকতে পারে যেখানে পরিষ্কার রাখা অসম্ভব। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়ে আগে থেকেই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে সচেষ্ট হতে হবে।

অসম বা অস্বাভাবিক দাঁতের অবস্থান

অনেকের দাঁত ও চোয়ালের হাড়ের অনুপাত অসম, দুধ দাঁত নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে পড়ে যাওয়া বা বিভিন্ন কারণে দাঁত এলোমেলো থাকে। ফলে দাঁতের মধ্যকার অনেক লুকায়িত স্থান থাকে যেখানে সহজে ব্রাশ পৌঁছাতে পারে না ফলে নানা রোগের সৃষ্টি হতে পারে। সে জন্য অর্থোডন্টিক চিকিৎসার মাধ্যমে আঁকাবাঁকা দাঁত ঠিক করা জরুরি।

নিঃসৃত লালার ধরন

স্বাভাবিক নিঃসৃত লালা আমাদের মুখকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। শারীরিক ও মানসিক নানা কারণ, অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগী, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, কম তরল পান করা, লালা গ্রন্থির রোগ ও শ্বাসকষ্টে ইনহেলার ব্যবহার প্রভৃতি নানা কারণে লালার প্রভাব কমে যেতে পারে। তখন মুখ শুষ্ক ও লালা ঘন হতে পারে। এমন অবস্থায় মুখের মধ্যে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে কারণ নিশ্চিত হয়ে লালার প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত তরল পান, চিনিমুক্ত চুইংগাম ও লালা গ্রন্থির ব্যায়ামসহ নানা কার্যকর উপায় বেছে নেয়া যায়।

খাদ্যাভ্যাস

যারা আতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, ধূমপান, পান জর্দা, ফাস্ট ফুডে বেশি আসক্ত, দাঁতের স্বাস্থ্যবান্ধব খাবার যেমন- দেশীয় ফলমূল, দুধ, টকদই, পনির, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার প্রভৃতিতে অনাগ্রহী তাদের দাঁতেও রোগ বাসা বাঁধতে পারে।

শারীরিক অসুস্থতা

অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি, ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, রক্তের রোগ, অপুষ্টি ও কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা কারণে দাঁত ও মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অভ্যাসজনিত কারণ

শক্ত টুথব্রাশ দিয়ে জোরো জোরে দাঁত ঘষা, ছাই-কয়লা বা গুল ব্যবহার, দাঁত দিয়ে বোতলের কর্ক খোলা, সুতাকাটা ও দাঁতে দাঁত ঘষার অনিয়ন্ত্রিত অভ্যাস প্রভৃতি নানা কারণে দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মুখের অভ্যন্তরে অগণিত জীবাণু সবসময় সুযোগ খোঁজে অনুকূল পরিবেশের। আর তাই সঠিকভাবে এদের প্রতিহত করতে নিয়ম মেনে মুখ পরিষ্কার রাখা জরুরি। পাশাপাশি ছয় মাস অন্তর অনুমোদিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সহজেই মুখ গহ্বরকে স্বাস্থ্যকর রাখা সম্ভব। দীর্ঘদিন কোভিডজনিত যৌক্তিক কারণে ডেন্টাল রোগীরা তাদের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসকের সঙ্গে টেলিপরামর্শে কষ্টের প্রাথমিক উপশমের চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ডেন্টালের অধিকাংশ রোগের স্থায়ী সমাধানে নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োজন। নিউ নরমাল সময়ে এখন অনেক ডেন্টাল ক্লিনিক তাদের প্রয়োজনমতো সাবধানতা অবলম্বনে রোগী দেখা শুরু করেছে তাই বিশ্বস্ত চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে চেম্বারে আসার সময় ও ব্যবস্থাপনা জেনে সঠিক তথ্যপ্রদান করে স্থায়ী চিকিৎসা নিতে পারেন।

লেখক : সদস্য সচিব, বিএফডিএস, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম