বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংসদে নারী
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের ৮টি অধিবেশনে (১৯৭৩-এর ৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই) সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। যা দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ গঠনে ভূমিকা রেখেছে।
রীতা ভৌমিক
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের নারী সদস্য বদরুন্নেছা আহমেদ ও নাজমা শামীম লাইজুকে পরামর্শ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ে এবং নারী অধিকারের ক্ষেত্রে কার্যকর ও গতিশীল ভূমিকা রেখেছেন।
১৯৭৩-এর ৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য নারীর ক্ষমতায়নে বা রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
১৯৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ‘মেম্বার অব দি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে পূর্ব পাকিস্তানে সংরক্ষিত নারী আসনে ৭ নারী সদস্য মনোনীত হন। প্রাদেশিক পরিষদে ১০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। নারী সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগ দলের মনোনয়নে মনোনীত হন।
জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জনগণের নিরঙ্কুশ ভোটে আওয়ামী লীগের জয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আঁতকে উঠেছিল। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করেন।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় অধিবেশন স্থগিত করায় সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদেরও অধিবেশনে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে বাংলাদেশের সংবিধানের রূপরেখা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদ ১৯৭৩-এর ৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত। ১৯৭৩ সালের মার্চে প্রকাশিত গেজেটে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সংরক্ষিত ১৫টি আসনের জন্য নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
নির্বাচিত এলাকার সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীতরা ছিলেন- বেগম তসলিমা আবেদ মহিলা আসন-১, রংপুর জেলা, নাজমা শামীম লাইজু মহিলা আসন-২, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা, জাহানারা রব মহিলা আসন-৩, বগুড়া ও পাবনা জেলা, বদরুন্নেছা আহমেদ মহিলা আসন-৪, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা, ফরিদা রহমান মহিলা আসন-৫, খুলনা জেলা এবং বাকেরগঞ্জ জেলার পিরোজপুর সাব ডিভিশন, আজরা আলী মহিলা আসন-৬, বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালী জেলা, রাফিয়া আখতার মহিলা আসন-৭, টাঙ্গাইল জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর সাব-ডিভিশন, খুরশীদা ময়েজউদ্দিন মহিলা আসন-৮, ময়মনসিংহ জেলা, সাজেদা চৌধুরী মহিলা আসন-৯, নারায়ণগঞ্জ সাব ডিভিশন এবং ঢাকা জেলার ঢাকা সদর সাব ডিভিশন, বেগম নূরজাহান মুরশিদ মহিলা আসন-১০, ঢাকা জেলা এবং ঢাকা সদর সাব ডিভিশন, শ্রীমতি কণিকা বিশ্বাস মহিলা আসন-১১, ফরিদপুর জেলা, আবেদা চৌধুরী মহিলা আসন-১২, সিলেট জেলা, মমতাজ বেগম মহিলা আসন-১৩, কুমিল্লা জেলা, আর্জুমান্দ বানু মহিলা আসন-১৪, কুমিল্লা জেলার চাঁদপুর সাব ডিভিশন এবং নোয়াখালী জেলা, শ্রীমতি সুদীপ্তা দেওয়ান মহিলা আসন-১৫, চট্টগ্রাম জেলা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা।
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদে ৮টি অধিবেশনের কার্য দিবস ছিল ১৩৪ দিন। এই কার্য দিবসগুলোতে মহিলা আসনের সংসদ সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন।
বেগম তসলিমা আবেদ
মহিলা আসন-১
১৯৭৩-৭৪-এর বাজেট আলোচনায় জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২৯ জুন ত্রয়োদশ বৈঠকে বেগম তসলিমা আবেদ অংশ নেন। তিনি বাজেট আলোচনায় বলেছিলেন, ডেপুটি স্পিকার সাহেব, অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে এড়িয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে সুতি বস্ত্রের ক্ষেত্রে। ২০ কাউন্টের সুতা দিয়ে কোনো শাড়ি বা লুঙ্গি তৈরি হয় না। যতদূর জানি ২০ কাউন্টের সুতা দিয়ে গামছা ছাড়া আর কিছুই হয় না। গামছা পরে লজ্জা নিবারণ, বিশেষ করে মা-বোনদের মোটেই সম্ভব হবে না। এখনই মানুষ বাজারে কাপড় কিনতে পারে না। তার ওপর যদি অতিরিক্ত শুল্ক বা কর আরোপ করা হয় তাহলে জানি না আমাদের দেশবাসীর কি অবস্থা হবে। মিহি কাপড়ের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবার আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অনেক সমস্যার সম্মুখীন আমরা হব। তাই আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করব ২০ থেকে ৩৫ কাউন্টের কাপড় নিকৃষ্টমানের কাপড় বলে গণ্য করা হোক; ৩৫ থেকে ৪৮ কাউন্টের কাপড় চলনশীল হিসাবে গণ্য করা হোক; ৪৮ থেকে ৬০ পর্যন্ত মানসম্মত হিসাবে এবং ৬০-এর ঊর্ধ্বে উন্নতমানের মানসম্মত হিসাবে গ্রহণ করা হোক।
জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২৩ জুন সপ্তদশ বৈঠকে সংসদ বিতর্কের তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে পরিত্যক্ত বাড়ি বণ্টন সম্পর্কিত প্রশ্নে তিনি তার বক্তব্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ক. গণপূর্ত বিভাগের মন্ত্রী মহোদয় অনুগ্রহ করে বলবেন কি, স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক-হানাদার, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস কর্তৃক নিহতদের পরিবারকে পরিত্যক্ত গৃহ কোনো নীতির ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে কিনা? যদি কোনো নীতির ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সে নীতি কী? খ. এ পর্যন্ত ঢাকায় ও অন্যান্য জেলায় কত সংখ্যক নিহত ও আহতদের পরিবারকে ওই রূপ গৃহ দেওয়া হয়েছে। গ. ইহা সত্য কিনা যে, নিহত ও আহতদের অনেক পরিবার এখনো কোনো বাড়ি পায়নি। ঘ. যদি (গ) প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ-সূচক হয়, তবে তাহারা কবে নাগাদ গৃহ পাবে। ঙ. পরিত্যক্ত গৃহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে কি শর্তে ও কতদিনের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে দেওয়া হয়েছে?
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার নির্যাতিত নারীদের সমাজে পুনর্বাসনের জন্য ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। শব্দগতভাবে আলাদা হওয়ার কারণে সামাজিকভাবে বীরাঙ্গনারা সমাজে অস্পৃশ্য অবহেলিত ছিলেন। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ১৯৭৩-এর ৭ জুলাই ২৯তম বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে তিনি বলেন, বীরাঙ্গনা শব্দটি সম্প্রতি ব্যবহৃত না করার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বীরাঙ্গনার পরিবর্তে দুস্থ মহিলা এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা ব্যবহৃত হবে। বীরাঙ্গনা ব্যবহৃত হবে না।
নাজমা শামীম লাইজু
মহিলা আসন-২
একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার মা-বোনদের তার পরিবার, সমাজ মেনে নেয়নি। জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ১৯ জুন ত্রয়োদশ বৈঠকে বেগম নাজমা শামীম লাইজু তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে সাহায্য ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মোহাম্মদ সোহরাব হোসেনের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ও দুস্থ মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন জানতে চেয়েছেন।
বদরুন্নেছা আহমেদ
মহিলা আসন-৪
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদ ১৯৭৩-এর ১৩ এপ্রিল প্রথম অধিবেশনে ৪র্থ বৈঠকে রাষ্ট্রপতির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনে বদরুন্নেছা আহমেদ রাষ্ট্রপতির ভাষণের উদ্ধৃতি থেকে বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন, এ দেশের লোক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সংগ্রামের জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল এবং এখন আবার তারই ডাকে প্রকৃত সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এ দেশকে সুখী, সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে হবে, তিনি সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।’
ফরিদা রহমান
মহিলা আসন-৫
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি-বিধির ২২৫ বিধি অনুসারে ২২৬ বিধিতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের ‘বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তালিকায় ৯ নম্বর সদস্য ছিলেন ফরিদা রহমান।
জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ১৪ জুন নবম বৈঠকে রেল বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন। ফরিদা রহমান স্পিকার এবং সংসদ সদস্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করে কয়েকটি দিকনির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, বিনা টিকিটে রেলে ভ্রমণ বন্ধ করা এবং রেলওয়ে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার জনগণের যে সহযোগিতা চেয়েছে, সেটির জন্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। শুধু আবেদন-নিবেদন এ ব্যাপারে কতখানি কার্যকর হবে, সেটি সন্দেহের ব্যাপার। বিনা টিকিটে রেলে ভ্রমণ করার প্রবণতা কোন শ্রেণির লোকের মধ্যে বেশি, তার একটি সঠিক সমীক্ষা হওয়া দরকার এবং এই সমীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো প্রতিরোধ-ব্যবস্থা রেল কর্তৃপক্ষ যদি গ্রহণ করেন, তাহলে নিশ্চয়ই জনগণ তার সঙ্গে সহযোগিতা করবে।
জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২১ জুন পঞ্চদশ বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে মিসেস ফরিদা রহমান মন্ত্রী আবদুল মান্নানের কাছে জানতে চান, এ পর্যন্ত কতজন শিশুকে বিদেশিদের কাছে অ্যাডপশন করার জন্য দেওয়া হয়েছে? এখানে ওইসব বিদেশিদের জন্য কোন সংস্থা এজেন্ট হিসাবে বাংলাদেশে কাজ করছে?
জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২২ জুন ষোড়শ বৈঠকে সংসদ বিতর্কের তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় অনুগ্রহ করে বলবেন কি, কতগুলো রাষ্ট্র বাংলাদেশে দূতাবাস স্থাপন করিয়াছে? তিনি বিদেশি বৃত্তি প্রসঙ্গে আরও বলেন, শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী মহোদয় অনুগ্রহ করে বলবেন কি- ক. বিদেশে অধ্যয়ন করার জন্য এ পর্যন্ত কতগুলো বিদেশি বৃত্তি পাওয়া গিয়েছে। খ. উক্ত বৃত্তিগুলোর মধ্যে কতগুলো সমাজতান্ত্রিক দেশ থেকে পাওয়া গিয়েছে। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত এই বৃত্তিগুলো হতে ছাত্রীদের জন্য কতগুলো দেওয়া হয়েছে। ঘ. বিদেশে অধ্যয়ন করার জন্য সরকার থেকে কোনো বৃত্তি দেওয়া হয় কিনা? ঙ. যদি (ঘ) প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ-সূচক হয়, তবে এ পর্যন্ত কতটি বৃত্তি দেওয়া হয়েছে এবং এতে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। চ. (ক) ও (খ) প্রশ্নের জেলাওয়ারী হিসাব কী?
জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২৬ সেপ্টেম্বর দশম বৈঠকে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস সমিতি বিল ১৯৭৩ উত্থাপন প্রসঙ্গে তিনি স্পিকারকে বলেন, গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের হেড অফিস লন্ডনে অবস্থিত। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রাদেশিক প্রতিষ্ঠানরূপে কাজ করত। পৃথিবীর সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে গার্ল গাইডসের বিশেষ প্রসার নেই কিন্তু এ দেশের স্কুল-কলেজের মেয়েরা তাদের পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও সহপাঠ্য হিসাবে গার্ল গাইডকে একটা প্রশস্ত ক্ষেত্র হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান মেয়েদের একটা সুষ্ঠু নীতি এবং সংঘবদ্ধ জীবন সম্বন্ধে জ্ঞানদান করে। গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন-এর নীতি, উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কাছে কল্যাণকর মনে হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার এটিকে শিক্ষার একটি অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করেছে।
তিনি আরও বলেন, গার্ল গাইড সম্বন্ধে আমাদের দেশে একটি বিরূপ মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। তার কারণ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন-এর উদ্দেশ্য এবং আদর্শ সম্বন্ধে তারা বিশেষভাবে কিংবা পুরোপুরিভাবে ওয়াকিবহাল নয়। গার্ল গাইডস-এর লক্ষ্য হলো নিজের সহযোগিতা, অন্যের কাছে সাহায্য ভিক্ষা নয় এবং তুমি নিজের সহযোগিতা নিজেই অর্জন কর। অর্থাৎ গার্ল গাইডস মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষাদান করে। আজকে বাংলাদেশের মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার বিশেষ প্রয়োজন আছে সে জন্য শিক্ষার সর্বস্তরে গার্ল গাইড; অ্যাসোসিয়েশন-এর ব্যাপক প্রসার লাভ করা দরকার। এটি কোনো বিলাসিতা নয়। আজকে এ বিল সংসদে উপস্থিত করাটা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং যুক্তিযুক্ত হয়েছে।
আজরা আলী
মহিলা আসন-৬
একটি স্বাধীন দেশকে গড়ে তোলা সহজ কথা নয়, বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদ ১৯৭৩-এর ১৭ এপ্রিল প্রথম অধিবেশনে পঞ্চম বৈঠকে রাষ্ট্রপতির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনে অধ্যাপিকা আজরা আলী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে সরকার, সে সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথম পদক্ষেপ হলো ন্যায্যমূল্যের দোকান। প্রত্যেক এলাকায় ন্যায্যমূল্যের দোকান দিয়েছে। সেখানে ন্যায্যমূল্যে জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। এরপর কালোবাজারি, মুনাফাখোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থাও সরকার করেছে। এটি অত্যন্ত সুখের কথা এবং আমার মনে হয়, জনগণ তাতে যথেষ্ট সাহায্য করছে। তার জন্যই বর্তমান সরকার অনেক সফলতা অর্জন করেছে। আমাদের সরকার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চারদিকে ঘেরাও করে মজুতদারদের গুদাম থেকে খাদ্যদ্রব্য উদ্ধার করেছে এবং এখনো করছে, যাতে মানুষ ন্যায্যমূল্যে জিনিসপত্র পেতে পারেন।’
পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা শব্দটি ব্যবহারে আপত্তিস্বরূপ বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ১৯৭৩-এর ৭ জুলাই ২৯তম বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে তিনি বলেন, বীরাঙ্গনা সম্বন্ধে আমার সামান্য বক্তব্য আছে। এই বীরাঙ্গনা শব্দটি ব্যবহৃত হবে না বলে যে একটি নির্দেশ ছিল সেটি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আছে কিনা, তিনি এটা জানেন কিনা?
রাফিয়া আখতার
মহিলা আসন-৭
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদ ১৯৭৩-এর ১৮ এপ্রিল প্রথম অধিবেশনে ষষ্ঠ বৈঠকে রাষ্ট্রপতির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনে রাফিয়া আখতার ডলি হুইপ বলেন, ‘অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি থেকে আইনশৃঙ্খলা, প্রতিরক্ষা বাহিনী, শরণার্থী আর নির্যাতিত মানুষের পুনর্বাসন, শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, কৃষি প্রকল্প, পরিবার-পরিকল্পনা, জোট নিরপেক্ষ নীতি- সমস্ত নীতির রূপরেখাই দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদ ১৯৭৩-এর ৭ জুন দ্বিতীয় অধিবেশনে পঞ্চম বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে মিসেস রাফিয়া আখতার ডলি স্পিকারের মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেন, আমার বৈধতার প্রশ্ন হলো, বিরোধীমনা সদস্য সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে সংবিধানের ২৪২ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু আমার কথা হলো, আমাদের সংবিধানে ২৪২ অনুচ্ছেদ বলে কোনো অনুচ্ছেদই নেই। এতে সর্বমোট অনুচ্ছেদের সংখ্যাই হচ্ছে ১৫৩।
সাজেদা চৌধুরী
মহিলা আসন-৯
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি-বিধির ২০৮ বিধি অনুযায়ী ২০৯-বিধিতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের ‘কার্য-উপদেষ্টা কমিটি’র তালিকায় ৮ নম্বর সদস্য ছিলেন সাজেদা চৌধুরী।
বাংলাদেশে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে নারীরা চাকরি পেয়েছেন কিনা জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২১ জুন পঞ্চদশ বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে মিসেস সাজেদা চৌধুরী স্পিকারের মাধ্যমে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জানতে চান। তিনি বলেন, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে কতজন মহিলা নিয়োগ করা হয়েছে। এর সংখ্যা তুলে ধরতে অনুরোধ করেন।
জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২৬ সেপ্টেম্বর দশম বৈঠকে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস সমিতি বিল-১৯৭৩ উত্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্পিকার সাহেব, আজকে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন বিল পাশ হতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমি আপনার মাধ্যমে পরিষদের কাছে দু-একটি কথা বলতে চাই। স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বাংলাদেশ সরকার তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনকে একটি কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশন রূপে সংগঠিত করার দায়িত্ব আমাদের দেয়। আমরা এটির যে মূলনীতি সেই মূলনীতিকে ঠিক রেখে আমাদের রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে এর সম্পূর্ণ পরিবর্তন সাধন করেছি। আমরা বাঙালি জাতির সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পটভূমিতে বাঙালি জাতির ইতিহাসের পটভূমিতে এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নারী সমাজ যাতে নিজেদের আত্মনির্ভরশীলভাবে গড়ে তুলতে পারে, আদর্শ গৃহিণী বা আদর্শ মা হতে পারে, সে জন্য সুসংঘবদ্ধ শৃঙ্খলাপরায়ণ করে গড়ে তোলার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। গার্ল গাইডস এ চেষ্টাই করে যাবে যাতে ভবিষ্যতে সোনার বাংলা গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু যে সোনার ছেলে চেয়েছেন সেই সোনার ছেলে তৈরি হতে পারে এবং সেই আদর্শ তারা মেনে নেবে বলে আমি আশা করি।
বেগম নূরজাহান মুরশিদ
মহিলা আসন-১০
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি-বিধির ১২ বিধির ১ উপবিধি-অনুসারে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সভাপতিমণ্ডলীর তালিকায় ৪ নম্বরে ছিলেন বেগম নূরজাহান মুরশিদ।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের ১৯৭৪-এর ৩ জুন প্রথম বৈঠকে জরুরি চাকরি আইনগুলো সংশোধনী বিল, ১৯৭৪ প্রসঙ্গে সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বেগম নূরজাহান মুরশিদ স্পিকারকে বলেন, দ্যা এসেনশিয়াল সার্ভিসেস মেইনটেইনস অ্যাক্ট, ১৯৫২, দ্যা এসেনশিয়াল সার্ভিসেস সেকেন্ড অর্ডিনেন্স, ১৯৫৮ এবং দ্যা সার্ভিসেস টেম্পরারি পাওয়ারস অর্ডিনেন্স ১৯৬৩-এর আরও সংশোধনকল্পে একটি বিল দ্যা এসেনশিয়াল সার্ভিসেস ল সংশোধনী বিল ১৯৭৪ উত্থাপনের জন্য আমি আপনার মাধ্যমে সংসদের অনুমতি প্রার্থনা করছি।
হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়ে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ায় বেগম নূরজাহান মুরশিদ স্পিকারকে বলেন, আমি সংসদের অনুমতিক্রমে, দ্যা এসেনশিয়াল সার্ভিসেস মেইনটেইনস অ্যাক্ট, ১৯৫২, দ্যা এসেনশিয়াল সার্ভিসেস সেকেন্ড অর্ডিনেন্স, ১৯৫৮ এবং দ্যা সার্ভিসেস টেম্পরারি পাওয়ারস অর্ডিনেন্স ১৯৬৩-এর আরও সংশোধনকল্পে একটি বিল দ্যা এসেনশিয়াল সার্ভিসেস ল সংশোধনী বিল ১৯৭৪ উত্থাপন করছি।
তিনি স্পিকারের কাছে শিশুদের তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ ও চিকিৎসা এবং যুব অপরাধীদের বিচার ও শাস্তিবিধান সম্পর্কিত আইন একত্রীকরণ ও সংশোধনকল্পে শিশু বিল ১৯৭৪ উত্থাপনের জন্য অনুমতি চাইলে অনুমতি পান। সংসদ সদস্যদের ভোটে হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়ে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। স্পিকারের কাছ থেকে তিনি বিলটি উত্থাপনের অনুমতি পান।
বেগম নূরজাহান মুরশিদ বলেন, স্পিকার, সংসদের অনুমতিক্রমে, শিশুদের তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ ও চিকিৎসা এবং যুব-অপরাধীদের বিচার ও শাস্তিবিধান সম্পর্কিত আইন একত্রীকরণ ও সংশোধনকল্পে একটি শিশু বিল ১৯৭৪ উত্থাপন করলাম।
শ্রীমতি কণিকা বিশ্বাস
মহিলা আসন-১১
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ১৯৭৩-এর ৬ জুলাই ২৮তম বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে শ্রীমতি কণিকা বিশ্বাস স্পিকারের মাধ্যমে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জানতে চান, মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোরকম বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা?
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ১৯৭৩-এর ৭ জুলাই ২৯তম বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে শ্রীমতি কণিকা বিশ্বাস বলেন, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলবেন কি, যে এটা কি সত্য যে, ডাক বিভাগের মহাপরিচালকের অধীনস্থ অফিসগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুজিবনগরের কর্মচারীদেরকে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না?
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের ১৯৭৪-এর ৬ জুন চর্তুথ বৈঠকে স্পিকারের কাছে শ্রীমতি কণিকা বিশ্বাস জানতে চান, এ পর্যন্ত সংসদ-ভবন নির্মাণকাজে যে টাকা খরচ হয়েছে, তার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারদের কত টাকা দেওয়া হয়েছে? ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে কোন দেশের কতজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন?
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের ১৯৭৪-এর ২৫ জুন পঞ্চদশ বৈঠকে মন্ত্রী আবদুল মমিন তালুকদারের কাছে তিনি জানতে চান, বর্তমান বছরে যে চা আমরা উৎপন্ন করেছি, এর থেকে কত চা বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে এবং কত টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে?
মমতাজ বেগম
মহিলা আসন-১৩
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি-বিধির ২২০ বিধি-অনুসারে উক্ত বিধিতে উল্লেখিত কর্তব্য পালনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের ‘সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’তে ১১ নম্বর সদস্য ছিলেন মমতাজ বেগম।
জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২০ জুন চর্তুদশ বৈঠকে অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম সংসদ বিতর্কে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে খাদ্য ও বেসামরিক সরবরাহমন্ত্রী শ্রী ফণী মজুমদারের কাছে জানতে চান, চিনি কি খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে পড়ে না? যদি পড়ে, তাহলে সেটি এখানে লেখা নাই কেন?
জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২১ জুন পঞ্চদশ বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম বলেন, মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন যে, চট্টগ্রামে সংস্থার সংখ্যা বেশি আছে বলে বেশি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু কুমিল্লায় সবচেয়ে বেশি সমাজকল্যাণ সংস্থা রয়েছে। সেখানে সংখ্যা হলো ৩৫৪ এবং এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার-এর ব্যাপারে কুমিল্লা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার লাভ করেছে। সেখানে কুমিল্লায় মাত্র ২,৩৫,৭৫০ টাকা আর চট্টগ্রামে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে এর কারণ কী? আমি এটা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জানতে চাই।
জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২৫ সেপ্টেম্বর নবম বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পুলিশ ডাইরেক্টরেটের যে দুইজনকে পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে তাদের একজন এসআই অব পুলিশ এবং একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা; এরা দুইজন কোনো কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মন্ত্রী মহোদয় জানাবেন কি?
আর্জুমান্দ বানু
মহিলা আসন-১৪
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার কয়েকটি জেলায় মহিলা পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২১ জুন পঞ্চদশ বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে মিসেস আর্জুমান্দ বানু রুবী এ প্রসঙ্গে বলেন, ৫০০ আসনবিশিষ্ট দুস্থ মহিলা পুনর্বাসন কেন্দ্র নোয়াখালীতে কেন একটিও খোলা হয়নি?
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ৩০ জুন ত্রয়োবিংশতিতম বৈঠকে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে মিসেস আর্জুমান্দ বানু রুবী নোয়াখালীতে মেডিকেল হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ক. আগামী আর্থিক বছরে নোয়াখালী সদর হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহের জন্য নোয়াখালীতে পৃথক মেডিকেল স্টোর স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে কিনা।
খ. নোয়াখালীতে নার্সিং স্কুল স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে কিনা; থাকলে তা কবে স্থাপিত হবে?
আরেকটি প্রশ্নে জানতে চান, ক. নোয়াখালী সদর হাসপাতালে মোট কতজন মহিলা ডাক্তার নিযুক্ত আছে। খ. উক্ত মহিলা ডাক্তারগণ প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত কিনা, যদি অপর্যাপ্ত হয় তবে প্রয়োজন অনুযায়ী মহিলা ডাক্তার নিযুক্ত করার জন্য সরকারের ইচ্ছা আছে কিনা; থাকলে তা কবে নিয়োগ করা হবে।
শ্রীমতি সুদীপ্তা দেওয়ান
মহিলা আসন-১৫
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় নারী-পুরুষ-শিশু শিক্ষা থেকে পিছিয়ে রয়েছেন পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠার কারণে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে ছেলেমেয়েরা স্কুলমুখী হতে পারছিল না। বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের ১৯৭৩-এর ২২ জুন ষোড়শ বৈঠকে সংসদ বিতর্কের তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ও উত্তরে শ্রীমতি সুদীপ্তা দেওয়ান পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, ক. পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার তিনটি মহকুমার প্রত্যেকটিতে কতটি মহাবিদ্যালয় আছে, খ. পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো মহকুমায় যদি মহাবিদ্যালয় না থাকে, তবে সেই মহকুমায় মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকার কোনো উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত আছেন কিনা, গ. রাঙ্গামাটি সরকারি মহাবিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের বিজ্ঞান বিভাগ চালু করার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা? ঘ. যদি (গ) প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ-সূচক হয়, তবে এ সিদ্ধান্ত কবে নাগাদ কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা আছে; এবং ঙ. পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় কোনো সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় আছে কিনা; যদি না থাকে, তবে উক্ত জেলায় কোনো বালিকা উচ্চবিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা?
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের ১৯৭৪-এর ১৯ জুলাই পঞ্চত্রিংশততম বৈঠকে ডেপুটি স্পিকার মোহাম্মদ বয়তুল্লাহ্র পরিচালনায় নবনির্বাচিত সদস্য মিস্সে রাজিয়া বানু মহিলা আসন-৪ শপথ গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধির ২৩৯ বিধি-অনুসারে ২৩৮ বিধিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি গঠনে ৫ নম্বর সদস্য ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদের আটটি অধিবেশনের সংসদ বিতর্কে জাহানারা রব, মহিলা আসন-৩, খুরশীদা ময়েজউদ্দিন, মহিলা আসন -৮, আবেদা চৌধুরী, মহিলা আসন-১২ এবং মিস্সে রাজিয়া বানুর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
