Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

কোমর ব্যথা কি মানসিক রোগ থেকেও হয়

Icon

ডা. মোহাম্মদ আলী

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘরে ঘরে এখন একটাই সমস্যা। কোমরের ব্যথা। এ সমস্যায় কষ্ট কেমন হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন। মাঝে মাঝে ব্যথা এমনই হয় যে স্বাভাবিক কাজকর্ম করাও দুরুহ হয়ে পড়ে। যদি বলা হয় কী কারণে কোমরে ব্যথা, তবে সিংহভাগ মানুষই আঘাতজনিত সমস্যা, কিডনির সমস্যা, নার্ভের সমস্যাকেই দায়ী করবে। কিন্তু এটাও সত্যি কোমরের ব্যথার জন্য শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও দায়ী। কীভাবে মানসিক সমস্যা থেকে বৃদ্ধি পায় এ ব্যথা? বিস্তারিত লিখেছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাব বিভাগের প্রধান, কোমর ব্যথাবিষয়ক গবেষক ডা. মোহাম্মদ আলী

সামান্য বা মাঝারি মানের ডিস্ক প্রল্যাপ্স বা পিএলআইডি থেকে কোমর ব্যথা হতে পারে। পরবর্তীতে ডিস্ক আগের জায়গায় ফিরে গেল ঠিকই; তীব্র ব্যথাও কমে গেল, কিন্তু মৃদু থেকে মাঝারি ব্যথা রয়েই যায়। ধরা যাক, এ ব্যথা কারও শরীরে বয়ে চলল দীর্ঘকাল। কোমরে আঘাত বা ডিস্ক প্রল্যাপ্সে যে ব্যথার ধারা তৈরি হয়েছিল, হিউম্যান ব্রেন সে ধারাকে মনে রাখতে সক্ষম। ব্রেনের এ স্মরণশক্তি হয় প্রাকৃতিক অথবা পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত, যেমন-কারও যদি কোমর ব্যথা সম্পর্কে অতিমাত্রায় নেতিবাচক মনোভাব থাকে অথবা প্রকৃত কোমর ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তিটি আর্থ-সামাজিক বা পারিবারিক কারণে মানসিক চাপে থাকেন তবে তার মনের ব্যথার সঙ্গে কোমর ব্যথার সংমিশ্রণ ঘটতে পারে, তৈরি হতে পারে মনের ভেতর স্থায়ী দাগের যা তার শরীরকে ব্যথার উপলব্ধি দিতে থাকবে বছরের পর বছর। এ ধরনের কোমর ব্যথা ফাইব্রোমায়েলজিয়া নামক রোগের সঙ্গে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

* নির্ণয়ের উপায়

এ ব্যথা নির্ণয় সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। এ ধরনের রোগীর এমআরআই, এক্স-রে-তেও সমস্যা থাকতে পারে। PLID বা Lumbar spondylosis পরিলক্ষিত হতে পারে টেস্ট রেজাল্টে। কিন্তু এর প্রকৃত কারণ অন্যত্র। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণগুলো একে একে নির্ণয়ে রোগীকে সময় দিতে হবে, চিকিৎসকের থাকতে হবে বাস্তবসম্মত ও উন্নত প্রশিক্ষণ।

* চিকিৎসা

মনের ব্যথা যখন শরীরে চলে যায়; সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কঠিন, এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তথ্য প্রবাহের এ যুগে ইউটিউব, ফেসবুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রকমের মনগড়া ও ভুল তথ্যে। এসব ভুল তথ্য থেকে ভুল শিক্ষা নেওয়া কোমর ব্যথা রোগীকে কোমর ব্যথা সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলাই মূল চ্যালেঞ্জ। যেমন-একজন কোমর ব্যথার রোগী বছরের পর বছর জেনে এসেছে তার ব্যথার কারণ পিএলআইডি। সে হয়তো গত তিন বছরে চারটি এমআরআই করে ফেলেছে, স্বাস্থ্য পেশাজীবী পরিবর্তন করছে দ্রুত সুস্থ হতে; কিন্তু সুস্থ হতে পারছে না। এ ধরনের অসংখ্য রোগী পাওয়া যায়। প্রথমত এ ধরনের রোগীকে সঠিক বিষয়টা বোঝাতে হবে। দ্বিতীয়ত টার্গেটেড বা সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা দিতে হবে। সেটা হতে পারে থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, অ্যাডভাইস বা অন্য চিকিৎসা।

* রোগীকে যা করতে হবে

মনে রাখবেন, আপনি ইউটিউব বা ফেসবুকে ভাইরাল যা কিছুই দেখছেন তা সত্যি নাও হতে পারে। আজকাল বিজ্ঞাপন ও অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন পোস্ট বা ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া যায়। একটা তথ্য বিশ্বাস করার আগে দেখে নিন কে এ তথ্যটি দিচ্ছেন, তার যোগ্যতা কী। রোগীদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা হলো, কোমর ব্যথা পিএলআইডি’র কারণেই বেশি হয়। কিন্তু এ কথাটি অনেকাংশেই মিথ্যা। বেশিরভাগ ব্যথার কারণ পিএলআইডি নয়। গবেষণা দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে, এমন হাজার হাজার সুস্থ মানুষ রয়েছে যাদের এমআরআই করে দেখা গেছে, এরা পিএলআইডি-এ আক্রান্ত। অথচ তাদের কোমর ব্যথা নেই। অনেক কোমর ব্যথার রোগী রয়েছে যাদের এমআরআই স্বাভাবিক। তাই সঠিক তথ্য ও চিকিৎসা পেতে রোগীকেই সবার আগে সচেতন হতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম