Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

জীবনের জয় সহমর্মিতায়: জেসিন্ডা আরডার্ন

Icon

সাব্বিন হাসান

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জীবনের জয় সহমর্মিতায়: জেসিন্ডা আরডার্ন

জনমত জরিপে এগিয়েই ছিলেন নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন-সমর্থিত লেবার পার্টি। শুধু আশঙ্কা ছিল, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন কিনা- তা নিয়ে। কিন্তু ভোট শেষে দেখা গেল, শুধু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নয়; ভূমিধস জয় পেয়েছে লেবার পার্টি।

পর পর দ্বিতীয়বার জয়ের পর জেসিন্ডা তার সমর্থক ও নিউজিল্যান্ডবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা আর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, নিউজিল্যান্ডবাসী গত ৫০ বছরের মধ্যে লেবার পার্টির প্রতি সবচেয়ে বেশি সমর্থন ও আস্থা রেখেছে। আমরা ভোটের বিবেচনায় কাউকে গণ্য করব না। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রতিটি নিউজিল্যান্ডবাসীর সরকার হব। জনগণের জন্য সব ধরনের কাজ করব।

বিশ্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, করোনার সময়ে লেবার পার্টির নেয়া ব্যবস্থা ও ভূমিকা নিউল্যান্ডবাসীকে মুগ্ধ করেছে। তাই আবারও দেশটির অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে লেবার পার্টির প্রতিশ্রুতিতে জনগণ বিশ্বাস রেখেছে। বিশ্বের রাজনৈতিক আলোচনায় এখন ‘জেসিন্ডা’ নামটি সরবে উচ্চারিত। পুরো নাম জেসিন্ডা আরডার্ন। জন্ম ১৯৮০ সালের ২৬ জুলাই। মাত্র ৩৭ বছর বয়সেই এসেছেন বিশ্ব রাজনৈতিক আলোচনায়। ইতিহাস গড়লেন ১৬১ বছরের রেকর্ড ভেঙে। কারণ জেসিন্ডা হয়েছেন দেশটির তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।

ব্যক্তিজীবনে মর্মন ধর্মানুসারী। করেছেন শখের ডিজের চাকরি। কখনই দেখেননি প্রধানমন্ত্রী হবেন- এমন স্বপ্ন। বাবা রোজ আরডার্ন পুলিশ অফিসার। মা লরেন আরডার্ন স্কুল ক্যান্টিনে কাজ করতেন। ২০০১ সালে ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইকাতো’ থেকে পলিটিক্স এবং পাবলিক রিলেশন বিষয়ে ব্যাচেলর অব কমিউনিকেশন স্টাডিজ (বিসিএস) ডিগ্রি অর্জন করেন। কাজ করেছেন গবেষক হিসেবে। নীতি-নির্ধারণী উপদেষ্টার কাজও করেছেন। ইসরায়েল, জর্ডান, আলজেরিয়া এবং চীনে ঘুরে বেড়িয়েছেন নীতি-নির্ধারণী কাজের প্রয়োজনে। খালার আগ্রহেই নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির অনুসারী হয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী হয়ে লেবার পার্টির সফল নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেসিন্ডা।

নিউজিল্যান্ড ১৮৫৬ সাল থেকে এখন অবধি জেসিন্ডার মতো এত কম বয়সের কোনো প্রধানমন্ত্রী পায়নি। ইতোমধ্যে নানা ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলে নিজেকে সুদক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। সামনে আরও নতুন বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তার জন্য। আর সেজন্য নিজেকে প্রস্তুতও করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেসিন্ডার নাম নিয়ে হইচই পড়ে গেছে। কারণ তার বিয়ে। দ্বিতীয়বার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জয়ী হয়ে জেসিন্ডা বলেন, এটি উত্তেজনাপূর্ণ দিন। সবার জন্য সমঅধিকার আর মানোন্নত একটি নিউজিল্যান্ড গড়তে আমরা সবাই কাজ করব। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার প্রসঙ্গে বলেন, দ্বিতীয়বার নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় বাড়তি কিছু উচ্চাকাক্সক্ষা আছে। সমান মজুরি, ঘরে এবং ঘরের বাইরে নারীর কাজকে সম্মান করা- এসব বিষয়ে আমি দৃঢ়ভাবে কাজ করব। সরকারের তরফ থেকে একটি করোনা কমিশন গঠন করেছেন, যা আগামীর কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে আর জনগণের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

রাজনীতির জটিল সমীকরণে নিউজিল্যান্ডের সরকারপ্রধান আবারও জেসিন্ডা। একে নারী, দুয়ে ইতিহাস আর তিনে কম বয়স- সব মিলিয়ে জেসিন্ডা নতুন কিছু করবেই। তারুণ্যের ভাবনায় দেশ চললে, তা কেমন হবে তা স্পষ্টভাবেই দেখিয়েছেন। আরও নতুন কিছু দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব রাজনৈতিক মহল।

নারীদের জন্য আলাদা ভাবনা আবার সমঅধিকার এ দুয়ের সমন্বয়ে কাজ করবেন। তারুণ্যের ভাবনায় নতুন কিছু করার অদম্য আগ্রহ জেসিন্ডাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সে কারণে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মতো করে ভেবে কাজ করেন না। গবেষণা ও নীতি-নির্ধারণ হিসেবে তিনি আগেই পারদর্শী। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হয়ে রাজনৈতিক সমীকরণেও দিয়েছেন দূরদর্শিতার পরিচয়।

দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ছাড়া কঠিন কিছু অর্জন করা অসম্ভব। যতই নাজুক হোক না কেন পরিস্থিতি, শুধু আত্মবিশ্বাসী হয়েই তা কাটিয়ে উঠে সফল হওয়া সম্ভব। উৎসাহ-উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করে সঠিক পথে চলতে হলে দূরদর্শী হতে হবে। জীবনকে কঠিন করে নয়, সহজ করে আত্মত্যাগের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চললে কোনো কিছুই আর অজেয় থাকবে না। এমন করেই নিজের জয়ী হওয়ার কথা বলেছেন জেসিন্ডা আরডার্ন।

জাসিন্ডা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম