বোধের জগতে আলো জ্বালাতে এলেন ডা. নাজনীন আখতার
উচ্চাকাঙ্ক্ষার চাপে কেউ পথভ্রষ্ট হচ্ছেন
ডা. সংগীতা হালদার
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছোট ছোট পা ফেলে ২০১৫ সাল থেকে তিনি এগিয়ে এসেছেন সোশ্যাল বিজনেস ভেঞ্চার বা সামাজিক ব্যবসায়ের উদ্যোগ নিয়ে। আর দশটি ব্যবসার মতো নয়। এ ব্যবসা নিছক অর্থ লাভের জন্যও নয়। বরং অর্থের পেছনে ছুটে চলার কারণ যে মূল্যবোধের দারিদ্র্যে মানুষ ডুবে যাচ্ছে তাকে ফিরে পেতে এক অদৃশ্য লড়াই করছেন ডা. নাজনীন।
সবার দ্বিধার সামনে অবিচল থাকার পেছনের গল্পটি হলো ৮০’র দশকের সেই মেয়েটির, তিনি স্বপ্ন দেখতেন একজন মেয়ে হয়েও অতটা শক্তিশালী একজন ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার। যতটা হতে পারলে এ দেশের মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব। মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকে ডাক্তার হলেন বটে কিন্তু এনজিওতে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যুক্ত হলেন মানবসেবা ও গবেষণাধর্মী কাজের সঙ্গে। যেন নিছক রোগের চিকিৎসা নয় বরং রোগের মূলোৎপাটন করতে ভূমিকা রাখতে পারেন। এভাবে সুদীর্ঘ সময় দেশেই কাজ করতে করতে সুযোগ হল দেশের বাইরেও তার কাজের গণ্ডি ছড়িয়ে দেয়ার। এর মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, সুইডেন ইত্যাদি দেশে কাজ ও লেখাপড়ার সূত্রে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ ঘটে। এর ফলে সেসব দেশের সমস্যা ও সমাধানের ধারা সম্পর্কে অভিহিত হলেন, নতুন এক বোধ জাগ্রত হল তার মাঝে। তিনি উপলব্ধি করেন এ দেশের বেশিরভাগ সমস্যার মূলে রয়েছে নৈতিক মূল্যবোধের চূড়ান্ত অবক্ষয়।
ডা. নাজনীন বলেন, শুরুতে এ ব্যাপারে ভাবি এবং পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলি। কাউকে বুঝিয়েই উঠতে পারছিলাম না যে, পরিবার যে বোধের শেকড় সে বোধ কীভাবে বাইরে থেকে গড়ে দিতে পারে! আর সে উদ্যোগ থেকে আদৌ উদ্যোক্তা হিসেবে কীভাবে কেউ দাঁড়াতে পারেন, সমাজ, আর সমাজকেই বা কীভাবে কিছু দিতে পারেন! কাজেই পরিবার ও কাছের মানুষেরাই চিন্তাধারাকে সমর্থন জানালেও বুঝে উঠতে পারছিলাম না এ কাজটি আদৌ কতটুকু সম্ভব। তাও আবার বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে, যেখানে হুবহু এমন কাজ না হলেও এ ধরনের কাজগুলো এখন পর্যন্ত শুধু পাশ্চাত্যের উন্নত রাষ্ট্রেই স্বল্পাকারে হচ্ছে। আজকের সময়ে আমরা দেখেছি যে, শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত দিকনির্দেশনার অভাবে ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার চাপে কেউ পথভ্রষ্ট হচ্ছেন। কেউ বিষণ্নতায় ভুগে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউবা সফল হলেও দেশের জন্য তার মেধাকে ব্যবহার করার উপযুক্ত প্লাটফরম না থাকায় চলে যেতে চান অন্য কোনো দেশে। এভাবে করেই কিছু সূক্ষ্ম বিষয়কে উপেক্ষা করে বা দেখেও না দেখে ক্রমাগত উন্নতির পথে ছুটে চলেছি আমরা। সে ছুটে চলায় আমাদের গতি