Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

শিশুদের মোবাইল আসক্তি : পরিণতি ও করণীয়

Icon

অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিঃসন্দেহে ডিজিটাল প্রযুক্তি তথা মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ- এসব ডিভাইস সৃজনশীল এবং সুবিধাজনক। কিন্তু শিশুদের জন্য এটি বেশ বিপদজনক। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অর্থাৎ অত্যধিক স্ক্রিন টাইম শৈশবের সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের ওপর ভীষণ রকম ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব ফেলে। বাস্তব জীবনে, যেসব শিশু তাদের পর্দায় আসক্ত, তারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন- খেলাধুলা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানো মিস করে; ফলে তাদের দক্ষতা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া মনোনিবেশ করার এবং বাস্তবজীবনে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাদের চোখের বিশ্রামের জন্য স্ক্রিন থেকে পর্যাপ্ত সময় বিরতি নিতে উপদেশ দিতে হবে। টিভি, মোবাইল গেম বা যে কোনো ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট দেখার সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয়। এ ডোপামিন আমাদের মনে এক ভালোলাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। তার ফলে অতি সহজেই আমরা এ ধরনের এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়ামগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়ি।

আসক্তির পরিণতি

* শিশু সময়মতো খেতে চাইবে না। এর ফলে অপুষ্টিতে ভুগবে, কারণ উপযুক্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ না করার কারণে অথবা সারাক্ষণ বসে-শুয়ে থাকার জন্য মোটা হয়ে যাবে।

* চোখ খারাপ হবে। ঘাড়ে ব্যথা হবে।

* জেদি, অতিচঞ্চল হয়ে উঠবে।

* পড়ালেখা ও কর্মজীবনের মান কমে যাবে।

* অতি উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা এবং তীব্র মানসিক চাপের মতো মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের সঙ্গে গেমিং ডিজঅর্ডার হওয়ার প্রবণতা কখনো বেশি পাওয়া গেছে।

* ইন্টারনেট বা গেমের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে আচরণ পরিবর্তিত হয়ে যায়, আচরণে আগ্রাসীভাব দেখা দেবে। অল্পতেই রেগে যাবে। কখনো নিজের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বা অপরকে আঘাত অথবা হত্যা করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।

করণীয়

* বাড়ির খুব দরকারি গ্যাজেটের মতো (ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি) মোবাইল ফোনও একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস, তবে বাচ্চার খেলার সামগ্রী নয়। বড় বাচ্চাদের বোঝানো উচিত টিভি বা মোবাইলের আসক্তির খারাপ দিকগুলো।

* বাচ্চাদের একাকিত্ব দূর করার চেষ্টা করুন। আজকাল বেশিরভাগই ছোট পরিবার। তাই বন্ধু ও পরিজনহীন বাড়িতে টিভিকেই তারা পরম বন্ধু করে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা-বাবা দুজনই চাকরি বা অন্য কাজে অনেকটা সময় বাইরে থাকলে তাই বাচ্চা টিভি বা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ে। বিকাল বেলায় বাচ্চার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাক্টিভিটির পরিকল্পনা করুন। যেমন- নাচ, গান, আবৃত্তি, মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট শেখানো। এভাবে সমবয়সি বাচ্চাদের সঙ্গে সময়ও কাটাতে পারবে, ওদের একাকিত্বও ঘুচবে।

* বাচ্চার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন। তাহলে টিভি, মোবাইল বা ভিডিও গেমের আসক্তি থেকে অনেক সহজেই বাচ্চাকে দূরে রাখা যায়।

* মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধুলা করুন।

* অনেক সময় বিভিন্ন কার্টুন ক্যারেক্টারের মারপিট বা মোবাইল গেমের কার ক্র্যাশিং খেলা বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। তারা অতিরিক্ত হাইপার অ্যাক্টিভ বা অ্যাগ্রেসিভ হয়ে ওঠে। তাই লক্ষ রাখুন, কী ধরনের প্রোগ্রাম বাচ্চারা দেখছে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চার পাশে বসে ওকে সঠিক ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিন।

* বাচ্চাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে দিন সময় মেপে। ল্যাপটপ বা কম্পিউটার বাড়ির এমন একটি জায়গায় রাখুন, যাতে তা বড়দের চোখের সামনে থাকে। তাতে বাচ্চারা কী ধরনের বিষয় নিয়ে ইন্টারনেটে নাড়াচাড়া করছে তা নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

* বাচ্চার খাওয়ানোর সময় বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে কোনো ধরনের গ্যাজেটের অভ্যাস রাখবেন না। বরং গল্প বলুন। তাতে বাচ্চা অনেক ধরনের প্রশ্ন করতে শিখবে, নতুন বিষয় সম্পর্কে শিখবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে মন বিক্ষিপ্ত থাকবে না।

নিজের ব্যস্ততার জন্য আদরের সন্তানকে মোবাইল গেমে, ভিডিওতে আসক্তি করবেন না। শিশুদের প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া খুব জরুরি। শিশুকে নিয়ে বাগানে বা প্রকৃতির মধ্যে খেলাধুলা করুন। তাতে শিশুরা সামাজিক হয়ে উঠতে পারবে। মানসিক বিকাশের উন্নতি হবে।

শিশুদের ঘরে কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। বিশেষ করে মায়েরা এ কাজটি করতে পারেন। আপনার সন্তানকে ছোট ছোট কাজে সহযোগিতা করা শেখাতে পারেন। এতে আপনার সন্তান ঘরের কাজের প্রতি আগ্রহী হবে এবং মোবাইল আসক্তি থেকে সরে আসবে।

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সভাপতি, বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম