ডায়াবেটিক রোগীদের মানসিক সমস্যা
ডা. শাহজাদা সেলিম
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ডায়াবেটিসের কারণে কারও কারও মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন থেকে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা অদূর ভবিষ্যতে নানাবিধ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। আবার যারা মানসিক রোগে ভুগছেন তাদের ডায়াবেটিস হলে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। যাদের ইনসুলিন ইনজেকশন নিয়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়, তাদের জটিল মানসিক রোগ চিকিৎসায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সিজোফ্রেনিয়া, যাতে রক্তের গ্লুকোজ বাড়ে।
ডায়াবেটিসে বিষণ্নতা
ডায়াবেটিক রোগীর অন্যদের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হারে বিষণ্নতায় ভোগার ঝুঁকি রয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব বিষণ্ন রোগীদের মাত্র ২৫-৫০ শতাংশের রোগ শনাক্ত হয়ে, তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ রোগটি শনাক্ত করা একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কোনো কঠিন কাজ নয়, চিকিৎসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ হয় এবং ব্যয়বহুলও নয়। বিনা চিকিৎসা বা বিলম্বিত চিকিৎসায় রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হতে থাকে।
বিষণ্নতার লক্ষণ
আমেরিকান সাইক্রিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন বিষণ্নতার নয়টি লক্ষণ উল্লেখ করে বলেছে কারও মধ্যে এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি টানা দু’সপ্তাহ বা ততোধিক সময় ধরে উপস্থিত থাকলে, সেটি বিষণ্নতা হতে পারে। এগুলো হলো-
দিনের বেশিরভাগ সময়- * মন খারাপ থাকা * যেসব কাজে আনন্দ পেত সেসব কাজে আনন্দ ও আগ্রহ কমে যাওয়া * ঘুম অস্বাভাবিক কমে বা বেড়ে যাওয়া * খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া বা রুচি বেড়ে যাওয়া * ওজন কমে যাওয়া * কাজে ও চিন্তায় ধীরগতি হয়ে যাওয়া * নিজেকে নেতিবাচক চিন্তা করা বা নিজেকে সব কিছুতে দায়ী মনে করা * সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া * আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা ও চেষ্টা করা।
একজন লোক যদি দীর্ঘদিন বিষণ্নতায় ভোগেন এবং চিকিৎসার বাইরে থাকেন তবে তার ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শতকরা সাত ভাগেরই পেছনে বিষণ্নতা একটি নিয়ামক হিসাবে কাজ করে।
ডায়াবেটিস ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা
সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের ১৬ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছে। বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার হার বাড়ে। মধ্য বয়সীদের দৈহিক স্থূলতা থাকলে ডিমনেশিয়া (স্মৃতিভ্রষ্টতা) হওয়ার হার বাড়ে আর বেশি বয়সে ডিমনেশিয়া বাড়ে ডায়াবেটিসের কারণে। খাদ্যাভ্যাসবিষয়ক সমস্যাও হতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের।
করণীয়
ডায়াবেটিক রোগীর নিজের এবং বিশেষভাবে তার পরিচর্যাকারীদের উচিত রোগীর মধ্যে বিষণ্নতার কোনো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা, আচার-আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে কিনা, মনের মধ্যে কোনো হতাশা বা অসহায়ত্ব জন্ম নিচ্ছে কিনা, খাদ্যাভ্যাসে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা প্রভৃতির দিকে নজর রাখা। রোগীদের উচিত নিজের শরীরের যত্ন নিজেই নেওয়ার অভ্যাস করা। যেসব রোগী নিজের যত্ন নিজে নিতে অক্ষম, তার স্বজনদের উচিত ভালোভাবে এবং সব সময়ের জন্যই তার প্রতি লক্ষ রাখা। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি না করাই ভালো।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