এসেছে বটে, কিন্তু পরিবার থেকে তুলে দেয়া মূল্যবোধের মশালটি ফেলে রেখে সামনে এগোনোর জন্য একটা পর্যায়ে জীবনের আঁধার পথে আমরা হয়ে যাই দিশেহারা। অর্থ সম্পদ খুব দ্রুতই বেড়েছে উন্নয়নের সূচক অনুযায়ী কিন্তু চারপাশের এই বোধহীনতার মাঝে মানুষেরা একটা সময়ে ভেতরে অনুভব করছেন এক বিশাল শূন্যতা, হারিয়ে ফেলছেন সত্যিকারভাবে বেঁচে থাকার অর্থ। দূর হচ্ছে আমাদের অর্থনৈতিক দারিদ্র্য। কিন্তু শুদ্ধাচার ও মূল্যবোধের অভাবে মনের দারিদ্র্য রয়েই যাচ্ছে। ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সব চাহিদা পূর্ণ হওয়ার পরও তৈরি হচ্ছে হতাশা। অথচ, যদি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই থাকে নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশনা। যে কোনো স্নাতকোত্তর শিক্ষাব্যবস্থার অনুষঙ্গ যদি হয় নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তা অক্ষুণ্ন রেখেও কর্মজীবনে উন্নতির দিকনির্দেশনা সংযুক্ত কোনো প্রশিক্ষণ হয় তবে হয়তো মানসিক বিষাদগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাই যাবে কমে। আর তাই, এ মূল্যবোধের মশালটি ডা. নাজনীন আখতার ছড়িয়ে দিতে চাইলেন প্রতিটি পেশাগত প্রশিক্ষণের মাঝে। কাজের সঙ্গে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে তা হবে নৈতিকভাবে পরিচালিত মূল্যবোধকে মন ও মননে গেঁথে দেয়ার এক অনন্য সাধারণ সৃজনশীল উপায়। শুধু পেশাগত প্রশিক্ষণেই নয়, যে নারীরা ঘরে দিনভর কাজ করেও নিজেকে জানেন ‘কিছু করি না’ দলভুক্ত মানুষ হিসেবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মনস্থির করার পরপরই এ বিষয়ে তিনি নিজের লেখাপড়ার ভিত্তিকে করেছেন আরও সুগঠিত এবং নিজের পরিকল্পনাকে সুসঙ্গত করার জন্য যোগাযোগ করতে শুরু করলেন নীতিনির্ধারক, গবেষক, ডাক্তার, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রধান ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে। কেননা মাতৃত্ব হোক বা শিক্ষকতা বা কর্পোরেট সেক্টরের কাজ, সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে তো প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে দিতে হবে এ ট্রেইনিং বা প্রশিক্ষণ। ডা. নাজনীনের মতে একটু প্রশিক্ষণ পেলেই যে কেউই শুধু সততা ও নিষ্ঠার সাহায্যেই যে কোনো কাজে উন্নতি করতে পারে। আর পরিচ্ছন্ন একজন মানুষ যেমন হাত ধুতে চাইলে পানা পুকুরের পানিও সরিয়ে পরিষ্কার করে নেন, তেমনিভাবে ন্যায়পরায়ণ, জাগ্রত বিবেকবোধ সম্পন্ন শুদ্ধাচারী মানুষেরা একযোগে কাজ করতে শুরু করলে সব অনিয়ম ও অসততাকে এক সময় নির্র্মূল করে দিতে পারবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। সে বিশ্বাস থেকেই গবেষণাধর্মী উন্নয়ন কাজ আর শুদ্ধাচার-মূল্যবোধের শূন্যস্থান পূর্ণ করার এ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এলেন তিনি। ভালো ইভেন্ট গ্রেডের ভ্যালু এটেনশন অলটারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট লার্নিং অপশনের মাধ্যমে।
